বিপণনে নিট নম্বর শূন্য। অথচ পর্যটনের সম্ভারে সারা ভারতকে টেক্কা দেওয়ার মতো বৈচিত্র। পশ্চিমবঙ্গে পর্যটন শিল্পের এই বৈপরীত্যের ছবিই নতুন করে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সমীক্ষায়। সম্প্রতি তা ধরা পড়ল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির জোট, আসিয়ান-এর পর্যটন ব্যবসায়ীদের সামনেও।
বিদেশি পর্যটক টানতে দু’দিন ব্যাপী ‘ট্রাভেল বেঙ্গল ২০১৩’-এর আয়োজন করে রাজ্য পর্যটন দফতর ও ইন্ডিয়ান চেম্বার (আইসিসি)। তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, নেপাল ও সিঙ্গাপুর থেকে রাজ্যের পর্যটন সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে আসেন ৩১টি পর্যটক সংস্থার প্রতিনিধিরা। সেই সভাতেই কেন্দ্রের প্রাক্তন আমলা তথা বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ইন্ডিয়া ইনিশিয়েটিভ) সেক্রেটারি জেনারেল সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পর্যটনের ক্ষেত্রে ১১টি মাপকাঠিতে ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নিয়ে ক’বছর আগে সমীক্ষা করেছিল এক আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সংস্থা। তাতে কিছু মাপকাঠিতে ভাল ফল করলেও প্রচার ও বিপণনে রাজ্য শূন্য পেয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের মধ্যে রাজ্যের স্থান ১৪ তম। তার আগে অবশ্য তা ছিল ১৩ তম। বিবিসি-র এক সমীক্ষাতেও এ রাজ্য সম্পর্কে বিদেশি পর্যটকদের অজ্ঞতার ছবি উঠে এসেছে। সুজিতবাবু জানান, ভারতে আসা বিদেশিদের মধ্যে মাত্র ২০% রাজ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আর যাঁরা এ দেশে আসেননি, তাঁদের মধ্যে জানেন মাত্র ১৯%। |
ভারতে পর্যটক পাঠালেও এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলি সম্পর্কে তাঁরা যে প্রায় কিছুই জানতেন না, সে কথা স্পষ্টই বললেন মালয়েশিয়ার দুই পর্যটক সংস্থার প্রতিনিধি তামিলচেলভি ও থানালেটচামি। তামিলচেলভির কথায়, “কলকাতা, শান্তিনিকেতন ছাড়া অন্য পর্যটন কেন্দ্রের কথা জানতাম না। বছরে গড়ে ১৫০-২০০ জন পর্যটক কলকাতায় পাঠালেও মুলত কলকাতা ও শান্তিনিকেতন ছুঁয়ে তাঁরা দিল্লি বা আগরার উদ্দেশেই রওনা হতেন। কলকাতাকে ‘স্টপ ওভার’ হিসেবে দেখেছেন থানালেটচামিও। সুন্দরবনের পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী হলেও সেখানে যাওয়ার রাস্তা বেশ খারাপ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তাঁদের আশ্বস্ত করে রাজ্য পর্যটন দফতরের অধিকর্তা উমাপদ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পর্যটন দফতর জোর দিচ্ছে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণ ও নয়া গন্তব্যস্থল গড়ে তোলায়। যেমন, সুন্দরবনের ঝড়খালি, উত্তরবঙ্গের গাজলডোবা।
সংশয় রয়েছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়েও। যদিও সভায় হাজির কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের দাবি, সব মেট্রো শহরের মধ্যে কলকাতায় অপরাধের সংখ্যা সর্বনিম্ন। রাস্তার অপ্রতুলতা সত্ত্বেও শহরের মধ্যে যান চলাচলের পরিস্থিতিও ভাল। পর্যটক-পুলিশ ছাড়াও আগামী দিনে পর্যটকদের সুবিধার্থে বিশেষ ফোন ও এসএমএস পরিষেবা চালুর পরিকল্পনাও আছে কলকাতার পুলিশের।
রাজ্যকে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরতে বিমান সংযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কথা জানান কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা। |