এ বার কাসুন্দিয়া সমবায় ব্যাঙ্ক। অনিয়মের অভিযোগে তার লাইসেন্সও বাতিল করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে যাবতীয় আর্থিক লেনদেনের অধিকার হারাল ব্যাঙ্কটি। এর আগে ২০১০-এ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে মধ্য হাওড়ারই রামকৃষ্ণপুর সমবায় ব্যাঙ্কের অস্থায়ী লাইসেন্স বাতিল হয়। প্রায় একই এলাকায় আবার একটি সমবায় ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় ফের সমস্যায় পড়লেন কয়েক হাজার গ্রাহক ও ব্যাঙ্ককর্মী।
বৃহস্পতিবার রির্জাভ ব্যাঙ্কের তরফে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার অজিত প্রসাদ জানান, ব্যাঙ্কটি লোকসানে চলায় ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইন লঙ্ঘন করায় তার লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। রাজ্য সমবায় কর্তৃপক্ষকে লিক্যুইডেটর নিয়োগের জন্য নোটিস জারি করতে অনুরোধ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। জানানো হয়েছে লিক্যুইডেটরের মাধ্যমেই গ্রাহকদের বকেয়া মেটাতে হবে।
এলাকার বিধায়ক ও রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় এ দিন জানান, ব্যাঙ্কটির আর্থিক দুরবস্থার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচ সদস্যকে নিয়ে একটি কমিটি গড়েন। এর নেতৃত্বে ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ওই কমিটি কাসুন্দিয়া সমবায় ব্যাঙ্কের আর্থিক হাল ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নানা অনিয়ম চোখে পড়ায় এক সময়ে কমিটি সরে দাঁড়ায়। বহু ব্যক্তি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তা শোধ করেননি বলে জানান অরূপবাবু। তিনি জানান, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক লাইসেন্স বাতিল করলেও ভবিষ্যতে যাতে ব্যাঙ্কটি অন্য সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা হিসাবে কাজ করতে পারে, তা চেষ্টা করা হবে। কথাবার্তা চলছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ১৯৮৬-তে লাইসেন্স পায় ওই ব্যাঙ্ক। কিন্তু গত কয়েক বছরে ক্রমাগত লোকসান হয়। ২০০৭-এ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্দেশ দেয়, গ্রাহকেরা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে জমা টাকা তুলতে চাইলে আপত্তি করা যাবে না। নতুন পুঁজি জমাও নেওয়া যাবে না। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ না মেনে ব্যাঙ্কের পরিচালন কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, স্বর্ণ ঋণ, দৈনিক সঞ্চয় প্রকল্প চালু করে। এ সব জানতে পেরে ২০০৯-এর সেপ্টেম্বরে ব্যাঙ্কটিকে শো-কজ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
তবে রাজ্য সরকার ব্যাঙ্কটিকে বিশেষ তহবিল থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তখন লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত পিছোনো হয়। কিন্তু দেখা যায়, ২০০৯-১০ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমতি না নিয়েই রাজ্য সমবায় দফতর থেকে স্থায়ী আমানতের বিনিময়ে ঋণ নেয় ব্যাঙ্কটি। পরে দেখা যায়, সরকারের আর্থিক সহায়তা সত্ত্বেও ব্যাঙ্কটির আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। এর পর গ্রাহকদের টাকা তোলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নির্দেশ দেওয়া হয় গ্রাহকেরা এককালীন এক হাজার টাকার বেশি তুলতে পারবেন না।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ২০১২-র জুলাই নাগাদ পুঁজির অভাবে কাসুন্দিয়া ব্যাঙ্ক থেকে গ্রাহকদের টাকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩-র ফেব্রুয়ারিতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে ফের শো-কজ নোটিস পাঠায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সন্তোষজনক উত্তর না মেলায় লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। |