পুজোর মুখে আচমকা বিদ্যার্থী মোর্চার ১২ ঘণ্টার বন্ধে রবিবার ফের বিপর্যস্ত হল দার্জিলিং। কড়া অবস্থান নিয়েছে রাজ্যও।
শনিবার এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানিকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে তুলকালাম হয়। সেই দিন রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জিটিএর সদস্য জ্যোতিকুমার রাই সহ শতাধিক মোর্চা সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে জ্যোতিকুমারবাবু সহ অধিকাংশকেই ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। দার্জিলিং জেলা আদালতের সহকারী সরকারি আইনজীবী পঙ্কজ প্রসাদ জানিয়েছেন, গত অগস্টে পখরিবঙে পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নি সংযোগের মামলায় জ্যোতিকুমারকে গ্রেফতার করা হয়। পঙ্কজবাবু বলেন, “জ্যোতিকুমারের বিরুদ্ধে আগে কোনও অভিযোগ না থাকায় এবং তিনি আদালতের প্রাক্তন কর্মী হওয়ায় তাঁর অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। এবং অঞ্জলি সুব্বা অসুস্থতার কারণে জামিন পেয়েছেন।”
এ দিন বন্ধে নাকাল হয়েছেন পর্যটকেরা। রবিবার স্কুল-অফিস খোলার প্রশ্ন ছিল না, কিন্তু পাহাড়ের দোকান-বাজার বন্ধ ছিল। সকাল থেকে পাহাড়ে যান চলাচল চোখে পড়েনি। সরকারি বাসও ছিল না। দুপুরের পর থেকে দার্জিলিং, কালিম্পঙে বেশ কিছু গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। তবে বন্ধের দিন অশান্তির আশঙ্কায় রবিবার ভোররাতেই পাহাড় ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেক পর্যটক। |
কিন্তু সমতলে নামার গাড়ি না পেয়ে পাহাড় থেকে নেমে ট্রেন বা বিমান ধরতে পারেননি, এমন পর্যটকের সংখ্যা কম নয়।
তবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বা বিদ্যার্থী মোর্চা কেউই এ দিন সরাসরি এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রবিবার যোগাযোগ করা হলে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “বিদ্যার্থী মোর্চার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।” বিদ্যার্থী মোর্চার ডাকেই এদিন পাহাড়ে ১২ ঘণ্টার বন্ধ হয়েছে, তবে বিদ্যার্থী মোর্চার নেতা সঞ্জীব ছেত্রী বলেন, “মন্তব্য করার মতো কোনও বিষয় নেই।”
শনিবার দার্জিলিঙের ঘুম রেলস্টেশনের অদূরে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে র্যাফের এক জওয়ানের বিরুদ্ধে। তাই নিয়ে শুরু হয় তুলকালাম। পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী তোলার দাবিতে বিদ্যার্থী মোর্চার নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছোড়ে। দার্জিলিঙে ও পরে রাতে কালিম্পংয়ে সরকারি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সিংমারি পুলিশ ফাঁড়িতেও অগ্নি সংযোগের চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ।
কেন স্কুলের পোশাকে এ ধরনের বিক্ষোভে পড়ুয়ারা সামিল হল, সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষগুলির কাছে তা জানতে চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দার্জিলিং রেঞ্জের স্পেশাল আইজি জাভেদ শামিম। তিনি বলেন, “শ্লীলতাহানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া গুজবের কারণে শনিবার সকালে বিক্ষোভ শুরু হয়। কারা গুজব ছড়াল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। স্কুলের পোশাকে একাংশ ছাত্রছাত্রীরা আইনভঙ্গ করে বিক্ষোভে কেন সামিল হল, তা-ও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধানদের ডেকে বৈঠকে বসা হবে, কাদের নির্দেশে ওই ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভে সামিল করা হয়, তা জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পাহাড়ে নতুন করে অশান্তি ছড়ানোর ঘটনায় অবশ্য কেন্দ্রকেই দূষেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। গৌতমবাবু বলেন, “রাজ্যকে কিছুই না জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নিয়েছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র দফতর দেখছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের ভূমিকা ন্যক্কারজনক। পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে পরোক্ষে তারা সমর্থন করছে। বাংলাভাগের চক্রান্তে তারাও যুক্ত হচ্ছে।” পাশাপাশি গৌতমবাবুর দাবি, “শনিবার ঘটনার পর পুলিশ প্রথমেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। তার পরেও পুলিশের উপর আক্রমণ হচ্ছে। কয়েকজন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন। কোনও পরিস্থিতিতেই কাউকে আইন ভাঙতে দেওয়া হবে না।” গৌতমবাবুর দাবি, পাহাড়ের ঘটনা নিয়ে কোনও জায়গা থেকে গুজব রটানো হচ্ছে। যারা ভাঙচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধেও পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে, পাহাড়ে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে গত শনিবার এবং এদিন ধৃত মোর্চা সমর্থকের পাশাপাশি শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত র্যাফের কনস্টেবল অরুণ প্রামাণিককেও এদিন রবিবার দার্জিলিং জেলা আদালতে তোলা হয়। ধৃত জওয়ানকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। |