বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার গোঘাটের বেঙ্গাই পঞ্চায়েত এলাকা। সংঘর্ষ, মারধর, বাড়ি ভাঙচুর লেগেই রয়েছে। এ বার তার জেরে হেনস্থার মুখে পড়ল পুলিশও। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সামন্তখণ্ড গ্রামে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ন’ঘণ্টা গোঘাট থানার কিছু পুলিশকর্মীকে ঘেরাও করে রাখা হল। অভিযোগ, তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর অনুগামীরা ওই কাণ্ড ঘটায়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে নিজেদের ‘গাফিলতি’ সংক্রান্ত মুচলেকা দিয়ে ওই পুলিশকর্মীরা রেহাই পান বলে গোঘাট থানা সূত্রে জানানো হয়েছে।
পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উড়িয়ে গোঘাট থানার পুলিশের দাবি, গ্রামে আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে গিয়ে ঘেরাও হতে হয়। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া হয়। আরামবাগের এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে। গ্রামবাসীদের একটি পক্ষ অন্য একটি পক্ষের বিরুদ্ধে ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘেরাওকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দানের মামলা রুজু করা হয়েছে।”
তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না। তেমন হলে দলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশকে ঘেরাও করার বিষয়টি আমি জানি না। তবে, দলের কেউ সেই কাজ করে থাকলে পুলিশ যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই নানা কারণে বেঙ্গাই পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামে তৃণমূল নেতা অজয় ঘোষ ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে দলেরই অপর নেতা জয়ন্ত ঘোষ ও তাঁর অনুগামীদের বিবাদ চলছে। কয়েক বার দু’পক্ষের সংঘর্ষও হয়। সোমবার সামন্তখণ্ড হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন ছিল। অজয় ঘোষের অনুগামীরা জয়ন্ত ঘোষের অনুগামীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। এ নিয়ে ওই রাতেই দু’পক্ষের গোলমাল বাধে। অজয় ঘোষের কিছু অনুগামী ঘরছাড়া হন। বুধবার বিকেলে তাঁদের ফেরায় পুলিশ। রাতে ফের দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল হচ্ছে জানতে পেরে গোঘাট থানার সাব-ইনস্পেক্টর অনুপ রায়-সহ চার পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে যান। এর পরেই পুলিশের সামনে দলীয় অনুগামীদের বাড়ির ছাউনি ভাঙা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এই অভিযোগ তেলেন জয়ন্ত ঘোষের অনুগামীরা। তার পরে তাঁরা গ্রামের মোরাম রাস্তায় পুলিশকে ঘেরাও করেন বলে অভিযোগ। ঘেরাও হওয়া পুলিশকর্মীদের কয়েক জন তাঁদের চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন। রাত তিনটে নাগাদ এসআই দীপঙ্কর সাহা-সহ আরও পাঁচ পুলিশকর্মী সেখানে গিয়ে ঘেরাও হন। অবশেষে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ এসআই অনুপ রায় স্ট্যাম্প পেপারে মুচলেকা দিয়ে নিজের ‘ত্রুটি’র কথা স্বীকার করে ঘেরাওমুক্ত হন। মারধরের অভিযোগ উড়িয়ে জয়ন্তবাবু বলেন, “পুলিশের সামনেই ওরা (অজয় ঘোষের অনুগামী) আমাদের সমর্থকদের বাড়ির ছাউনি ভাঙছিল। আমাদের সমর্থকেরা প্রতিবাদ জানান। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই পুলিশকে ঘেরাও করা হয়। মারধরের অভিযোগ মিথ্যা। ওদের চেয়ার পেতে বসতেও দিয়েছিলাম। পুলিশ নিজেদের দোষ স্বীকার করেছে।” পক্ষান্তরে, অজয়বাবু বলেন, “আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে দলের ঘরছাড়াদের পুলিশ ফিরিয়েছে। সেটাই ওদের (জয়ন্ত ঘোষের অনুগামী) সহ্য হচ্ছিল না। তাই নিজেরাই নিজেদের বাড়ির ছাউনি ভেঙে নাটক করল। পুলিশকে আটকে রাখল।” |