মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তি
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ঘিরে ‘ট্যুরিস্ট হাব’ তৈরির সিদ্ধান্ত
মুসলিম গথিক শিল্পশৈলীতে তৈরি ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির এক তলায় থাকার ব্যবস্থা ছিলই। এ বার সেই রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে ট্যুরিস্ট হাব তৈরির সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম এসপি অফিস প্রাঙ্গণে রাজবাড়ি-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য সরকারের একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। সংবাদমাধ্যমের সামনে রাজ পরিবারের তরফে জয়দীপ মল্লদেব ও পর্যটন দফতরের প্রধান সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৭০টি ট্যুরিস্ট কটেজ তৈরি হবে। রাজবাড়িতে যাঁরা বেড়াতে আসবেন, তাঁদের শুশুনিয়া, বিষ্ণুপুর, মুকুটমণিপুর, অযোধ্যা পাহাড়-সহ জঙ্গলমহলের সমস্ত দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখানো হবে। পরে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির উত্তরসূরি দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। পাশাপাশি গোটা জঙ্গলমহলকে ঘিরে পর্যটনের উন্নয়ন করতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগে সামিল হতে পেরে আমরা আনন্দিত।” নতুন ব্যবস্থায় রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে সুইমিং পুল, রেস্তোরাঁ, শিশুদের খেলার জায়গা, নৌকাবিহার করার জায়গা, মাছ ধরার জায়গাও থাকবে বলে জানান দুর্গেশবাবু।
এই রাজবাড়িকে কেন্দ্র করেই পর্যটন কেন্দ্রের পরিকল্পনা। —ফাইল চিত্র।
ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের ঐতিহ্য প্রায় চারশো বছরের পুরনো। প্রথম পুরুষ সর্বেশ্বর ছিলেন রাজপুতানার ক্ষত্রিয়। মল্লদেব রাজবংশের পত্তন করেন তিনি। তবে বর্তমান রাজবাড়িটি ১৯৩১ সালে ৭০ বিঘে জমির উপর মুসলিম গথিক শিল্পরীতিতে তৈরি করিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের সর্বশেষ রাজা নরসিংহ মল্লদেব। তাঁর নাতি দুর্গেশ মল্লদেব জানান, প্রাসাদটিকে গত সাড়ে চার দশকে বহু বার বড় পর্দায় দেখেছেন বাংলা সিনেমার দর্শক। কখনও ‘বাঘবন্দি খেলা’য় ভবেশ বাড়ুজ্জের বাড়ি, তো কখনও ‘সন্ন্যাসী রাজা’র সূর্যকিশোর নাগচৌধুরীর প্রাসাদ হিসেবে। সত্তরের দশকে উত্তমকুমার এসেছিলেন ‘বাঘবন্দি খেলা’ ও ‘সন্ন্যাসী রাজা’ ছবির শু্যটিংয়ে। ওই সময় এক তলার পর্যটক আবাসে ছিলেন মহানায়ক ও কলাকুশলীরা। মূলত প্রাসাদের সিংহদুয়ার থেকে সামনের বাগানে ও এক তলায় শু্যটিং হয়েছিল। তারপরও কিছু ছবির শু্যটিং হয়েছে। কিন্তু প্রথা অনুযায়ী, প্রাসাদের দোতলায় সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। দোতলায় থাকেন রাজ পরিবারের উত্তরসূরিরা। তাই দোতলায় কাউকেই শু্যটিংয়ের অনুমতি দেননি ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি কর্তৃপক্ষ।
রাজবাড়িতে ট্যুরিস্ট হাব নিয়ে চুক্তি। —নিজস্ব চিত্র।
শুধু সন্দীপ রায়ের জন্য একবারই প্রথা ভেঙেছিল রাজ পরিবার। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথা ভেঙে সেই প্রথমবার প্রাসাদের দোতলার ঘরে এবং তিন তলার সিঁড়িতে ও চিলেকোঠার রঙিন শার্সি লাগানো ঘরে ‘টিনটোরেটোর যিশু’র ‘টিম ফেলুদা’কে শু্যটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। রাজ পরিবারের সদস্য দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “এ বাড়িতে বহু সিনেমা ও সিরিয়ালের শু্যটিং হয়েছে। কিন্তু কাউকেই দোতলা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। পরিচালকের নাম সন্দীপ রায় বলেই ২০০৬ সালে পুরো রাজবাড়িটা আমরা ব্যবহার করতে দিয়েছিলাম। ওই এক বারই।”
রাজবাড়ি চত্বরেই পর্যটকদের থাকার বন্দোবস্ত। নাম ‘দ্য প্যালেস ট্যুরিস্ট রিসর্ট’। দু’টি সুপার ডিলাক্স ও দু’টি ডিলাক্স-সহ মোট ১০টি ঘর রয়েছে। আছে তিনটি ডরমেটরিও। এক সঙ্গে প্রায় ৫০ জন পর্যটক এখানে থাকতে পারেন। রাজপরিবার ও রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম যৌথ ভাবে বর্তমানে এই রিসর্টটি চালায়। রাজবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটনের ভরা মরসুমে গড়ে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এখানে আসতেন। জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বে সংখ্যাটা কমে আড়াইশোয় দাঁড়ালেও এখন পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। রিসর্টের ম্যানেজার অশ্রুকুমার মাইতি বলেন, “ঐতিহ্য ও সুন্দর পরিবেশের জন্য রাজবাড়ির উপর পর্যটকদের আলাদা আকর্ষণ আছেই। এখানে ট্যুরিস্ট হাব হলে সব দিক থেকেই ভাল হবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.