বন্দিনী অন্তঃসত্ত্বা, কোপ
লৌহকপাটের নাট্যচর্চায়
হিলার দাবি, তিনি গর্ভবতী হয়েছেন স্বামীর সঙ্গে সহবাসেই। কিন্তু স্বামীর মতো তিনিও তো দীর্ঘদিন বন্দি। তা হলে কী ভাবে সম্ভব হল এটা? এই প্রশ্নে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনের অন্দরমহলে!
মহাকরণের কর্তাদের বক্তব্য, ব্যাপারটা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঘটেছে বলে ধরে নিলেও দুই বন্দির সহবাসে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা এ রাজ্যে বিরল। এমনকী ভূভারতে খুঁজলেও এর দ্বিতীয় উদাহরণ পাওয়া দুষ্কর।
অগত্যা এই ‘বিরল’ ঘটনার সত্য উদ্ঘাটনে কলকাতা বা রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে আবেদন জানিয়েছে কারা দফতর। সেই সঙ্গেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করতে জেলের অন্দরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মহড়ায় নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে তারা!
চলতি মাসেই কারা দফতরের কর্তারা জানতে পারেন, আলিপুর মহিলা জেলের এক বন্দিনী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন। এবং তা মাস ছয়েক অতিক্রম করেছে। এই খবরেই তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। কে এই মহিলা, শুরু হয় খোঁজ। জানা যায়, ওই বন্দিনী ২০০৯ সাল থেকে আলিপুর মহিলা জেলে আছেন। নারী পাচার-সহ বিভিন্ন মামলায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে তাঁর। একই অপরাধে জেল খাটছেন তাঁর স্বামীও। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর ঠিকানা প্রেসিডেন্সি সেন্ট্রাল জেল। দু’জনের জেল আলাদা। কী ভাবে অন্তঃসত্ত্বা হলেন ওই বন্দিনী?
সত্যের সন্ধানে নেমে আপাতত পাকড়াও করা হয়েছে নাটককে! আরও ঠিক ভাবে বললে, নাটকের মহড়াকে।
কারা দফতর সূত্রের খবর, জেলকে ‘সংশোধনাগার’-এ পরিণত করে তোলার প্রক্রিয়ায় বন্দিদের দিয়ে বিভিন্ন নাটক মঞ্চায়িত করা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। সেই প্রকল্পে বেশ কিছু দিন ধরেই ‘রাজদর্শন’ নাটকটি অভিনয় করছেন বন্দিরা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নাটক, নৃত্যনাট্য, আঁকাআঁকির মাধ্যমে (পরিভাষায় ‘কালচারাল থেরাপি’) বন্দিদের সংশোধন করাই এর উদ্দেশ্য। রাজদর্শন নাটকে অভিনয় করছেন ওই মহিলা এবং তাঁর স্বামী।
ওই বন্দিনী কারাকর্তাদের জানিয়েছেন, নাটকের জন্যই বন্দিদশাতেও স্বামীর সঙ্গে তিনি অনেকটা সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন। এবং সেই সূত্রেই তাঁর গর্ভে স্বামীর সন্তান এসেছে।
আপাতদৃষ্টিতে এর মধ্যে কোনও অসঙ্গতি নেই। কিন্তু বন্দিজীবনে এই কাজ অপরাধের মতোই! তাই বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে প্রশ্ন ওঠে, ছ’মাসেরও বেশি আগে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে গেল কী ভাবে?
কারা দফতর সূত্রের খবর, কর্তাদের এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর এখনও দিতে পারেননি আলিপুর মহিলা জেলের কর্তৃপক্ষ। তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে কারাকর্তাদের মনে হয়েছে, স্বামীর সঙ্গে নাটকের মহড়ায় যোগ দেওয়ার সময়েই ওই বন্দিনী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। কিন্তু এই ঘটনায় জেলের কর্মী ও অফিসারদের গাফিলতি দিকটিও স্পষ্ট।
ঠিক কী ভাবে, কোথায় এটা হয়েছে, কর্মী-অফিসারদের গাফিলতি কতটা তা জানতে মরিয়া কারা দফতর তাই কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে গোয়েন্দাদের দিয়ে তদন্ত করাতে চায়। আইজি (কারা) রণবীর কুমার এই আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। স্বরাষ্ট্রসচিব এখনও সিদ্ধান্ত নেননি।
কিন্তু শুধু গাফিলতিই তো নয়। এই ঘটনা জেলের অন্দরের নিরাপত্তার প্রশ্নটিকেও ফের সামনে এনে দিল বলে মনে করছেন কারাকর্তারা। তাই নিরাপত্তার ফাঁকফোকর বোজাতে প্রতিটি জেলের সুপারের কাছে নতুন নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন আইজি (কারা)। ২৩ সেপ্টেম্বর পাঠানো ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে:
• সূর্যাস্তের পরে জেলে সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মহড়া বন্ধ থাকবে।
• আলিপুর মহিলা জেলে আর কোনও মহড়াই হবে না।
• রাজ্যের অন্যান্য জেলে মহড়ার অনুমতি দেওয়া হলেও বন্দিদের লক-আপে ঢোকানোর সময়ের কোনও পরিবর্তন হবে না।
• বিশেষ কারণে কোনও বন্দিকে যদি নির্দিষ্ট সময়ের পরে লক-আপের বাইরে রাখতে হয়, সে-ক্ষেত্রেও তাঁকে জেলের বাইরের ও ভিতরের দেওয়ালের মধ্যবর্তী এলাকায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।
• মহিলা জেল অথবা জেলের মহিলা ওয়ার্ডে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পুরুষ প্রতিনিধি কাজ করলে তাঁর সঙ্গে মহিলা অফিসার বা মহিলা রক্ষী রাখতে হবে।
• মহিলা জেলে কর্মরত পুরুষ কর্মীদের উপরে নজরদারির জন্যও মহিলা রক্ষী রাখতে হবে সর্বক্ষণ।
• মহড়া ও অনুষ্ঠানের সময় বেশি সংখ্যায় মহিলা রক্ষী রাখতে হবে। বন্দিনীদের সঙ্গে রাখতে হবে এক জন মহিলা অফিসারকেও।
কারাকর্তাদের ব্যাখ্যা, মহিলা জেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ঢিলেঢালা। তাই আলিপুর মহিলা জেলে মহড়া বন্ধ রাখা হচ্ছে। পুরুষদের জেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনায় ভাল বলে এ বার থেকে মহড়া হবে শুধু সেখানেই।
আইজি-র নির্দেশ, জেলে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে বন্দিনীদের। যে-সব বন্দিনী পুলিশি হেফাজত কিংবা প্যারোল শেষ করে জেলে আসবেন, তাঁদের প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর পরেই জেলে ঢোকাতে হবে। আলিপুর মহিলা জেলের খবর, যাঁকে ঘিরে এত কাণ্ড, সেই মহিলা এবং তাঁর গর্ভস্থ সন্তান ভালই আছেন।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.