দু বছর আগের কথা। বালুরঘাট শহরের নারায়ণপুর জিএস অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৩। ছাত্রের অভাবে স্কুল বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। দু’বছর পরে এখন স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ৫৪। শুধু তাই নয়, কলোনির পড়ুয়াদের সঙ্গে রোজ স্কুলে আসে তাদের ভাই-বোনেরাও। বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের আদলে তাদের জন্য স্কুলে শুরু হয়েছে পৃথক ‘শিশু বিভাগও’।
কীভাবে বদলাল স্কুলের ছবিটা।
ছাত্রসংখ্যার মতো শিক্ষকসংখ্যাও কমে যায় নারায়ণপুরের ওই প্রাথমিক স্কুলে। গত বছরের গোড়ায় স্কুলে ১ জন শিক্ষক ছিলেন। এর পরে পদক্ষেপ করে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক সংসদ। অন্য স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষক সহ ৩ শিক্ষককে নারায়ণপুর স্কুলে নিয়ে আসা হয়। তারপর থেকেই শুরু হয় স্কুলের ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ। প্রশস্ত সড়কের পাশে স্কুল। বাসিন্দারা দুর্ঘটনার ভয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে দিতেন না। গত বছর শিক্ষকরা মিলে রিকশা ভ্যানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ওই ভ্যান চেপেই পড়ুয়ারা এখন স্কুলে আসে এবং বাড়ি ফিরে যায়। অন্য বিষয়ের পাশাপাশি স্কুলে শুরু হয়েছে ইংরেজি শেখানোর ক্লাস। ছবি আঁকার তালিম মিলছে পড়ুয়াদের। রবিবার ছুটির সকালে স্কুলের ছাত্রীদের জন্য চলছে নাচের স্কুল।
বদলেছে মিড ডে মিলও। সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকদের উদ্যোগে প্রতিদিনই মিড-ডে মিলের মেনু বদলে যায়। ডিম বা সয়াবিনের তরকারি সঙ্গে প্রতিদিনই পাঁপড় বা আলু-পেঁয়াজ ভাজা। রবিবার সকাল ৮টা থেকে স্কুলে নাচির তালিম দেন শিক্ষিকা শ্রাবণী সরকার। পড়ুয়াদের আঁকা শেখানোর দায়িত্বে শুভ্রদীপ চৌধুরী। ইংরেজিতে এমএ পাশ করা হাসানুর জামান খুদেদের ইংরেজিতে লেখা এবং কথা বলা শেখানোর জন্য ক্লিাস নেন। প্রধান শিক্ষক দিলীপ সাহা বলেন, “জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদ চেয়ারম্যানের সহযোগিতা ছাড়া স্কুলে ছাত্র ফেরানো সম্ভব হত না। তিনি আমাদের উৎসাহ জুগিয়েছেন।”
স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে খুশি অভিভাবকরা। এক অভিভাবক স্কুলকে সিডি ও সাউন্ডবক্স উপহার দিয়েছেন। স্কুল সংলগ্ন এ কে গোপালন কলোনির বাসিন্দা তথা অভিভাবক মদন দেবনাথ, রামকৃষ্ণ পাত্র, কলি সরকারেরা বলেন, “শিক্ষকরা নিজেদের টাকায় ভ্যান রিকশার ব্যবস্থা করে দিলেন। স্কুলে ইংরেজি শেখা থেকে ছবি আঁকা, নাচ শেখা সবই হচ্ছে, শিক্ষকরা গল্পের মাধ্যমে পড়া বোঝাচ্ছেন। সে কারণেই ছেলে মেয়েদের নতুন করে ওই স্কুলে পাঠাতে শুরু করেছি।”
১৯৫৪ সালে স্থাপিত ওই স্কুলের একসময়ে দেড়শোরও বেশি পড়ুয়া থাকলেও, কেন স্কুলের ছাত্র সংখ্যা তিনে নেমে এসেছিল? জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের বাম আমলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অপূর্ব সেন বলেন, “১৯৯৫ সালের পর থেকে এলাকায় একাধিক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল চালু হয়। পাশাপাশি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত স্কুলে প্রাথমিক বিভাগও চালু হয়। যার জেরে ছাত্র সংখ্যা কমে যায়। তবে স্কুলটিকে চালু রেখে আমরা ছাত্র ভর্তির চেষ্টা করে চলেছিলাম।” বর্তমান প্রাথমিক স্কুল সংসদ চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা বলেন, “বিগত আমলে স্কুলগুলির হাল ফেরাতে সদর্থক ভূমিকা ছিল না। তাই বালুরঘাট শহর থেকে ১৩টি প্রাথমিক স্কুল আগের বোর্ড বন্ধ করে দেয়। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে স্কুলে ১ জন শিক্ষক দেখে শিক্ষকদের বদলি করে নারায়ণ পুরের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। স্কুলের শিক্ষকরাও খুবই ভাল কাজ করে চলেছেন।” স্কুলের নথি অনুযায়ী, প্রতিমাসেই গড়ে ৩ থেকে ৪ জন পড়ুয়া স্কুলে ভর্তি হচ্ছে।
|