ক্ষতি সামাল দিতে আসরে সনিয়া, টিম-রাহুলও
বাঘের পিঠে চড়ে বসেছেন রাহুল গাঁধী! সঙ্গে সওয়ার করেছেন দলকেও!
শুক্রবার দুপুরে দিল্লির প্রেস ক্লাবে দাগি-বাঁচানো অর্ডিন্যান্স নিয়ে তোপ দেগে বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এবং দলের একটা অংশকে তুমুল অস্বস্তিতে ফেলেছেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি। কিন্তু এখন আর তাঁর সুর নরম করারও সুযোগ নেই। কারণ সে ক্ষেত্রে ধাক্কা খেতে পারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা ‘ব্র্যান্ড’ রাহুল! কিন্তু ওই মন্তব্য ঘিরে যা পরিস্থিতি হয়েছে, তাতে তো শুধু প্রধানমন্ত্রী, সরকার বা কংগ্রেস নয়, রাহুলকে ঘিরেও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
এই অবস্থায় আসরে নেমেছেন স্বয়ং সনিয়া গাঁধী। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রশমন করার পাশাপাশি দলের ভাবমূর্তি বাঁচানোও লক্ষ্য তাঁর। নেতাকে বাঁচাতে আসরে নেমেছেন রাহুল-ঘনিষ্ঠরাও। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটছে কই?
সরকারের আনা অর্ডিন্যান্সকে ‘ফালতু’ বলে মন্তব্য করার পর গত ২৪ ঘণ্টায় ঘরে-বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন রাহুল। এবং নিশানায় শুধু ব্যক্তি রাহুল নন, কংগ্রেসের অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীও। যাঁর গত কালের মন্তব্যের পর থেকে ছিটকে আসছে নানা মন্তব্য। কেউ বলছেন, ভবিষ্যতের নেতার এই দায়িত্ববোধ! কংগ্রেসের সহ-সভাপতিও থাকবেন, আবার সরকারের কোনও সিদ্ধান্তের দায় না নিয়ে বল্গাহীন সমালোচনাও করবেন! আবার কারও প্রশ্ন, অর্ডিন্যান্স নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে যখন আলোচনা চলছিল, তখন কি ঘুমোচ্ছিলেন রাহুল? না কি এখন মা সনিয়া গাঁধীর সঙ্গেই মতের অমিল হচ্ছে তাঁর? প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের মধ্যেই এমন মন্তব্য করার জন্যও তোপের মুখে পড়েছেন রাহুল। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁর শব্দচয়ন এবং আদব কায়দা নিয়ে। এই অংশের বক্তব্য, এক জন নেতা, যিনি ভবিষ্যতে আরও বড় দায়িত্ব পেতে চলেছেন, তাঁর জানা উচিত কখন কোথায় মুখ খুলতে হয়!
স্বাভাবিক ভাবেই আসরে নামতে দেরি করেনি বিজেপি। তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রবল সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছে। অথচ মাত্র ক’দিন আগেই গোয়ায় এক সভায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ‘মিমিক্রি’ করতেও ছাড়েননি বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী! দু’দিন আগে অবধি বিজেপি-র লক্ষ্য ছিল কংগ্রেসের আনা এই দাগি-বাঁচানো অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করা। রাহুলের তোপে তাদের সেই বিরোধিতা উধাও হয়ে যেতেই বিজেপি নেতারা কৌশল বদলে মনমোহনের প্রতি দরদ দেখিয়ে রাহুলের ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দিতে সক্রিয়। বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোর সমালোচক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন বিদেশ সফরে যান, তখন সংযত থাকি। কারণ দেশের সম্মান জড়িত। কিন্তু রাহুল গাঁধীর সেই বোধটুকুও নেই!” সন্দেহ নেই, কাল, রবিবার দিল্লিতে জনসভা থেকে রাহুল সম্পর্কে আরও চড়া সুরে আক্রমণ শানাবে বিজেপি।
কংগ্রেসের শীর্ষ সারির এক নেতা আজ এ প্রসঙ্গে বলেন, “ক্ষতি সামাল দিতে প্রথম যে কাজটা করার ছিল, তা রাহুল-সনিয়া ইতিমধ্যেই করেছেন। সনিয়ার বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, রাহুলের এই আগ্রাসন মনমোহনের আত্মমর্যাদায় আঘাত করেছে। তাই রাহুলের সাংবাদিক বৈঠকের পরক্ষণেই সনিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ক্ষমা চেয়ে নেন।” ওই নেতার ব্যাখ্যা, সনিয়া জানেন, অর্ডিন্যান্সের দায় একা মনমোহনের নয়। সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁর নিজেরও ভূমিকা ছিল। তাঁর মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আহত হয়েছেন বুঝে সক্রিয় হয়েছেন রাহুল নিজেও। তিনি নিজের বক্তব্য ব্যাখ্যা করে চিঠি লিখেছেন মনমোহনকে। স্থির হয়েছে, মনমোহন দেশে ফেরা মাত্র সনিয়া এবং রাহুল দু’জনেই সাত নম্বর রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন।
কিন্তু তাতেও কি সমস্যা মিটবে? কংগ্রেসের ওই শীর্ষ নেতার বক্তব্য, সনিয়া-রাহুল যা করছেন, তাতে প্রাথমিক ভাবে ক্ষত হয়তো কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে। কিন্তু তার পরের কাজটিও কম কঠিন নয়। কারণ সেটি রাজনৈতিক মোকাবিলার প্রশ্ন। রাহুলের বক্তব্যে মনমোহন ছাড়াও আহত হয়েছেন মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য। এই অংশের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে তাঁদের সঙ্গেও প্রকাশ্যে এমন আচরণ করতে পারেন রাহুল। ফলে এই অংশটিকেও বোঝানোর দায়িত্ব নিতে হবে রাহুলকেই। বিশেষ করে শরদ পওয়ারের মতো শরিক নেতার সঙ্গে কথা বলতে হবে তাঁকে। কারণ মন্ত্রিসভার যে বৈঠকে অর্ডিন্যান্সে অনুমোদন দেওয়া হয়, তাতে সামিল ছিলেন পওয়ারও। ইতিমধ্যেই পওয়ারের দল এনসিপি রাহুলের মন্তব্যকে ‘অস্বস্তিকর’ বলেছে। এনসিপি নেতা প্রফুল্ল পটেল আজ কলকাতায় বণিকসভার এক অনুষ্ঠানে রাহুলের মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমিও দ্বিমত নই। তবে এটা আরও ভাল ভাবে সামলানো যেত। একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা বদলে ফেলা কোনও মন্ত্রিসভার পক্ষে সুখকর নয়!” রাহুল-ঘনিষ্ঠরাও অবশ্য বসে নেই। তাঁদের বক্তব্য, কিছু লোক রাহুলের মন্তব্যের সমালোচনা করলেও দলের নিচু তলার কর্মী-সমর্থকরা কিন্তু নতুন প্রাণ পেয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, রাহুল ওই মন্তব্য করে দলের মান বাঁচিয়েছেন। কেন না দাগিদের বাঁচাতে অর্ডিন্যান্স-কে সাধারণ মানুষ মেনে নিচ্ছিলেন না। বরং মানুষ এমনই দৃঢ় নেতৃত্ব চাইছেন। যেমন ভাবে দুর্নীতি-সহ নানা বিষয়ে কড়া মন্তব্য করে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন মোদী। সুতরাং মোদীকে মোকাবিলা করতে রাহুলের এই ‘অ্যাংগ্রি ইমেজ’টাই জরুরি। কংগ্রেসের আর এক নেতা বলেন, “দিনের শেষে নিচু তলার কর্মী-সমর্থকরা কী চাইছেন, সেটাই বড়। যে কারণে বিজেপির বড় নেতারা যা-ই বলুন না কেন, নিচু তলার চাপে মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে হয়েছে।” মূলত এই ভাবনা থেকেই কংগ্রেস নেতারা এখন অর্ডিন্যান্স নিয়ে রাহুলের অবস্থানে সায় দিচ্ছেন। দিগ্বিজয় সিংহ থেকে শুরু করে কর্ণ সিংহ সকলেরই বক্তব্য, রাহুল যা বলেছেন, সেটা ঠিক। সেটাই দলের অবস্থান। রাহুল তথা কংগ্রসকে বড় স্বস্তি দিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ-নেতা নীতীশ কুমারও আজ রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নীতীশ আজ বলেন, “রাহুল যা বলেছেন, এক দম ঠিক।”
রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, গত কাল মনমোহনকে চিঠি লিখে রাহুল বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল। একই সঙ্গে রাহুল এ-ও বুঝিয়েছেন, নিজের অবস্থান তিনি লঘু করছেন না। এই পরিস্থিতিতে রাহুলকে তাঁর নিজের অবস্থানে অনড় থাকার জন্য এখন যুক্তিও সাজাতে হবে। এরও উত্তর দিতে হবে যে, তিনি এত দিন চুপ ছিলেন কেন? স্থির হয়েছে, রাহুল এটাই বলবেন, তিনি কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। কিন্তু প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দুর্নীতি, অনিয়মের সঙ্গে আপস করার তিনি পক্ষে আর নন। একুশ শতকে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা চাইছে দেশ। রাজনৈতিক বিবেচনা ছেড়ে সেই আবেগপূরণই তাঁর অগ্রাধিকার। যদিও তাঁর এই বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে, তা সময়ই বলবে। কেন না কংগ্রেসেরই এক নেতা বলেন, “রাজনীতি এবং গণতন্ত্র এ রকম ‘টেলর মেড’ হতে পারে না। যে যখন যেমন ইচ্ছা কেটে-কুটে নিজের মতো করে নিলাম!”

এই সংক্রান্ত খবর...

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.