কঠোর পরিশ্রম আর কৃচ্ছসাধনা!
ভারতীয় দলে ফেরার কঠিন লড়াইটা জেতার জন্য এই দু’টো জিনিসকেই জপমন্ত্র করে এগিয়েছিলেন যুবরাজ সিংহ। আর সেই কৃচ্ছসাধনের পথে সব থেকে বড় পরীক্ষাটা ছিল মনকে শক্ত করে মায়ের হাতের রান্না থেকে নিজেকে দূরে রাখা!
পুরো ন’মাস পরে পারফরম্যান্সের জোরে যুবরাজের দলে ফেরা নিয়ে যখন সুনীল গাওস্করের মতো আদ্যপান্ত পেশাদারও উচ্ছ্বসিত, তখন যুবরাজের মা শবনম সিংহ জানিয়েছেন, কী ভাবে তাঁর ক্যানসার-বিজয়ী ছেলে দলে ফেরার যুদ্ধটা জিততে প্রচারের আলো থেকে দূরে থেকে দিনরাত পরিশ্রম করে গিয়েছেন। “আজ আমি সত্যিই খুব খুশি। দলে ফেরার জন্য যুবি গত ক’মাস অমানুষিক খেটেছে। আমি তো বলব, শুধু এই একাগ্রতা আর চেষ্টার জন্যই ওর ভারতীয় দলে ফেরাটা প্রাপ্য ছিল,” বলেছেন দৃশ্যত গর্বিত মা। ক্যানসারের বিরুদ্ধে জীবনের সব থেকে কঠিন যুদ্ধে শবনম ছিলেন ছেলের ছায়াসঙ্গী। যুবরাজও বার বার জানিয়েছেন, মা-ই তাঁর আসল শক্তি। কিন্তু ভারতীয় দলে ফেরার জন্য নিজেকে তৈরি করতে মধ্য ফ্রান্সের এক নিরিবিলি উপকূল শহরে ফিটনেস নিয়ে খাটতে যাওয়ার সময় সেই মা-কেই দূরে থাকতে বলেছিলেন যুবরাজ। শবনমের কথায়, “ছেলে আমাকে ফ্রান্স যেতেই দিল না। বলল, তুমি গেলে তোমার হাতের রান্না খাওয়ার লোভ সামলাতে পারব না। ওজনও কমাতে পারব না।” |
ক্যানসার থেকে সেরে উঠে যুবরাজের প্রধান সমস্যা ছিল ওজন এবং ফিটনেস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ফিল্ডারদের একজন বলে নামডাক থাকা যুবরাজের পক্ষে সারা দিন মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা পর্যন্ত সম্ভব কি না, তা নিয়েও ছিল জল্পনা। সেই যুবরাজই এখন ফিটনেসের দিক থেকে অনেক ভাল জায়গায়। ক্যানসারজয়ীকে নিয়ে আর আবেগ নয়, এ বার তিনি দলে ঢুকেছেন পারফরম্যান্সের জোরে। গাওস্কর এ দিন সেটা মনে করিয়ে দিয়ে তারিফ করেছেন যুবরাজের ফিটনেসের। বলেছেন, “গত ক’টা ম্যাচে যুবরাজ ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে। কিন্তু আমার আরও ভাল লেগেছে ওর রান তোলার গতি আর চাবুক ফিল্ডিং। এই যুবরাজ দলে আসায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের ব্যাটিং আরও শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি দলে বৈচিত্র্যও আসবে।”
যে ফিটনেসের প্রশংসায় গাওস্কর পঞ্চমুখ, সেখানে পৌঁছনোর জন্য যুবরাজকে সাহায্য করেছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ টিম এক্সটার। যিনি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের রায়ান গিগসের মতো তারকার সঙ্গে কাজ করেছেন। গত জুলাই-অগস্টে যুবরাজ এবং জাহির খান ফ্রান্সে গিয়ে দেড় মাস এক্সটারের নজরদারিতেই টানা খেটেছিলেন ফিটনেস নিয়ে। এনডিটিভি-তে এক অনুষ্ঠানে এ দিন শবনম বলেন, “যুবির ফ্রান্সে গিয়ে ট্রেনিং করার সিদ্ধান্তের পিছনে ফিটনেস ফিরে পাওয়াটাই প্রধান লক্ষ্য ছিল। ক্রিকেটের প্রাথমিক ব্যাপারগুলোও ঝালিয়ে নিচ্ছিল ও।”
যার নিট ফল, শেষ ছ’টা ইনিংসে যুবররাজকে যতটা ফিট দেখিয়েছে, ঠিক ততটাই ক্রিকেট নিয়ে ফোকাস্ড-ও লাগছে তাঁকে। গাওস্কর এই ব্যাপারটাই টেনে এনে বলছেন, “যুবরাজের এই ক্যামব্যাক সহবাগ, গম্ভীরদের অনুপ্রাণিত করা উচিত। ও দেখিয়ে দিয়েছে, খিদে থাকলে তোমাকে দলে ফেরার জন্য সেই বাড়তি চেষ্টাটা করতে হবে।” তবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে দলে ফেরা যুবরাজকে ভারতের স্বার্থেই ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকে দেখতে চান গাওস্কর। তাঁর যুক্তি, যুবরাজ ২০-৩০ ওভার ব্যাট পেলে যে কোনও প্রতিপক্ষকে খুন করতে পারেন। কিন্তু পরের দিকে নেমে কম বলে বেশি রান তোলার চেষ্টায় যদি দ্রুত আউট হয়ে যান তবে আবার ‘ব্যর্থ’ তকমাটা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। গাওস্করের কথায়, “সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল স্ট্রাইক রেট। এটা মাথায় রাখতে হবে।”
আর মা শবনমের প্রার্থনা, “যুবরাজের জীবনে ক্রিকেটের থেকে বড় কিছু নেই। আশা করি এ বার ও পাকাপাকি দলে ফিরল।” |