আয়োজক ক্লাব কুয়েত এসসি-র বদান্যতায় চরম অস্বস্তি ইস্টবেঙ্গলে।
শনিবার বিকেলে যে লাল-হলুদ দল কুয়েতের উদ্দেশে রওনা দিল, তাতে এ দিন সঙ্গী হতে পারলেন না অধিনায়ক মেহতাব হোসেন, অর্ণব মণ্ডল ও গুরবিন্দর সিংহ। ভিসা সমস্যায় দমদম বিমানবন্দরেই আটকে দেওয়া হল তিন ফুটবলার ও ম্যানেজার-সহ আরও চার জন কর্মকর্তাকে। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে আসতে হয় সবাইকে। একেই এএফসি কাপ সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে বিশ্রাম নেওয়ার কোনও সুযোগ পাননি চিডি-ওপারারা। দু’দিনের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে অনুশীলন করেই ছুটতে হচ্ছে কুয়েতে। সেখানে মেহতাব-অর্ণবদের হয়রানি নিঃসন্দেহে আরও সমস্যা বাড়িয়ে তুলল কোচ মার্কোস ফালোপার। তবে এই মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, মেহতাবরা কি আদৌ যেতে পারবেন কুয়েতে?
ভিসা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আয়োজক ক্লাবের। এবং কুয়েত এসসি-র পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, রবিবার সকাল বারোটার মধ্যেই বিমানে চড়ার অনুমতি চলে আসবে। এবং সোমবার রাতে কুয়েতে নেমেই হাতে ভিসা পেয়ে যাবেন মেহতাবরা। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কর্তারা তাতে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। কারণ কুয়েত এসসি-র বিশৃঙ্খলা এবং অনিয়মের দৃষ্টান্ত এই প্রথম নয়। সেমিফাইনাল ম্যাচের তারিখ নিয়েও ইস্টবেঙ্গলকে চরম হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। প্রথমে ১ অক্টোবরের ম্যাচ ২ তারিখে পিছিয়ে দেওয়া হয়। দু’টো সেমিফাইনাল একই তারিখে পড়ছে বলে। কিন্তু পরে যখন ২ তারিখের জন্য জোর কদমে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল, তখন হঠাৎ বলা হয় কুয়েত খেলতে রাজি নয়। ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার শনিবার রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে বললেন, “আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা ফেডারেশনকে চিঠি দিচ্ছি। গোটা বিষয়টার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই।” তারিখ বদল এবং ভিসা-সমস্যার জেরে এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে ক্লাবের। |
মেহতাবদের হয়রানিতে অসম্ভব বিরক্ত ফালোপাও। আর হবে না-ই বা কেন? সোমবার রাতে কুয়েতে নেমেই মঙ্গলবার ম্যাচ খেলতে হবে মেহতাব-অর্ণবকে। একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য যে মানসিক এবং শারীরিক শক্তি লাগে, সেটার কোনওটাই থাকবে না তাঁদের। ক্লান্তি এবং অযথা দৌড়ঝাঁপে বিধ্বস্ত হয়ে উঠবেন। শনিবার কুয়েতে রওনা হওয়ার আগে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে লাল-হলুদের ব্রাজিলিয়ান কোচ বলে গেলেন, “এ রকম ভাবে ম্যাচ খেলা যায় না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।”
সব প্রতিকূলতার মধ্যেই অবশ্য ‘মিশন কুয়েত’-এর জন্য প্রথম এগারো বেছে নিলেন মার্কোস ফালোপা। ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলিয়ান কোচ সুয়োকার পরিবর্তে হরমনজিৎ সিংহ খাবরাকে শুরুতেই খেলানোর কথা ভাবলেও, তাঁর সবচেয়ে অভিনব স্ট্র্যাটেজি হল সৌমিক দে-র পজিশন। সেমেন পাদাংয়ের বিরুদ্ধে মেহতাব হোসেনের পাশে ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসেবে সৌমিককে ব্যবহার করলেও, কুয়েতে লেফট উইংয়ে খেলার সম্ভাবনাই বেশি তাঁর। শনিবার সকালে অনুশীলনের পরে ফালোপা নিজেও ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন, “সৌমিক যে-কোনও পজিশনে খেলতে পারে। ওকে কুয়েতে একটা নতুন পজিশনে ব্যবহার করব।” কিন্তু কোচ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও, সৌমিক কি তাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন? হিন্দমোটরের বাসিন্দা বলছিলেন, “আমার কোনও পছন্দের জায়গা নেই। দলের স্বার্থে আমি যে কোনও পজিশনে খেলতে পারি।”
সৌমিককে লেফট হাফে রেখে মেহতাবের পাশে খাবরাকে ডিফেন্সিভ মিডিও হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন ফালোপা। কুয়েতের বড় চেহারার দুই স্ট্রাইকার ইসাম জেম্মা ও রোজেরিওকে আটকাতেই লাল-হলুদ কোচের এই স্ট্র্যাটেজি। উদ্দেশ্য, খাবরাকে দিয়ে ধ্বংসাত্মক ফুটবল খেলিয়ে বিপক্ষের খেলা লন্ডভন্ড করে দেওয়া। প্রসঙ্গত, ট্রেভর মর্গ্যানের জমানায় এই কাজটাই করতেন ইসফাক আমেদ। শনিবার অনুশীলনের পরে খাবরা বলছিলেন, “এএফসি কাপ সেমিফাইনালে খেলা যে-কোনও ফুটবলারের কাছে সম্মানের ব্যাপার। আমার ফুটবল-জীবনে পাওয়া এত বড় সুযোগকে পুরো কাজে লাগাতে চাই।”
কুয়েত এসসি-কে আটকাতে সাম্বা-স্ট্র্যাটেজির ব্লু প্রিন্ট তৈরি। এখন শুধু দেখার, ফুটবলারদের মানসিক এবং শারীরিক ক্লান্তিকে জয় করতে পারেন কি না ফালোপা! |