অস্বাভাবিক মৃত্যু কৃষকের, নালিশের মুখে বিদ্যুৎ দফতর
স্বাভাবিক মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম প্রশান্ত কোলে (৪০)। আনুখাল পঞ্চায়েতের কালনা ২ ব্লকের হবিবপুর গ্রামে ওই ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। এলাকাবাসীর দাবি, বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের দুর্ব্যবহারের কারণেই ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। এ দিন মৃতের আত্মীয়েরা বাড়ির একটি ঘর থেকে দু’পাতার একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে। ওই নোটে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের দ্বারা অপমানিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা ছিল বলে দাবি করেন তাঁরা। বেলা ১১টা পর্যন্ত মৃতদেহ আটকে রাখেন তাঁরা। দাবি করেন, বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হবে। পুলিশ ঘটনার তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেহ ময়নাতদন্ত করতে পাঠায় কালনা মহকুমা হাসপাতালে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ দফতরের বৈদ্যপুর শাখার কর্মীরা মঙ্গলবার হাবিবপুর গ্রামের তিনটি বাড়িতে অভিযান চালায়। এর মধ্যে একটি হল প্রশান্তবাবুর বাড়ি। অভিযান চালিয়ে দু’টি বাড়িতে কিছু না পেলেও, তাঁরা দাবি করেন প্রশান্তবাবু বিদ্যুৎ চুরি করেন। প্রশান্তবাবুর স্ত্রী প্রতিমা কোলেকে সামনে রেখে বাড়ির মিটার বক্স এবং তার খুলে নিয়ে চলে যান তাঁরা। যাওয়ার আগে তাঁরা পাশের বাড়ির এক যুবকের একটি বয়ানে স্বাক্ষর করে নিয়ে যান। ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না প্রশান্তবাবু। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বুধবার ঘটনার বিষয়ে বৈদ্যপুর শাখায় জানতে গেলে অপমান করা হয়। মোটা টাকা জরিমানার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বাড়ি ফিরে প্রশান্তবাবু এলাকার কয়েক জনকে জানান, তিনি চুরির সঙ্গে যুক্ত নন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় চাষি প্রশান্তবাবু এ দিন ভোরে পটলের জমিতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এর পর ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া একটি শিরিষ গাছের প্রায় ২৫ ফুট উঁচুতে নাইলন দড়ির ফাঁসে তাঁর মৃতদেহ ঝুলতে দেখেন স্থানীয়রা। বাড়ি থেকে মেলা সুইসাইড নোটে প্রশান্তবাবু লিখে গিয়েছিলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর স্ত্রীকে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা অপমান করেন। বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। তিনি ওই নোটে দাবি করেন, বাড়িতে আলো, পাখা বেশি ব্যবহার করা হত না। তাই চুরির অভিযোগ ভিত্তিহীন। চুরি না করেও তাঁকে চোরের বদনাম নিতে হল। তাই তাঁকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে হল। গ্রামবাসী মফিজ শেখ বলেন, “উনি এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। দুই মেয়ে পড়াশোনায় মেধাবী। প্রথমত চুরির বদনাম। দ্বিতীয়ত বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের দ্বারা অপমানিত হওয়া। এই দু’টি ঘটনা ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাই আত্মহত্যার পছ বেছে নেন তিনি।”
বিদ্যুৎ দফতরের বৈদ্যপুর শাখার স্টেশন ম্যানেজার মানিক দাস বলেন, “ওই পরিবারটির সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়নি। অভিযানের সময় অসঙ্গতি লক্ষ করায় মিটারটি সিজ করা হয়েছিল।” বিদ্যুৎ দফতরের কালনার ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (ডি ই) চঞ্চল বিশ্বাস এ দিন সন্ধ্যায় বলেন, “ডিস্ট্র্কিট লস অ্যান্ড প্রিভেনশন সেল মঙ্গলবার ওই গ্রামে অভিযান চালায়। প্রশান্তবাবুর বাড়িতে কারচুপি থাকায় নিয়ম মেনেই মিটারটি সিজ করা হয়। কালনা থানায় এ ব্যাপারে ওই দিন একটি অভিযোগও জানানো হয় প্রশান্তবাবুর নামে।” বিদ্যুৎ দফতরের বৈদ্যপুর শাখার কর্মীদের আচরণ প্রসঙ্গে চঞ্চলবাবুর বক্তব্য, “এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনও অভিযোগ নেই। এলে তদন্ত করে দেখা হবে।” এ দিন প্রশান্তবাবুর মৃতদেহ ঘিরে রাখেন এলাকাবাসী। তাঁরা দাবি করেন, বৈদ্যপুর শাখার স্টেশন সুপারকে ঘটনাস্থলে আসতে হবে। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ পুলিশ এলে পুলিশকেও ঘেরাও করে রাখেন তাঁরা। বেলা ১১টা নাগাদ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায়। তদন্তকারী পুলিশের কাছে মৃতের স্ত্রী দাবি করেন, অভিযানের দিন তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা। পুলিশ তাঁকে পরামর্শ দেয় লিখিত অভিযোগ করার জন্য।
কালনা থানার এক আধিকারিক বলেন, “বাড়ি থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে।” বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মৃতের পরিবারের তরফ থেকে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা রহিতাস্য কোলে, নন্দ ঘোষদের দাবি, শুধুমাত্র মৃতের পরিবারই নয়, বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের আচরণের বিরুদ্ধে তাঁরা ইতিমধ্যেই গণস্বাক্ষর করা শুরু করেছেন। গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগটি পাঠানো হবে বিদ্যুৎ দফতরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার, মহকুমাশাসক-সহ বিভিন্ন আধিকারিকের কাছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.