টাকা থেকেও নেই, সুবিধা থেকে বঞ্চিত প্রসূতিরা
টাকা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য চালু হওয়া জননী সুরক্ষা যোজনা প্রকল্প নিয়ে এমন অভিযোগই উঠেছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, জননী সুরক্ষা যোজনায় তাঁদের টাকার অভাব নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের রেকর্ডও সেই কথাই বলছে। অথচ ‘টাকার অভাবে’র অভিযোগেই ওই প্রকল্পে আটকে যেতে বসেছে প্রসূতিদের জরুরি শারীরিক পরীক্ষার কাজ।
এই প্রকল্পে প্রসূতিদের জন্য নিখরচায় নানা পরীক্ষানিরীক্ষার সুবিধা পাওয়ার কথা। ব্লক ও গ্রামীণ হাসপাতালে পরীক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে ওই পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। শুধু প্রসূতি নয়, ২৮ দিন বয়স পর্যন্ত শিশুদেরও এর আওতায় থাকার কথা। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে বিভিন্ন জেলা থেকে যে ছবিটা উঠে আসছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে শিশুদের একটা বড় অংশ তো এর আওতায় থাকছেই না, এমনকী প্রসূতিদের পরীক্ষার কাজও আটকে থাকছে। বেশির ভাগ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে তৈরি হওয়া পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি থেকে বিলের টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আসছে। কোথাও আবার আচমকাই বরাদ্দ কমে যাওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমনই, যে একাধিক সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, এ ভাবে চললে তাদের পক্ষে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
একাধিক সংস্থা মিলিত হয়ে একটি যৌথ মঞ্চও তৈরি করেছে। তাদের তরফে অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর থেকে বলা হচ্ছে, টাকা নেই। তাই মেটাতে দেরি হবে। এর উপরে আবার সম্প্রতি নোটিস এসেছে, প্রসূতি পিছু পরীক্ষা বাবদ ১৫০ টাকা করে দেওয়া হবে। কিন্তু এত দিন পর্যন্ত আমরা রক্ত পরীক্ষা বাবদ ১৫০ টাকা আর আলট্রাসোনোগ্রাফি বাবদ ২০০ টাকা পেতাম। রাতারাতি এ ভাবে টাকা কমিয়ে দিলে আমাদের কারও পক্ষেই আর পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।”
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “জননী সুরক্ষা যোজনায় টাকার কোনও অভাব নেই। খরচের যথাযথ হিসেব যদি কেউ পাঠায়, তা হলে টাকা আটকায় না। আর ১৫০ টাকার বেশি খরচ হলে তা দেওয়া হবে না, এ কথা এক বারও বলা হয়নি।” সংস্থাগুলি অবশ্য এর উত্তরে সরকারি মেমোর ফোটোকপি করে স্বাস্থ্য ভবনে নিজেদের অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, পিপিপি মডেলে তৈরি হওয়া ল্যাবরেটরিগুলির সঙ্গে সরকারি কর্তাদের কোনও সমন্বয়ই নেই। তাই স্বাস্থ্য অধিকর্তার বিষয়টি জানা নেই।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়াতে এবং প্রসবের সময়ে মা ও নবজাতকের মৃত্যু হার কমাতে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে জননী সুরক্ষা যোজনা চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রকল্পে প্রসবের সময়ে যাবতীয় খরচের পাশাপাশি প্রসবের আগে শারীরিক পরীক্ষার খরচও সরকারের বহন করার কথা। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, তা হচ্ছে না। বহু জেলাতেই প্রসূতিরা গর্ভাবস্থার একেবারে শেষ পর্যায়ে এই সব পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে শেষ পর্যায়ে গর্ভস্থ সন্তানের যদি কোনও সমস্যা ধরাও পড়ে, তখন আর কিছু করার থাকছে না।
বর্ধমানের একটি কেন্দ্রের কর্তা বলেন, “সংখ্যাধিক্যের কারণে বেশ কয়েকটি পিপিপি কেন্দ্রে প্রসূতিদের পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কেরল, তামিলনাড়ু বা মহারাষ্ট্র যে নিয়ম মানতে পেরেছে, পশ্চিমবঙ্গ তা পারছে না। এ রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রসূতিকেও নিজেদের টাকা খরচ করে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এমনকী তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে আসা বা প্রসবের পরে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স (নিশ্চয় যান) থাকার কথা, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটাও মিলছে না।” হুগলির একটি কেন্দ্রের কর্তা বলেন, “বেশি সংখ্যায় প্রসূতি পরিষেবা পেলে স্বাস্থ্য ভবন থেকে লিখিত ভাবে আমাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হচ্ছে। আমাদের কাছে তার প্রমাণ আছে। কেন্দ্র থেকে টাকা পাওয়া সত্ত্বেও সেই টাকা খরচের ব্যাপারে এমন টালবাহানা কার স্বার্থে?”
স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, টাকা নয়ছয় ঠেকাতেই এ বার তাঁদের কঠোর হতে হচ্ছে। দফতরের এক কর্তা বলেন, “বহু ক্ষেত্রে এই সব ল্যাবরেটরিগুলিও হিসেবের গোলমাল করছে। কারণ আমরা দেখেছি ল্যাবরেটরিতে যত মহিলা পরীক্ষার জন্য আসছেন, প্রসবের জন্য আসছেন তার চেয়ে কম মহিলা। পরীক্ষার জন্য যাঁরা সরকারি পরিকাঠামোর সাহায্য নিচ্ছেন, তাঁরা কেন প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে আগ্রহী হচ্ছেন না, এটাও বেশ আশ্চর্যের। আমরা এ ক্ষেত্রে আর্থিক নয়ছয়ের আভাস পাচ্ছি। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাশ টানা হচ্ছে।”
যে পক্ষের দাবিই সত্যি হোক না কেন, পরিণাম একটাই। প্রাপ্য সুযোগসুবিধার অভাবে ভোগান্তি বাড়ছে রাজ্যের অসংখ্য প্রসূতির।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.