নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন আরও এক বছর ভারতীয় বোর্ডের হর্তা-কর্তা-বিধাতা থাকতে পারবেন কি না, তা সোমবারও পরিষ্কার হল না। এ দিন ভারতীয় বোর্ড বনাম বিহার ক্রিকেট সংস্থার মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্ট ৭ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দিল। কিন্তু সে দিনও শুনানি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। আদিত্য বর্মার আইনজীবী হরিশ সালভে ওই সময় সিঙ্গাপুরে থাকবেন। সালভেকে ছাড়া শুনানি চান না তাঁরা। যে কারণে শুনানি আবার পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানাতে পারেন আদিত্যরা।
শুনানি পিছিয়ে গেলেও শ্রীনি এবং ভারতীয় বোর্ডের জন্য এ দিন কড়া বার্তা রাখল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক এবং জে এস খেয়ারের সামনে শুনানি চলার পর বিচারপতি পট্টনায়ক বলেন, “আইপিএল এবং বিসিসিআই থেকে অনেক কিছু প্রকাশ্যে আসছে। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক এই সংস্থায় গুরুতর অসঙ্গতি আছে।” এর পর বিচারপতি পট্টনায়ক বোর্ডের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, “বোর্ড কেন বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে?”
শুনানি শুরুর পর বোর্ডের আইনজীবীরা জানান, শ্রীনি আইপিএল সংক্রান্ত কোনও কাজে মাথা গলাবেন না। বোর্ডের সঙ্গে আইপিএলের সম্পর্ক নেই। তাই শ্রীনিবাসনকে যেন বোর্ডের কাজকর্ম করতে দেওয়া হয়। কিন্তু বিহার সংস্থার আইনজীবীদের পক্ষে পাল্টা বলা হয়, আইপিএলের সঙ্গে বোর্ডের অবশ্যই যোগ আছে। সব কিছু শোনার পরে বিচারপতিদের তরফে শ্রীনির উদ্দেশে মন্তব্য করা হয়, “এত তাড়াহুড়োর কী আছে? ৭ অক্টোবর আবার শুনানি হবে।”
শ্রীনি-বিরোধীদের তরফে বোর্ডের তিনটি মিটিংয়ের কথা বলা হচ্ছে। ২২-৮-০৮, ২৩-০৮-০৮, ২৭-০৯-২০০৮। যেখানে আইপিএলের অ্যাকাউন্ট পাস হয়েছিল। এমনকী আইপিএলের লভ্যাংশ থেকে রাজ্য সংস্থাগুলোকে ৭০ শতাংশ অনুদানও দেওয়া হয়। যা থেকে পরিষ্কার, বোর্ড ও আইপিএলের যোগাযোগ রয়েছে।
আদিত্যর পক্ষে আইনজীবীরা আরও একটা বিষয় আদালতের নজরে আনতে চান। এ বার বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভায় হঠাৎ করে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সচিব এমভি শ্রীধরকে সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (ক্রিকেট অপারেশনস) করে দেওয়া হয়। ঘটনা হল, প্রেসিডেন্ট হিসেবে শ্রীনির নাম প্রস্তাব করেছিলেন শ্রীধরই। এর পরই শ্রীধরকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশাল অঙ্কের মাইনে দিয়ে। বিরোধী পক্ষের প্রশ্ন, নাম তোলার পরপরই কী ভাবে একজনকে এ রকম পোস্ট দেওয়া হল?
এ দিন শুনানির আগে বোর্ডের আইনজীবীদের তরফে বিরোধী পক্ষের কাছে একটা প্রস্তাব পেশ করা হয়। বলা হয়, শ্রীনিবাসনকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করতে দিন। শ্রীনি আইপিএলের কাজে একেবারেই মাথা গলাবেন না। বোর্ড প্রেসিডেন্ট কাজ না করতে পারলে বোর্ড অচল হয়ে পড়বে। বিহার ক্রিকেট সংস্থার পক্ষে অবশ্য এ প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়।
পরে আদালতের সামনে বোর্ডের আইনজীবীরা প্রস্তাব দেন, ২০১৩ আইপিএল দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্ব নতুন কমিশনের হাতে দেওয়া হোক। তদন্ত কমিশনের পানেলের জন্য অরুণ জেটলি এবং নিলয় দত্তের নামও প্রস্তাব করা হয় বোর্ডের তরফে। এও বলা হয়, বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসাবে শ্রীনিবাসনকে কিছু কাজ করতে দেওয়া হোক। আদালত প্যানেলের বিষয়টি বিরোধী পক্ষের আইনজীবীদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। বিহার ক্রিকেট সংস্থার পক্ষে আইনজীবী হরিশ সালভে বলেছেন, বোর্ডের তরফে লিখিত প্রস্তাব পেলেই তাঁরা এ ব্যাপারে নিজেদের মত জানাবেন। রাতে বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মা ফোনে বললেন, “শ্রীনি যদি কোনও ভাবে এর মধ্যে ঢুকতে চায়, তা হলে কিন্তু কোনও কথাবার্তাই হবে না।”
|