|
|
|
|
চেক ভাঙানোর ব্যাঙ্ক নেই, জননী সুরক্ষায় জটিলতা
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
আর নগদ নয়। জননী সুরক্ষা যোজনায় মায়েদের টাকা এ বার থেকে ‘চেক’-এ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জুলাই মাস থেকেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বলা হয়েছে। আর তাতেই দেখা দিয়েছে জটিলতা।
ব্যাঙ্কিং পরিষেবার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না করে নতুন নির্দেশ কার্যকর করায় প্রত্যন্ত এলাকার মায়েদের সমস্যায় পড়তে হবে বলে আশঙ্কা। কারণ, এখনও পিছিয়ে পড়া এলাকায় বহু মহিলারই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে, তাঁরা ‘চেক’ ভাঙাতে পারবেন না। অনেক জায়গায় কাছাকাছি ব্যাঙ্কও নেই। সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের উপ-জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী। তাঁর কথায়, “যে কোনও পদ্ধতি চালুর ক্ষেত্রে প্রথমে তো কিছুটা সমস্যা হবেই। তবে আমরা সরকারি নির্দেশ মেনেই ‘চেক’ দেওয়া শুরু করেছি। আশা করি, ধীরে ধীরে সমস্যা মিটে যাবে।”
স্বাস্থ্য আধিকারিক মুখে এ কথা বললেও সমস্যা অতি সহজে মিটবে বলে মনে হয় না। পশ্চিম মেদিনীপুরে ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান থেকেই তা স্পষ্ট। জেলার ২৯টি ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে ২৯০টি। আর ব্যাঙ্কের সংখ্যা ৩৬৮টি। যার মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ২৯৫টি, বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক ৩৭টি ও সমবায় ব্যাঙ্ক ২৭টি। এই পরিসংখ্যান থেকে মনে হতে পারে প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকাতেই ব্যাঙ্ক রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা নেই। বেশিরভাগ ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে শহর বা শহর ঘেঁষা এলাকায়। যেমন মেদিনীপুর সদর ব্লকে ব্যাঙ্কের সংখ্যা ২৪টি। খড়্গপুরে ৩৮টি। জেলার ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮০টিতে এখনও কোনও ধরনের ব্যাঙ্ক তৈরি হয়নি।
এই অবস্থায় সব থেকে সমস্যায় পড়বেন প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলের মায়েরা। একদা মাওবাদী উপদ্রুত বেলপাহাড়ির শিমুলপাল পঞ্চায়েত, লালগড়ের আঁধারিয়া, ধরমপুর, নেপুরা, নয়াগ্রামের বাড়খাকড়ি, বেড়াজল, জামিরপাল-সহ জঙ্গলমহলের বহু গ্রাম পঞ্চায়েতেই ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিকটবর্তী ব্যাঙ্ক ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে। গড়বেতা-২ ব্লক অর্থাৎ গোয়ালতোড়ের মাকলি, জগারডাঙা ও গোয়ালডাঙা এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক নেই। জগারডাঙা পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের কাছাকাছি ব্যাঙ্ক বলতে হুমগড়। দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। একই অবস্থা মাকলিরও। সব থেকে কাছে ব্যাঙ্কের শাখাটি রয়েছে আমলাশুলিতে। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে প্রসূতিদের চেকে টাকা হবে, সেটাই প্রশ্ন। ‘জননী সুরক্ষা যোজনা’র পুরনো নিয়ম অনুযায়ী, হাসপাতালে সন্তানের জন্ম হলে প্রসূতি বাড়ি ফেরার সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স তাঁকে হাতে-হাতে টাকা দিয়ে দেবেন। গ্রামীণ এলাকায় মায়েরা পাবেন এক হাজার, আর শহরে ৯০০ টাকা। বাড়িতে প্রসব হলে সাব-সেন্টারের কর্মীকে জানাতে হবে। তিনিই মাকে নগদ ৫০০ টাকা দেবেন। শিশু ও মায়ের প্রয়োজনীয় ওষুধ, পুষ্টিকর খাদ্যের জনই এই অনুদান। কিন্তু চেক দিলে সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে কিনা, প্রশ্ন উঠছে।
বাস্তব পরিস্থিতি যাই হোক, নতুন নির্দেশ কার্যকর করার প্রক্রিয়া কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রতিটি ব্যাঙ্কই যাতে প্রসূতিদের ‘জিরো ব্যালান্স’ অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়, সরকারের তরফে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাঙ্কের শাখা খোলারও চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে মাস তিনেক আগে জেলা প্রশাসনও সব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, ব্যাঙ্কহীন ৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র দু’টিতে ব্যাঙ্ক খোলার প্রস্তাব এসেছে। এই দু’টি এলাকাই মেদিনীপুর শহর ঘেঁষা কঙ্কাবতী ও শিরোমণি গ্রাম পঞ্চায়েত। তাহলে জঙ্গলমহল-সহ প্রত্যন্ত এলাকায় কি ব্যাঙ্ক হবে না?
জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সমরেন্দ্র ষন্নিগ্রাহী অবশ্য বলেন, “ফের সব ব্যাঙ্কের কাছেই আবেদন জানানো হবে, যাতে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে অন্তত একটি করে শাখা খোলা যায়।” |
|
|
|
|
|