ফের নিশানা পেশোয়ার, বিস্ফোরণে নিহত ৪০
২, ২৯, ৩৩, ৪০...। লাফিয়ে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। দু’দিন যেতে না যেতেই আজ ফের সন্ত্রাসের শিকার পেশোয়ার। এ বার জঙ্গিদের নিশানায় দীর্ঘদিনের পুরনো কিস্সা খোয়ানি বাজার। গত রবিবার পেশোয়ারের একটি গির্জায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল জঙ্গিরা। তার পর পরশু এ শহরের একটি বাসে বিস্ফোরণ। ঘা শুকোতে না শুকোতেই আজ ফের।
বেলা ১১টা হবে। ভরা বাজারে দোকানির হাকডাক। দরদাম করছেন ক্রেতারা। হঠাৎই বিস্ফোরণ। কেঁপে উঠল পায়ের তলার মাটি। ছিন্নভিন্ন দেহগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল আশপাশে। এখনও পর্যন্ত খবর, ৪০ জন নিহত হয়েছেন। তবে আশঙ্কা, সংখ্যাটা অনেক বাড়বে।
গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ১০০ জন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ন’জন রয়েছেন। তাঁরা বিয়ের বাজার করতে এসেছিলেন কিস্সা খোয়ানিতে।
দীর্ঘদিনের পুরনো কিস্সা খোয়ানি ‘গল্পবলিয়েদের’ বাজার নামে পরিচিত। এক সময়ে ছিল মশলাপাতি, চা-এর বাণিজ্যকেন্দ্র। আবার ঐতিহাসিক বাজারও বটে। ১৯৩০ সালে এখানেই একশোরও বেশি আন্দোলনকারীকে নির্মম ভাবে গুলি করে মেরেছিল ব্রিটিশ সেনা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে পেশোয়ারের স্বভাব-চরিত্র। এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কিন্তু বদল আসেনি এই প্রাচীন পাড়ায়। এখনও সেখানে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে পথের ধারে আড্ডায় মেতেছে। স্বভাবতই এ দিনও জমজমাট ছিল কিস্সা খোয়ানি।
বিস্ফোরণস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে সেনা। ছবি: রয়টার্স।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২২৫ কেজি বিস্ফোরকে ঠাসা একটা গাড়ি দাঁড় করানো ছিল বাজারে। রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আশপাশের অন্তত ৫০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত। ধসে পড়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। আগুন ধরে গিয়েছে পাশের গাড়িগুলোতে।
শহরের অন্য প্রান্তের ছবিটা বদলে যায় মুহূর্তে। পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতাল। সামনেটা ভিড়ে ঠাসা। আতঙ্কিত মুখ, কান্নার আওয়াজ, অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেন সব মিলেমিশে আতঙ্কপুরী। এখানেই ভর্তি রয়েছেন আহতেরা। মোবাইল কানে এক দল লোক অনবরত পায়চারি করে যাচ্ছে, ফোন ধরছে না পরিজন। অথচ হাসপাতালও খবর দিতে পারছে না। তারা শুধু জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ছয় মহিলা ও চারটি শিশু রয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক ব্যক্তি জানালেন, বিস্ফোরণের পর ছ’-ছ’বার মোটরবাইক চালিয়ে বাজারে গিয়েছেন দোকান মালিক শের গুল। আর এক এক করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
আবার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন, ছেলেমেয়েকে নিয়ে ফলের রস খেতে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মহিলা ও তাঁর স্বামী। “ওদের কেউই হয়তো বেঁচে নেই।” এমন টুকরো টুকরো বহু ঘটনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিস্ফোরণস্থলে।
এখনও রবিবারের এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি কোনও জঙ্গি-সংগঠন। গত রবিবার গির্জায় সন্ত্রাস-হানার ঘটনায় দায় নিয়েছিল তালিবানের একটি শাখা। বলেছিল, সেটা ছিল পাকিস্তানের মাটিতে মার্কিন ড্রোন হানার বদলা। আজ কিস্সা খোয়ানি বাজারে বিস্ফোরণের একটু আগেই মার্কিন বিমান ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে একটি আদিবাসী গ্রামে। চার জনের মৃত্যুর খবরও শোনা যায়। তাই পেশোয়ারের বাসিন্দাদের সন্দেহ, কিস্সা খোয়ানি বিস্ফোরণ এরই পাল্টা জবাব ছিল।
এ নিয়ে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে পেশোয়ারে। স্থানীয়দের দাবি যেখানে আজ হামলা চালিয়েছে মার্কিন-সেনা, সেটি পুরোপুরি তালিবান অধ্যুষিত। অথচ গত শুক্রবারই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় আমেরিকাকে আবেদন জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, ড্রোন হানা বন্ধ করা হোক। সে সঙ্গে তালিবানের সঙ্গে সমঝোতার পথেও হাঁটতে চাইছেন শরিফ।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠকেও শরিফ কিস্সা খোয়ানি বিস্ফোরণ-কাণ্ডের কথা তুলেছিলেন। তবে তালিবানের সঙ্গে সমঝোতা পর্বের কথা উল্লেখ না করে দেশের মানুষের উদ্দেশে বলেন, “যাদের মধ্যে এতটুকু মানবিকতা নেই, সব ধর্ম নির্বিশেষেই তারা এ ধরনের কাজ করে। তাদের নৃশংসতা সরকাশান্তি প্রক্রিয়া নষ্ট করতে পারবে না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.