রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর সামনেই তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা মালদহ মেডিক্যালের অধ্যক্ষকে মারধর করার পরেও কেন দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হল না, সেই প্রশ্নে ক্ষুব্ধ নানা মহল। সোমবার পথসভা করে মারধরে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তথা মালদহের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। বিকেলে শহরে প্রতিবাদ মিছিল করেন জেলার বাসিন্দা ও বিদ্বজ্জনদের একাংশও।
রবিবার কলেজের ক্যান্টিন পরিদর্শনে গিয়ে বচসার সময়ে অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্র কৃষ্ণেন্দুবাবুর গায়ে দিয়েছেন, এই অভিযোগে তাঁকে মাটিতে ফেলে মারধরের অভিযোগ ওঠে মন্ত্রীর তিন নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে অবশ্য সোমবারও এ বিষয়েও মামলা করা হয়নি। ঘটনার জেরে ভেঙে পড়েছেন উচ্ছলবাবু। তিনিও অবশ্য কোনও অভিযোগ করেননি। মালদহ ছাড়তে চান জানিয়ে বলেন, “আমার স্ত্রী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে চিত্তরঞ্জনে থাকেন। ৯০ বছরের মা কলকাতায়। ওই ঘটনার পর সকলে কান্নাকাটি করছে। কলেজে প্রথম বর্ষের ভর্তি চলছে, তাই ছেড়ে যেতে পারছি না।”
ক্ষুব্ধ হাসপাতালের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, অধ্যক্ষ যদি মন্ত্রীর গায়ে হাত দিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁকে গ্রেফতার না করে মারধর করা হল কেন? যাঁরা তা করলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মন্ত্রীই বা কেন মামলার নির্দেশ দিলেন না? কৃষ্ণেন্দুবাবুর যুক্তি, “আমি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করত। অধ্যক্ষ জেলে যেতেন। চাকরি চলে যেত। মানবিকতার খাতিরেই থানায় অভিযোগ করিনি।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “অধ্যক্ষ আমার গায়ে হাত দেওয়ায় নিরাপত্তারক্ষীরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। আমার লোকজনরা এগিয়ে না গেলে অন্য ঘটনা ঘটত।” রবিবার ঘটনাস্থলে ছিলেন এডিএম নীলকমল বিশ্বাস। প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নেয়নি সে প্রশ্নে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি তিনি। মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখনও পর্যন্ত কোনও পক্ষই অভিযোগ জানায়নি। তাই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
সোমবার দুপুরে মালদহের রথবাড়ি মোড়ে পথসভা করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী। তাঁর দাবি, “অধ্যক্ষ চোট পেলেও ভয়ে এফআইআর করছেন না। তিনি জানেন, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করলে প্রাণ চলে যাবে। কৃষ্ণেন্দুবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “আগেও উনি আমাকে গুন্ডা বলেছেন। আমি হাসপাতালে লুম্পেনদের আড্ডা ভেঙে উন্নয়ন করবই।” অধ্যক্ষের উপর হামলার ঘটনা ‘দুঃখজনক’ বললেও নিগ্রহে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে নীরব থেকেছে তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠন এবং আইএমএ। দু’টি সংগঠনই কৃষ্ণেন্দুবাবুর কাছে অধ্যক্ষকে বদলির দাবি জানায়। রবিবার ঘটনাস্থলে ছিলেন তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনের জেলা সভাপতি তাপস চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা বাঞ্ছনীয় নয়।” আইএমএ-র জেলা সম্পাদক শম্পা রায়চৌধুরী বলেন, “কারও গায়ে হাত দেওয়াটা কাম্য নয়।” |