হোয়াইট হাউসের উষ্ণতা ম্লান ঘরোয়া অশান্তিতে
ত খারাপ সকাল হয়তো কখনও কাটেনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। যাঁকে এত স্নেহ করেন, আঘাত এল তাঁর কাছ থেকেই। গত কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে টিভির পর্দায় চোখ রাখতেই যেন উল্টেপাল্টে গিয়েছিল সব। ব্রেকিং নিউজ হয়ে বার বার ফিরে আসছে রাহুল গাঁধীর তীক্ষ্ন মন্তব্য। এর পর আর কারই বা মন ভাল থাকতে পারে!
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যেন মনের হদিস রাখেন মনমোহনের। মনে করার চেষ্টা করছিলাম হোয়াইট হাউসকে এমন কখনও দেখেছি কি না! শরতের মনোরম পরিবেশ। হোয়াইট হাউসের সাজসজ্জায় বিশেষ বৈভবের প্রতিফলন নেই। হয়তো বা সাত নম্বর রেস কোর্স রোডে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের থেকেও তার বৈভব কম। কিন্তু পুরোদস্তুর কাঠের অন্দরসাজে আভিজাত্যের ছোঁয়া ষোলো আনা।
সেখানেই অভ্যর্থনা আর বিনয়ে মনমোহনকেও যেন অবাক করে দিলেন ঋজু কৃষ্ণকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এমনটাই তো চেয়েছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। ক’দিন বাদেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে পৃথিবীর সব চেয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের একটা নিজস্ব ঐতিহ্য রাখতেই তো চান তিনি।
মনমোহনের সঙ্গে বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসে তাঁর সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বেশ কিছু দিন হল প্রধানমন্ত্রী আমিষ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। দেখলাম সে কথাও অজানা নয় ওবামার। মধ্যাহ্নভোজের মেনুতে কোনও আমিষ পদ নেই। রয়েছে শুধু নিরামিষ। কেবল ভারতীয় নয়, রয়েছে ইতালি, লেবাননের নিরামিষ খাবারও।

মনমোহন-জায়া গুরশরণ কৌরের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় ওবামা-পত্নী মিশেল। হোয়াইট হাউসে। ছবি: পিটিআই।
প্রধানমন্ত্রী-পত্নী গুরশরণ কৌর অবশ্য মধ্যাহ্নভোজে ছিলেন না। কেননা দুই মেয়ে, জামাই ও নাতি নাতনিদের নিয়ে তাঁর মধ্যাহ্নভোজের পারিবারিক একটা অনুষ্ঠান আগে থেকেই ঠিক ছিল। তবে আতিথেয়তার হাত থেকে রেহাই পাননি তিনিও! পারিবারিক মধ্যাহ্নভোজে যাওয়ার আগে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা গুরশরণকে নিয়ে গিয়েছিলেন হোয়াইট হাউসের অন্য ঘরে। কর্তারা যখন দেশ-দুনিয়ার বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন, তখন মিশেল-গুরশরণ জমিয়ে আড্ডা দিয়েছেন চা খেতে খেতে। তার পর হোয়াইট হাউসের নিজস্ব বেকারি গুরশরণকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন মিশেল। জানিয়েছেন কী ভাবে সেখানে কুকিজ, কেক তৈরি হয়। গুরশরণের হেঁসেল কেমন তা মিশেলকে জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তার মতে, দু’জনকে দেখে মনেই হচ্ছিল না এই সম্পর্কের মাঝেও একটা প্রোটোকল রয়েছে। কিছু গল্প গুজব করার পর হোয়াইট হাউসের সংগ্রহে থাকা দুর্লভ কিছু ছবিও গুরশরণকে দেখিয়েছেন মিশেল।
একই ধরনের উষ্ণতা দেখা গিয়েছে মনমোহন-ওবামার বৈঠকেও। ঋজু চেহারার ওবামার পরনে ছিল কালো কোট প্যান্ট। সঙ্গে অর্থোডক্স কালো স্ট্রাইপের চওড়া টাই। কব্জিতে বড় ডায়ালের ক্রোনোগ্রাফ ঘড়ি। ডান হাতের আঙুলে সোনার আংটি। পায়ে পয়েন্টেড কালো জুতো। তুলনায় বন্ধগলা পরা ৮১ বছরের মনমোহনের চেহারায় বয়সের ভার স্পষ্ট। কিন্তু ফারাকটা কত সহজে মুছে দিতে পারেন ওবামা তাও যেন ওঁর থেকে শেখার। ঝুঁকে পড়ছেন মনমোহনের কানের কাছে। কখনও বা জানতে চাইছেন কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না। আবার প্রধানমন্ত্রীর কথাতেও তুলনায় তরুণ এই প্রেসিডেন্টের জন্য স্নেহের প্রতিফলন দেখা গিয়েছে।
এক ভারতীয় কূটনীতিকের দাবি, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে ওবামার সম্পর্ক এ রকমই। প্রথম যখন ওবামার সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল মনমোহনের, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আত্মজীবনী নিয়ে আসেন তিনি। তার পর মেয়ের জন্য সেই বইয়ে ওবামার কাছ থেকে একটি অটোগ্রাফ চেয়ে নেন।
হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে এর আগে প্রায় সব প্রধানমন্ত্রীই এসেছেন। অটলবিহারী বাজপেয়ীকে হোয়াইট হাউসে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। ভারতীয় সাংবাদিক হিসেবে সে দিন উপস্থিত থেকে তা চাক্ষুষ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তাই ছোটখাটো তফাতও বুঝে নিতে অসুবিধা হচ্ছিল না এই প্রতিবেদকের। মজা করে ভারতীয় এক কূটনীতিক বললেন, এ হল ‘পোস্ট নিউক ডিল’ ওয়াশিংটন। যে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির অন্যতম কারিগর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তা হলে মার্কিন মুলুকে মনমোহনের কূটনীতির একটা নিজস্ব ঐতিহ্য রয়ে গেল তো? ওই কূটনীতিকের জবাব, “সে তো বটেই।”
তবে সেই প্রাপ্তি অনেকটাই ম্লান করেছে ঘরোয়া অশান্তি। নিউ ইয়র্কের মাটি ছেড়ে বিমান উড়তেই তেড়ে আসবে প্রশ্নবাণ। রাহুলের মন্তব্যে কতটা অসন্তুষ্ট আপনি? প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে কি ইস্তফা দেবেন? আপনার শুভাকাঙ্খীরা তো তাই বলছে!

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.