মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে পর্যটনের প্রসারে জোর দিচ্ছেন। অথচ কোথাও কোথাও বেহাল পরিকাঠামো তাঁর উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। যার জেরে কোনও কোনও বেসরকারি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে অন্য রাজ্যের দিকে ঝুঁকছে। সম্প্রতি এমনই নমুনা দেখা গেল উত্তরবঙ্গে।
গরুমারা জাতীয় উদ্যানের কাছে নিজেদের পরিবেশবন্ধু পর্যটন প্রকল্পের জন্য বিদ্যুতের সংস্থান করতে একটি সংস্থা ট্রান্সফর্মার বসাতে চেয়েছিল। সংস্থার অভিযোগ: নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চার লক্ষ টাকা খরচ করে যেখানে ট্রান্সফর্মার বসানোর অনুমতি মিলেছে, সেই জায়গাটি প্রকল্পস্থলের এক কিলোমিটার দূরে। পর্যটনকেন্দ্রের পুরো বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর ক্ষমতাও তার নেই।
অগত্যা প্রকল্প চালু রাখতে সংস্থাকে ওখানে শব্দহীন জেনারেটর বসাতে হয়েছে, যার পিছনে তিনগুণ টাকা পেরিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তারা। তাঁদের আরও অভিযোগ, এক কিলোমিটার দূরবর্তী ট্রান্সফর্মারটির সরবরাহ লাইন থেকে বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যাচ্ছে, এবং সেই দায় এসে চাপছে সংস্থার ঘাড়ে।
গরুমারার এ হেন অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে এ রাজ্যে তাদের সম্প্রসারণ পরিকল্পনাও কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। সংস্থার তরফে ইঙ্গিত মিলেছে যে, এই পরিস্থিতিতে ‘ওয়াক্সপোল হোটেল্স অ্যান্ড রিসর্টস’ নামে সংস্থাটি ডুয়ার্সের চিলাপাতা জঙ্গলের কাছে তিন একর জমি কিনেও সেখানে প্রকল্প গড়ার ভরসা পাচ্ছে না। বরং তারা এখন মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ জাতীয় উদ্যানে নয়া প্রকল্প গড়ে তোলায় নজর দিয়েছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশেরই কানহা ও মহারাষ্ট্রের তাডোবা ব্যাঘ্র প্রকল্পেও পর্যটনের কাজ হাতে নিয়েছে।
ওয়াক্সপোল আগে সুন্দরবনে পর্যটন প্রকল্প চালু করেছে। এখন পশ্চিমবঙ্গে জমি থাকলেও তা ফেলে রেখে অন্যত্র যাচ্ছে কেন? সংস্থা-সূত্রের ব্যাখ্যা: পর্যটন শিল্প সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গি যথেষ্টই ইতিবাচক। কিন্তু প্রশাসনের নিচুতলায় কিছু সমস্যার মুখে পড়ে তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন। ওয়াক্সপোলের এক কর্তা উদয়শঙ্কর রায়ের কথায়, “গরুমারার অভিজ্ঞতাটি দুঃখজনক। ট্রান্সফর্মারের পিছনে খরচা করেও সমস্যা মিটছে না দেখে আমরা বিদ্যুৎমন্ত্রী ও দফতরের শীর্ষ অফিসারদের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। দু’বছরেও সুরাহা হল না!” অথচ পেঞ্চ প্রকল্পে দু’মাসের মধ্যে ট্রান্সফর্মার বসে গিয়েছে বলে ওঁদের দাবি।
পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের কী বক্তব্য? বিদ্যুৎ-সূত্রের দাবি: ওয়াক্সপোলের অভিযোগ পেয়ে গরুমারায় তাদের প্রকল্প-এলাকার ভিতরে ট্রান্সফর্মার বসানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা বসানো যায়নি, কারণ ট্রান্সফর্মারে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে লাইন টানতে হতো স্থানীয় মানুষের বাড়ির উপর দিয়ে। অন্যের জমিতে খুঁটিও পুঁততে হতো। এ সবের জন্য বাসিন্দাদের সম্মতি জরুরি। আর নিয়ম অনুযায়ী, বাসিন্দাদের থেকে সেই সম্মতিপত্র সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই জোগাড় করতে হবে।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “আগে ট্রান্সফর্মার কোথায়, কেন বসানো হয়েছিল, তা নিয়ে কিছু বলব না। তবে আমরা যাবতীয় সাহায্য করার চেষ্টা করছি। ভোল্টেজের সমস্যা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। নতুন ট্রান্সফর্মার বসানোর জন্য স্থানীয় স্তরে ছাড়পত্র সংস্থাটিকেই জোগাড় করতে হবে। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটে যাবে।” গরুমারার ঘটনাটি অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবও। তাঁর বক্তব্য, “পাহাড়ে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ নিয়ে আসার সমস্যা থাকলেও ডুয়ার্সে তা হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে, গরুমারায় কেন এমনটা হল।” গৌতমবাবুও মনে করছেন, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় সমাধান সম্ভব। |