|
|
|
|
বিকল্প বিচারব্যবস্থায় জোর বিচারপতির
নিজস্ব সংবাদদাদাতা • মেদিনীপুর |
আদালতে বহু মামলা জমছে। বিচারে দেরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থার উপরই জোর দেওয়ার পরামর্শ দিলেন ‘স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস্ অথরিটি’র এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান তথা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আজ কীসের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন দেশে, যদি আমরা তাঁদের (বিচারপ্রার্থীর) দুঃখ বুঝতে না পারি। ওঁদের বিকল্প ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।” আইনজীবীদের উদ্দেশে তাঁর আবেদন, “আপনারা যদি ৩ বছরের বিচার ওঁদের ৩ দিনে এনে দেন, তাহলে ওঁরা আরও ১০ জনকে আপনার কাছে নিয়ে আসবেন। আপনারা মানবিক। আরও একটু সচেতন হন। মানুষ যেন বলে, আদালতে গেলে ঘটিবাটি বিক্রি করতে হয় না, আদালতে গেলে বিচার মেলে।”
বুধবার সকালে মেদিনীপুর আদালত চত্বরে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়। সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুরের জেলা ও দায়রা বিচারক সমর রায়, মেদিনীপুরের সিজেএম সুজিতকুমার ঝা প্রমুখ। |
|
মেদিনীপুর আদালতের নতুন ভবনের উদ্বোধনে দুই বিচারপতি। —নিজস্ব চিত্র। |
দু’টি কর্মসূচিতে যোগ দিতে বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরে আসেন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার। প্রথমে মেদিনীপুর আদালত চত্বরে ‘অল্টারনেটিভ ডিসপিউট রেজলিউশন সেন্টার’ (এডিআরসি) নামে নতুন ভবনের উদ্বোধন হয়। পরে সংস্কার হওয়া গড়বেতা চৌকি কোর্ট উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার। এ দিন এখানে আইনি পরিষেবা শিবিরও হয়। মেদিনীপুরে এডিআরসি ভবনের উদ্বোধন করেন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, রাজ্যের মধ্যে এমন পৃথক ভবন মেদিনীপুরেই প্রথম হল। এ বার থেকে এখানেই ‘লোক আদালত’, ‘প্লি বার্গেনিং’ কোর্ট বসবে। কম সময়ে বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তি হবে। যেখানে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তকে পাশাপাশি বসিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। যে সব মামলার সাজা ৭ বছরের কম, সেই সব মামলাগুলোরই এ ভাবে নিষ্পত্তি হতে পারে। মূলত, এ ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে জরিমানা দিয়েই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি মেলে অভিযুক্তের। বিচারকের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত তাঁর দোষ স্বীকার করেন। অভিযোগকারীও ক্ষতিপূরণ হিসেবে জরিমানা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সব মিটিয়ে নিতে সম্মত হন।
মেদিনীপুরের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিচারের ভার বোধহয় আর বিচার ব্যবস্থা বইতে পারছে না। যা পরিস্থিতি, তাতে প্রতি ২০ হাজার জন মানুষের জন্য ১ জন বিচারক দরকার। দেশে ১৩৩ কোটি মানুষ। এরমধ্যে শতকরা ৫ ভাগ আদালতের দরজায় আসেন। তাহলে কী ধরে নিতে হবে বাকি ৯৫ ভাগের কোনও সমস্যাই নেই। নিশ্চয়ই আছে। অন্তত ১০ ভাগের আছে। যাঁদের সমস্যাগুলো নিয়ে আদালতের দরজায় আসা উচিত। কিন্তু, আসেন না। কেন? মূলত, দু’টি কারণের জন্য এই পরিস্থিতি। এক, আর্থিক সঙ্গতি নেই। দুই, আদালতের উপর আস্থা নেই। কারণ, এঁদের ধারণা, আদালতে গেলে মামলার বিলম্ব হবে।” তাঁর কথায়, “বাধ্য হয়ে তখন ওঁরা সমঝোতা করেন। কিন্তু, সবলের সঙ্গে কী দুর্বলের সমঝোতা হয়? এটা তো সমঝোতা নয়, নতিস্বীকার। এ ভাবে সমস্যার সমাধান হয় না, সমাধি হয়।”
পাশাপাশি, এঁদের অনেকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন বলেও মত বিচারপতির। এদিন মেদিনীপুর আদালতের আইনজীবীদের প্রশংসাও করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, “সঙ্গত এবং অসঙ্গত কারণে বিভিন্ন আদালতে আইনজীবীরা ধর্মঘটে সামিল হন। কিন্তু, এখানে ধর্মঘট হয় না। আপনাদের (আইনজীবীদের) ধন্যবাদ জানাব না, কৃতজ্ঞতা জানাব। কৃতজ্ঞতা জানাব আপনাদের সচেতনতার জন্য।” তাঁর কথায়, “সমস্যা আছে। সমস্যা থাকবে। কিন্তু, যে বিচারপ্রার্থী সুদূর গড়বেতা থেকে বাসে করে মেদিনীপুরে আসেন তাঁর প্রিয়জনের জামিনের আবেদন নিয়ে তাঁকে ফিরে যেতে হয় না। এটা বড় পাওনা। আপনাদের সেলাম।”
এ দিনের অনুষ্ঠানে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার বলেন, “মামলার চাপে ব্যাকলগ বেড়ে যাচ্ছে। আইনি ঘোরপ্যাঁচের মধ্যে বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকছে। তার বাইরে বেরিয়ে যেন মামলার নিষ্পত্তি করা যায়। এই সেন্টারকে (এডিআরসি) পুরো কাজে লাগান।” মেদিনীপুরে এদিন ‘প্লি বার্গেনিং’ কোর্ট বসে।
|
পুরনো খবর: ভবন উদ্বোধনে আজ শহরে দুই বিচারপতি |
|
|
|
|
|