...গন্ধ এসেছে
এ বার পুজোয় গল্প বলবে চিঠিও

বাবা,
প্রথম যখন তোমায় চিঠি লিখি, তখন আমার বয়স পাঁচ। সে বার চিঠিটা তোমার হাতে পৌঁছনোর আগেই ভোটের ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরে এসেছিলে। আমার এই দ্বিতীয় চিঠিও তোমার হাতে উঠল না। তুমি এখন অজানা ঠিকানায়। তোমায় ছাড়া আমার প্রথম পুজো। চারিদিকে শুরু হয়েছে মণ্ডপের কাঠামো বাঁধার কাজ। প্রতিমায় পড়ছে রঙের প্রলেপ। জোরকদমে চলছে কেনাকাটা। কিন্তু বাবা তোমায় ছাড়া কেমন করে হয় আমার পুজোর গল্প! তাই তোমায় খোলা চিঠিতেই লিখতে বসলাম এ বারের কিছু পুজোর হুটোপাটি।
তোমার মুখেই প্রথম শোনা ‘সুতানুটি’র নাম। ‘সুতানুটি’র সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সুতো কারবারের কাহিনীকে স্মরণ করছে শোভাবাজারের ‘নন্দরাম সেন স্ট্রিট সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’। শতাব্দী প্রাচীন ‘হোসিয়ারি শিল্প’কে তুলে আনছে তারা। ছাঁট কাপড়ের কোলাজে সাজছে গোটা মণ্ডপ। ভাঙা ও গোটা ছুঁচের কাজ থাকবে মণ্ডপে। আলোকসজ্জায় থাকবে ছাঁট কাপড়। গেঞ্জি ও কাপড়ের ছাঁটের কোলাজে ফুটে উঠবে পুরনো শিল্পের টুকরো কথা।
মধ্য কলকাতার ব্যস্ত এলাকা তালতলা। এ বারের পুজোয় ‘তালতলা সর্বজনীন শারদীয়া পুজো কমিটি’র মণ্ডপ সাজবে ধুঁধুলে। একচালার সাবেকি প্রতিমায় ৬৭তম বর্ষে দেবীর আরাধনা করছেন ওরা।
উত্তরের আরও এক প্রসিদ্ধ নাম হাটখোলা। ‘হাটখোলা গোঁসাইপাড়া সর্বজনীন’-এর এ বছরের ভাবনা ‘আয়না’কে ঘিরে। এক সদস্যের কথায়, লাবণ্য, সৌন্দর্য ও চেতনার প্রতীক আয়না। ঝিনুকের আয়না, হাত আয়না-সহ রকমারি আয়নায় সাজানো হচ্ছে মণ্ডপ। প্রতিমার পোশাক রাজস্থানি ঘরানার।
বাগুইআটি রেলপুকুর রোডের ‘ইউনাইটেড ক্লাব’ ৪০তম বর্ষের আরাধনায় মেতে উঠেছে। প্রতিমা সাবেকি। ফাইবারের ফিতে আর মশারির নেটের মণ্ডপসজ্জায় অভিনবত্ব আনার দাবি করছেন শিল্পী সুতনু মাইতি।
বাঁশ, বেতে সেজে উঠছে বেলেঘাটার ‘পূর্ব কলকাতা ছাত্র সমিতি’র পুজো। বাঁশের আঁশ থেকে তৈরি চেন, বাঁশুই, ঝুড়ি, কুলো, হাতপাখা, মাদুরে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। থার্মোকলের প্রতিমার গায়ে লাগানো হবে কাগজে সাঁটানো কাঠের আঁশ। অস্ত্র এখানে বাঁশের।
বাঁশ, ঝিনুক ও কড়ির অলঙ্কারে সাজবে প্রতিমা।
দমদম পার্কের নামেই মনে আসে পুরনো কিছু ছবি। ১৩তম বর্ষের পুজো করছে ওখানকারই ‘ভারত চক্র ক্লাব’। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার হচ্ছে কাঠের প্যানা (কাঠের আসবাবে ব্যবহৃত কাঠের পেরেক)। নিজস্ব ঘরানায় তৈরি করছে বিষ্ণু মন্দির। কাঠের প্যানায় তৈরি হচ্ছে দশাবতার, ১২ ফুটের বিষ্ণু, তিরুপতি-সহ গোটা মণ্ডপটিও। লাউয়ের খোলায় হচ্ছে সিলিং। লাউয়ের খোলায় তৈরি হবে পঞ্চ নাগের মূর্তি। জানালেন এক সদস্য দেবাশিস ভট্টাচার্য। দক্ষিণ ভারতীয় পোশাকে দুর্গা এখানে সনাতনী।
মনে পড়ে হাওড়া থেকে ট্রেন বেরিয়ে যাওয়ার ভয়ে আমরা কত দুষেছি পোস্তা মার্কেটে দাঁড়িয়ে থাকা লরিগুলোকে? পোস্তার ‘দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিট পল্লি সমিতি’র ভাবনায় থাকছে সেই লরি। মণ্ডপের ভিতরে হচ্ছে ২০/১০ ফুটের অস্থায়ী তাঁবু। মাল বোঝাই বস্তা লাট করে হচ্ছে তাঁবুর দেওয়াল। ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের বাসস্থানের প্রতীক এই তাঁবু। সদস্য বিকাশ দে জানান, পঞ্জাব ও পাকিস্তানের সুসজ্জিত ট্রাকের আদলে তৈরি টিনের মোটিফে সাজবে মণ্ডপের দেওয়াল। মায়াবী আলো আর একচালা প্রতিমায় এ ভাবেই সেজে উঠছে অন্য এক পোস্তা।
জানো তো বাবা, গোটা দেশেই এখন বন্ধ টেলিগ্রাম। লুপ্তপ্রায় চিঠি শিল্পও। তারই স্মরণে রানার, পোস্টমাস্টার-সহ লাল বাক্সের নস্টালজিক গল্প আঁকবে ই এম বাইপাস সংলগ্ন ‘পূর্বাচল শক্তি শঙ্ঘ’। মূল মণ্ডপ দেবীর ত্রিনয়নের আকারে। সুখ-দুঃখের বার্তা আনা অসংখ্য চিঠিতে সাজবে মণ্ডপ। ভিতরে থাকছে বাঁশ, প্লাই, কাপড়ে বানানো লাল বাক্সের মণ্ডপ। ফাইবারে তৈরি হচ্ছে চিঠি সম্পর্কিত বেশ কিছু মডেল। প্রতিমা সাবেক। অস্ত্র বা অলঙ্কারে থাকবে চিঠির ছোঁয়া।
পুজোর গল্প আজ এই পর্যন্তই থাক। তোমার আর মায়ের চোখে আমার চেনা দুর্গাকে এ বার থেকে তুমি দেখো আমার চোখ দিয়েই। আর খুব ভাল থেকো।

ইতি
তোমার ‘মা’।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.