চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
হালকা হাসির মধ্যেও ফুটে ওঠে প্রচ্ছন্ন বিষাদ
তুপর্ণকে নিয়ে একটি শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল তাঁর প্রয়াণের অল্প কয়েক দিন পরে নিউ আলিপুরের মিরাজ আর্ট গ্যালারিতে। শিরোনাম: ‘মেমোরিজ ইন মে’। পরিকল্পনা বা কিউরেট করেছেন জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। অনেক শিল্পী ছবি এঁকেছেন তাঁকে নিয়ে। ভাস্কর্য করেছেন এক জন। তাঁর বহু চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক অমল কুণ্ডুর তোলা বেশ কিছু বিরল আলোকচিত্র ছিল। ছিল ঋতুপর্ণর লেখা চিঠি ও নানা লেখার পাণ্ডুলিপি। ঋতুপর্ণ ঘোষ (১৯৬৩-২০১৩) এক জন বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। চলচ্চিত্রকার হিসেবেই তাঁর পরিচিতি ও খ্যাতি সব চেয়ে বেশি। এ ছাড়াও তিনি ছিলেন এক জন প্রতিষ্ঠিত সম্পাদক, লেখক, কবি, চিত্রকর, সঙ্গীতরসিক এবং বিজ্ঞাপন জগতের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। এ রকম ব্যাপ্ত সৃজনময়তা সত্ত্বেও তাঁর ভিতর নিভৃত এক একাকিত্বের বোধ ছিল। সেটাই অনেক সময় তাঁর ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।
এই ব্যক্তিগত বিষাদবোধ তাঁর সৃজনের মধ্যেও জড়িয়ে ছিল। জীবন ও মৃত্যুর দ্বান্দ্বিকতা থেকে উঠে আসা তাঁর যে বিচিত্র বর্ণময় ও তমসালীন ব্যক্তিত্ব সেটাকে ছবিতে ধরা খুব কঠিন। এই প্রদর্শনীর অনেক ছবিই তাঁর বাইরের অবয়বটিকে শুধু ধরেছে। অন্তর্লীন ব্যক্তিত্বের কাছাকাছি পৌঁছতে পারেনি। সেজন্য যে ধ্যান বা তন্ময়তার প্রয়োজন অনেক শিল্পীই সেই অবকাশ পাননি।
যোগেন চৌধুরী এঁকেছেন ঋতুপর্ণর একটি আবক্ষ মুখাবয়ব। শিল্পীর নিজস্ব রূপরীতির পরিচয় আছে তাতে। হালকা হাসির মধ্যেও প্রচ্ছন্ন বিষাদ ছড়িয়ে আছে মুখে। চোখ ও ঠোঁটের ভাঁজে তা স্পষ্ট। এই দ্বৈততা শুধু একক ব্যক্তিত্বের নয়, সামগ্রিক ভাবে এই সময়েরও এক প্রতীকী ভাষ্য তৈরি করে। দ্বিজেন গুপ্ত তাঁর ছবিতে চেষ্টা করেছেন ঋতুপর্ণর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়কে পাশাপাশি রেখে তাঁর মনস্তত্ত্বের একটি বৈশিষ্ট্যকে উপস্থাপিত করতে।
শিল্পী: দ্বিজেন গুপ্ত।
প্রেক্ষাপটে তিনি সংস্থাপিত করেছেন শিল্পীর বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকটি আলোকচিত্র। সম্মুখপটে রয়েছে দ্বিজেনের নিজস্ব ঘরানার দুই মানবী প্রতিমা। ঋতুর অন্তর্লীন নারীসত্তার দিকে কি ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন তিনি? অমিত ভরের ছবিটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি চেষ্টা করেছেন ঋতুপর্ণর ব্যক্তিত্ব ও কাজের বৈচিত্রকে বহুমুখী মাত্রায় ধরতে। ছন্দিত রৈখিক বিন্যাসে তিনি এঁকেছেন ঋতুর মুখাবয়ব। তার উপর কলমের সূক্ষ্ম কারুকাজে বিভিন্ন বুনোটের সঙ্গে সঙ্গে রেখা ও ছায়াতপের প্রাধান্যে গ্রথিত করেছেন তাঁর কর্মধারার বিভিন্ন দিক। অর্পণ দাস স্বাভাবিকতাকে সামান্য বিশ্লিষ্ট করে এঁকেছেন চলচ্চিত্রকারের তিন অভিব্যক্তির তিনটি মুখ। আঁধার দিয়ে যুক্ত করেছেন তাঁদের। সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ও আলো-আঁধারের বৈপরীত্যে অনুপুঙ্খ স্বাভাবিকতায় এঁকেছেন মুখাবয়ব। দেবজ্যোতি মিশ্র এঁকেছেন রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে ঋতুপর্ণের মুখ। পার্থ তালুকদার খানিকটা বিমূর্ততায় ধরতে চেয়েছেন তাঁর ব্যক্তিত্বকে। কিন্তু অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি। অরুণ সমাদ্দার এঁকেছেন মানবী সজ্জায় সজ্জিত ঋতুপর্ণকে। ঋতু ভট্টাচার্য স্বাভাবিকতায় এঁকেছেন শিল্পীর প্রতিকৃতি। এ ছাড়া আমন্ত্রিত শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন ওয়াসিম কপূর ও সনাতন দিন্দা।
একটিই ভাস্কর্য ছিল। শিল্পী অখিল চন্দ্র দাস ফাইবার গ্লাসে নির্মাণ করেছেন ঋতুপর্ণের স্বাভাবিকতাশ্রিত মুখাবয়ব। সঙ্গে ছিল তাঁর পোশাকের পরিচিত কিছু নমুনা। ডিজাইন করেছিলেন সর্বাণী দত্ত।
স্থিরচিত্রের শিল্পী ছিলেন অমল কুণ্ডু, প্রতাপ দাশগুপ্ত ও বিশ্বজিৎ দাস। অমল কুণ্ডুর ছবিগুলিতে ঋতুপর্ণকে পাওয়া যায় তাঁর কাজ, বিশ্রাম ও বিনোদনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিচিত্র পোশাকে হেঁটে যাচ্ছেন ঋতুপর্ণ। পিছনে তাঁর মাথার উপর রঙিন ছাতা মেলে ধরেছে এক যুবক। ছবিটির প্রেক্ষাপটে উজ্জ্বল আলোর শূন্যতা। আর একটি সাদা কালো ছবিও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সমুদ্রতীরে দু’জন কুস্তিগির উন্মুক্ত শরীরে মল্লযুদ্ধরত। দু’টি শরীরের অবস্থান তৈরি করেছে একটি ত্রিভুজ। সেই ত্রিভুজের শূন্য পরিসরের ভিতর দিয়ে দৃষ্টিগোচর হচ্ছেন ঋতুপর্ণ। আর একটি ছবিতে হলুদ সর্ষেফুলের প্রান্তরে লাল পোশাকে হাত উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ঋতু। অসামান্য রচনা। সিনেমার পোস্টার ছিল কয়েকটি। ‘চোখের বালি’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, দোসর’, ‘নৌকাডুবি’, ‘চিত্রাঙ্গদা’ ইত্যাদি। সব মিলে তাঁর ব্যক্তিত্বের বিচিত্র কোলাজ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.