বলা সত্ত্বেও প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য মেলেনি। তাই ছাত্র ভর্তি নিয়ে ঘেরাও, বিক্ষোভে জেরবার হয়ে বুধবার কলেজের গেটে তালা দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়েছিলেন জঙ্গিপুর কলেজের অধ্যক্ষ। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই নড়ে বসল প্রশাসন। এসডিও-র ভর্তি বন্ধ রাখার শর্তে বৃহস্পতিবার কলেজ খুললেন অধ্যক্ষ আবু এল শুকরানা মণ্ডল।
মহকুমাশাসকের আশ্বাস সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অসীম মণ্ডলকে। বিক্ষোভকারী ছাত্র পরিষদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটাতে সাত দিন সময় চান তিনি। অসীমবাবু বলেন, “ভর্তি স্থগিত থাকবে এই শর্তে আমি দায়িত্ব নিয়েছি।”
প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষ মনে করছে, ভর্তি বন্ধ থাকলেই ঘেরাও, বিক্ষোভ উঠবে। তবে তা যে ঠিক নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো। ছাত্র পরিষদের জঙ্গিপুরের সভাপতি সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখনও সাড়ে চারশো ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে পারেননি। তাঁদের অনেক ঘোরানোর পর বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভর্তির দিন ঠিক হয়। তাই ভর্তির আশায় এ দিন পড়ুয়ারা কলেজে এসে হয়রান হয়ে ফিরে গিয়েছেন। ভর্তি বন্ধ রাখলে ওই পড়ুয়ারা কোথায় যাবে? এলাকার আশপাশে কোনও কলেজ নেই। ওদের উচ্চ শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হলে আমরা চুপ থাকব না। কাউকে উচ্চ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ভর্তি বন্ধ রেখে বিক্ষোভ এড়ানো যাবে না।” |
এসএফআইয়ের জোনাল কমিটির সম্পাদক দেবাশিস রায়ও জানান, “ছাত্র সমস্যায় আন্দোলন চলবে।”
অধ্যক্ষ আবু এল শুকরানা মণ্ডল বলেন, “অনেকে এখনও ভর্তি হতে পারেনি। এটা ঠিক। তাই বলে যখন তখন ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখাবে এটা মানা যায় না। প্রশাসনের সাহায্য চেয়ে পাইনি। তাই কলেজ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ ছিল না।”
অধ্যক্ষ বলেন, “বর্তমানে কলেজে সাত হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। অনার্সে আসন সংখ্যা ৬৩০ ও সাধারণ বিভাগে ৯৩৬। ইতিমধ্যেই ওই দুই বিভাগে আসন সংখ্যার থেকে অনেক বেশি ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয়ে গিয়েছে। আশপাশে কোনও কলেজ নেই। সংখ্যলঘু, অনগ্রসর এলাকা জঙ্গিপুর। তাই প্রতিবারই আসন সংখ্যার অনুপাতের অনেক বেশি সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীকে উচ্চ শিক্ষার কথা মাথায় রেখেই ভর্তি নিতে হয়। কিন্তু এবার বিশ্ববিদ্যালয় বাড়তি ছাত্র ভর্তি নিতে নিষেধ করেছে। তার পরেও ভর্তির দাবিতে প্রতিদিন ঘেরাও, বিক্ষোভ চলছেই।” তাঁর কথায়, “ছাত্ররা তাদের দাবি জানাবে, আন্দোলন করবে। কিন্তু তার তো একটা পদ্ধতি আছে। এভাবে অধ্যক্ষ বা অধ্যাপকদের ঘেরাও করে হেনস্থা করাটা ছাত্রদের অধিকারের মধ্যে পড়ে কি? রাজ্য সরকার অবরোধ, বন্ধের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নিয়েছেন। কলেজের এসব ব্যাপারে কেন সরকার কঠোর হচ্ছে না? এরকম চলতে থাকলে রাজ্যের কোনও কলেজে কেউ আর অধ্যক্ষ হতে চাইবেন না।” জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক অরবিন্দ মিনা বলেন, “ভর্তি বন্ধ রেখে কলেজ চলবে। কোনও অশান্তি বা গোলমাল হলে প্রশাসন কড়া হাতে তা মোকাবিলা করবে।” জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “জঙ্গিপুর কলেজে নিরাপত্তা চেয়ে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। সমস্যা হলে অধ্যক্ষ তো নিজেও আমাকে ফোন করে জানাতে পারতেন। জঙ্গিপুরের পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কলেজে অশান্তি বন্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে।” বৃহস্পতিবার কলেজ খুলতেই ভর্তির জন্য ছাত্রছাত্রীরা ভিড় করেন। |