ভর্তি নিয়ে ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্ট কালের জন্য জঙ্গিপুর কলেজই বন্ধ করে দিলেন অধ্যক্ষ আবু এল শুকরানা মণ্ডল। গত চার দিন ধরে হাত ভেঙে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে রয়েছেন তিনি। অধ্যক্ষ বলেন, “ছাত্র ভর্তি নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো গত দু’সপ্তাহ থেকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে। প্রতিদিনই পালা করে এসএফআই, ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী সমর্থকেরা কলেজে ঢুকে ছাত্র ভর্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। আমি অসুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছি। এই অবস্থায় মঙ্গলবার ছাত্র পরিষদ সমর্থকরা কলেজে গিয়ে তিন ঘন্টা ধরে ‘ছাত্র ভর্তি কমিটির’ দুই অধ্যাপক সদস্যকে ঘেরাও করে রাখে। জোর জুলুম চালায়।” তাঁর কথায়, “এই সব ছাত্র বিক্ষোভে যারা জড়িত, তাদের বেশিরভাগই বহিরাগত। প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও বহিরাগতদের কলেজে ঢোকা আটকানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আমার অবর্তমানে কোনও শিক্ষক কলেজের দায়িত্বও নিতে চাইছেন না। তাই বাধ্য হয়ে কলেজে নোটিস পাঠিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ করে দিয়েছি।”
এই অচল অবস্থা কাটাতে বুধবার বিকেলে জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক পরিচালন সমিতি ও কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মহকুমাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা বলেন, “ভর্তির কাজ আপাতত বন্ধ রেখে কলেজ খোলার জন্য এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কলেজের নিরাপত্তার ব্যাপারে সম্পূর্ণ দায়িত্ব প্রশাসন নেবে। তা ছাড়া অধ্যক্ষ তো বাড়িতে বসে আছেন। নিরাপত্তা না পেলে আমাকে জানাবেন। তা না করে এ ভাবে আচমকা কলেজ বন্ধ করা যায় নাকি? এতে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে। আমি বুধবার বিকেলেই অধ্যক্ষকে কলেজ খোলার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছি। আশা করি বৃহস্পতিবার কলেজ খুলে যাবে। না খুললে তখন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।” |
বুধবার সন্ধ্যায় মহকুমাশাসকের চিঠি পাওয়ার পর অধ্যক্ষ অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “নিরাপত্তা না পেলে কলেজ খুলব না। মহকুমাশাসক যা পারেন করবেন।” এ দিন মহকুমাশাসকের বৈঠকে অধ্যক্ষ যাননি।
কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি ভজন সরকার বলেন, “সমস্যা এলে আলোচনা করে তার সমাধান করতে হবে। পরিচালন সমিতিকে না জানিয়ে কলেজ বন্ধ করা যায় না। ভর্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে নিয়ম নীতি রয়েছে তা মানলেই সমস্যা মিটে যায়।” তাঁর কথায়, “৬৩০ জন ছাত্র অনার্সে ভর্তি হতে পারে। গত বছর সংখ্যালঘু, অনগ্রসর এলাকা দেখিয়ে প্রায় দু’হাজার ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে।”
তৃণমূলের শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান ও ওই কলেজেরই পরিচালন সমিতির সদস্য শেখ ফুরকানের মতে, “মঙ্গলবার রাতে অধ্যক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মতো আর ছাত্র ভর্তি করা সম্ভব নয়। অথচ ভর্তির জন্য চাপ আসছে। কলেজ বন্ধ করার ব্যাপারে তিনি আমাকে কিছুই জানাননি। ফলে এভাবে কলেজ বন্ধ করে তিনি ঠিক করেননি।”
গত কয়েকদিন ধরে ধুলিয়ান কলেজেও ছাত্র ভর্তি নিয়ে অশান্তি চলছে। অধ্যক্ষকে ছাত্ররা ঘেরাও করেছিল। অধ্যক্ষ অমিত ভৌমিক বলেন, “২৭ সেপ্টেম্বর পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। আশা করি আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জুড়ানকৃষ্ণ সরখেলের বক্তব্য, “কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার কথা অধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছুই জানাননি।” তাঁর মতে, “এ ভাবে কলেজ বন্ধ করা ঠিক হয়নি।”
মঙ্গলবার যে দুই কলেজ শিক্ষককে ঘেরাও করার জন্য বুধবার অধ্যক্ষ তালা ঝুলিয়ে নোটিস জারি করেছেন তাদের অন্যতম বিদ্যুৎ সাঁতরা বলেন, “ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। ঘেরাও করা ছাত্রদের এ কথা বোঝানো সত্ত্বেও তাঁরা তা মানতে চাননি। তিন ঘন্টা ঘেরাও করে মানসিক চাপ দেওয়া হয় আমাদের। সবটাই ঘটেছে পুলিশের সামনে। ঘেরাও মুক্ত হয়ে আমার অধ্যক্ষকে সব জানিয়েছি। এভাবে মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করা অসম্ভব।”
ছাত্র সংগঠনের নেতারা অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। ছাত্র পরিষদের জঙ্গিপুরের সভাপতি সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর যত ছাত্র ভর্তি হয়েছিল, এ বারও তাই করতে হবে। এটা জুলুম নয়, দাবি আদায়ে জন্য ঘেরাও করা হয়েছিল।”
এসএফআইয়ের জোনাল সম্পাদক দেবাশিস রায় বলেন, “ভর্তির দাবি জানানোটা অন্যায় কোথায়? অধ্যক্ষ আলোচনা না করে কলেজ বন্ধ করে দিয়ে ঠিক করেননি।” |