|
|
|
|
সেনার ভুলেই ধসে পড়েছিল ওয়েস্টগেট, বিতর্ক |
সংবাদ সংস্থা • নাইরোবি |
প্রতি মুহূর্তে ঈশ্বরকে ডেকে চলেছে প্রিয়াঙ্ক। ওয়েস্টগেট মলে একটা রান্নার প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিল তার বন্ধু পার্থ। গত শনিবার জঙ্গি-হানার পর থেকে পার্থকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ওয়েস্টগেটের বিভীষিকার সাত দিনের মাথায় হিসেব বলছে, পার্থর মতো আরও জনা ষাটেক লোকের খোঁজ মিলছে না। কারণ একটাই। ওয়েস্টগেট মলের পাঁচ তলার ছাদে গাড়ির রাখার জায়গাটার একটা দিক হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল। এক-একটা তলা ধসে গিয়েছিল অন্যটার ঘাড়ে। আশঙ্কা সেখানেই চাপা পড়ে রয়েছে অসংখ্য দেহ।
এ নিয়েও বিতর্ক ছিল এত দিন। অনেকেই বলেছিল সেনাবাহিনীর ভুলেই শপিং মলের ওই অংশটা ভেঙে পড়েছিল। আজ আবার তাতে সিলমোহর দিল নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা। জানালেন, সেনার ভুলেই ওয়েস্টগেটের তিনটে তলা ভেঙে পড়েছিল। মলের মধ্যে তাঁরা রকেট-চালিত গ্রেনেড ছুড়েছিল। আর তাতেই সম্ভবত বিপর্যয়। তবে মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা। সেটা হাতে এলেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে জঙ্গিহানায় মৃত্যু হয়েছে, নাকি দেওয়াল চাপা পড়ে। তবে প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছেই, সেনাদের রকেট চালানো কি কোনও ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল?
তবে সেনার অন্য এক সূত্রের খবর, ছাদে পৌঁছনোর পথ পাচ্ছিল না সেনা। তাই রকেট চালিত গ্রেনেডের সাহায্যে একটা বড়সড় গর্ত তৈরির চেষ্টা করে তাঁরা। তাতেই ছাদ ধসে পড়ে। সোমবার মলের ভিতর থেকে চার-চার বার বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। তার পরই গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরিয়ে আসে। সন্দেহ, তখনই ছাদ ভেঙে পড়েছিল। পরের দিন মঙ্গলবারও দেখা যায়, রকেট লঞ্চার হাতে এক সেনা ওয়েস্টগেট থেকে বেরিয়ে আসছেন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, মলের ভিতরে আগ্নেয়াস্ত্রটি ব্যবহার করতে হয়েছিল। |
জঙ্গিহানায় বিধ্বস্ত ওয়েস্টগেট শপিং মল। |
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সেনা-কর্তা যাই স্বীকার করুন না কেন, সরকার মুখে কুলুপ এঁটে। এক সরকারি কর্তার মুখে এ-ও শোনা গিয়েছে, মাদুরে আগুন লেগেছিল। তার থেকেই পরিস্থিতি অত দূর গড়িয়েছিল।
কিন্তু এত সবের মাঝে বহু পরিবার এখনও আটকে রয়েছে এক সপ্তাহ আগের দুঃস্বপ্নে। ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একটা বড় অংশ ভারতীয়। “নেহাকে বলে ছিলাম, রান্না-প্রতিযোগিতায় তুমিই জিতবে”, বলছিলেন মণীশ মাশ্রু। তাঁর ১৬ বছরের মেয়ে নেহা সে দিন জঙ্গিদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। মণীশ বললেন, “দারুণ লড়ছিল ও। জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল। হঠাৎ জঙ্গিদের গুলি এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল ওর শরীরটা।” জ্যোতিকে আগলেছেন তাঁর বন্ধুরা। কিন্তু ১৭ বছরের মেয়েকে মেরে ফেলেছে জঙ্গিরা। হাসপাতালের বিছানায় ক্ষণে ক্ষণেই জ্ঞান হারাচ্ছেন জ্যোতি। কেনিয়ায় একটি ভারতীয় সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে নিখোঁজ ৬০-৭০ জনের মধ্যে অন্তত ২০ জন গুজরাতি রয়েছেন।
এর মধ্যে প্রতি দিনই প্রকাশ্যে আসছে ওয়েস্টগেটের টুকরো টুকরো ছবি। যেমন জোশুয়া হাকিম। জঙ্গিরা যখন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকদের উদ্দেশে বলছিলেন, ‘মল থেকে বেরিয়ে যাও’, তাঁর মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। মুহূর্তের পরিকল্পনায় বেঁচে যান তিনি। সঙ্গে পরিচয়পত্র ছিল। সেটি হাতে করে জঙ্গিদের দিকে এগিয়ে যান। জোশুয়া শব্দটি চেপে দিয়ে নিজেকে ‘মিস্টার হাকিম’ বলে পরিচয় দেন।
স্নেহা কোঠারি মাশ্রুর বেঁচে ফেরার গল্পও শিউরে ওঠার মতো। লুকিয়ে ছিলেন গাড়ির পিছনে। তাঁর পাশেই আশ্রয় নিয়ে ছিল এক কেনীয় কিশোর। গুলি লাগে ছেলেটির গায়ে। অসহায় অবস্থায় মরতে দেখেন তাকে। সম্বিত ফেরে কিশোরের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনের আওয়াজে। দ্রুত ফোন বন্ধ করতে গিয়ে হাতে রক্ত লেগে যায় স্নেহার। গায়ে রক্ত মেখে মৃতের ভান করে পড়ে থাকেন। তার জোরেই জীবন নিয়ে ফেরেন।
সবার ভাগ্য এতটাও সুপ্রসন্ন ছিল না। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মিতুল শাহ একটি তেল সংস্থায় চাকরি করতেন। তাঁরই সংস্থা পার্থ-নেহাদের ওই রান্নার প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছিল। ৩৩টি ছেলেমেয়ে অংশ নিয়ে ছিল তাতে। মিতুল এগিয়ে গিয়েছিলেন জঙ্গিদের দিকে। বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, ওই বাচ্চাগুলোকে মেরে কী হবে! যদিও ব্যর্থ হন তিনি।
তবে পুরোপুরি নয়। মিতুল যখন জঙ্গিদের সঙ্গে সমঝোতার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন, পালিয়ে যেতে পেরেছিল অনেকেই। তিনি অবশ্য পারেননি। জঙ্গিদের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় মিতুলের দেহ।
|
পুরনো খবর: চার পাশে গুলি, সাহায্যের হাত বাড়ালেন তরুণ |
|
|
|
|
|