ট্রেনেই মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে এক জন
কে তার মাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, কাটোয়া আদালতে দাঁড়িয়ে তা দেখিয়ে দিল অভিযোগকারিণীর মেয়ে।
রুদ্ধদ্বার এজলাসে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মেয়েটি জানাল, তার মায়ের কাছ থেকে সোনার দুল না পেয়ে প্রথমে ট্রেনেই তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়। কামরার ভিতরেই এক জন তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দিলে সে মাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য দিতে এসে সেই দুষ্কৃতী-সহ দু’জনকে শনাক্ত করে সে। সাক্ষ্যের পরে আইনজীবীদের সূত্রেই বিষয়টি জানা গিয়েছে।
গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি কাটোয়া-আমোদপুর ছোট রেলে (এখন ব্রডগেজ হচ্ছে) ডাকাতির সময়ে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিল কেতুগ্রামের ওই মহিলাকে। যে আট জনের নামে ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগ ছিল, তাদের অন্যতম কায়েশ শেখকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি। মামলার সাক্ষ্য দিয়ে বীরভূমে ফেরার সময়ে মারা যায় দু’জন। বাকি চার জন জেলে এবং এক জন জামিনে ছাড়া আছে।
এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক সৈয়দ নিয়াজুদ্দিন আজাদের এজলাসে সাক্ষ্য দিতে ওঠে অভিযোগকারিণীর মেয়ে। আইনজীবীদের সূত্রের খবর, ১৪ বছরের ওই কিশোরী কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই বিচারক কিছু প্রশ্ন করে দেখেন, সে সাক্ষ্য দিতে পারবে কি না। মেয়েটি সব জবাব দেওয়ার পরে বিচারক তার সাক্ষ্য নিতে শুরু করেন। মেয়েটি জানায়, ঘটনার দিন বিকেল ৫টা নাগাদ বীরভূমের কীর্ণাহার স্টেশন থেকে সে ও তার মা ট্রেনে চেপেছিল। কেতুগ্রামের পাঁচুন্দি স্টেশনের পরে ট্রেন হঠাৎ থেমে যায়।
আইনজীবীদের সামনেই কিশোরী জানায়, দুই ডাকাত তাদের কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল। পরে এক জন পিছন দিকে চলে যায়। তার পর দু’জনেই যার কাছে যা আছে কাড়তে শুরু করে। এক জন তার প্রথমে তার মায়ের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে, তার পরে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলাকে ট্রেন থেকে নামানোর সময়ে তাঁর মেয়ের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। সাক্ষ্যে কিশোরী জানায়, প্রায় বিশ মিনিট বাদে বিধ্বস্ত অবস্থায় মা ফের ট্রেনে উঠে আসেন। পরে বাড়ি ফিরে জানান, তাঁর ‘সর্বনাশ’ করা হয়েছে।
আইনজীবীদের সূত্রে জানা যায়, বিচারক এবং সরকারি আইনজীবী কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় কিশোরীর কাছে জানতে চান, সে ডাকাতদের চিনতে পারবে কি না। সাক্ষীর কাঠগড়ায় নির্লিপ্ত কণ্ঠে মেয়েটি বলে, ‘হ্যাঁ, আমি তাদের দেখলেই চিনতে পারব।’ কাঞ্চনবাবু বলেন, ‘এখানে বেশ কয়েক জন আসামি রয়েছে। তাদের মধ্যে কাউকে চিনতে পার কি না, দেখো তো।’ সাক্ষীর কাঠগড়া থেকে নেমে সোজা আসামিদের কাঠগড়ার সামনে চলে যায় নস্যি রঙের ছাপা চুড়িদার পরা, সাদা ওড়নায় মুখ ঢাকা মেয়েটি। তার পরে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় দু’জনকে।
তখন ঘড়িতে দুপুর ১টা ২০। শনাক্ত দুই অভিযুক্তের এক জন মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার কুলি গ্রামের রেজাউল মির্জা ওরফে বাবু। অন্য জন বীরভূমের লাভপুর থানার চৌহাট্টা গ্রামের নয়ন শেখ। এর আগে মেয়েটির মা-ও আদালতে এদের শনাক্ত করেছিলেন। তৃতীয় যে আরও এক জনকে তিনি শনাক্ত করেন, সেই ফরিদ শেখ গত ১০ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যের শেষে বীরভূমে বাড়ি ফেরার সময়ে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান।
এ দিন এজলাসে হাজির আইনজীবীদের একাংশ জানাচ্ছেন, মেয়েটি দু’জনকে চিনিয়ে দেওয়ার পরে বিচারক তাকে সাক্ষীর কাঠগড়ায় ফিরে যেতে বলেন। এর পরে কিছুটা সময় নিয়ে সরকারি আইনজীবী তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার মাকে যে ট্রেনের কামরায় ধর্ষণের চেষ্টা করে এবং ট্রেন থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়, তাকে কি চিনতে পারবে?’ কিশোরী বলে, ‘হ্যাঁ, চিনতে পারব।’ কাঞ্চনবাবু বলেন, ‘সে কি এখানে আছে?’ মাথা নেড়ে কিশোরী জানায়, আছে। কাঞ্চনবাবু বলেন, ‘চিনতে পার কি না, দেখো তো।’
কিশোরী ফের এগিয়ে যায়। সঙ্গে কাঞ্চনবাবু। আইনজীবীদের সূত্রে খবর, আসামিদের কাঠগড়ার সামনে গিয়ে আঙুল তুলে লম্বা-ফর্সা এক যুবকের দিকে দেখিয়ে দেয় মেয়েটি। বিচারক যুবকের নাম জানতে চান। সে মুখ তুলে বলে, ‘আমার নাম রেজাউল মির্জা।’ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পরে অভিযুক্তদের আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ সাহা দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কিশোরীকে জেরা করেন। তাতে সে জানায়, এর আগে কাটোয়া উপ-সংশোধনাগারেও সে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করেছিল। পুলিশ তাকে কোনও কিছু শিখিয়ে দেয়নি বলেও আদালতে সে জানিয়েছে। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা জানান, সোমবার তাকে ফের জেরা করা হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.