দেখতে দেখতে প্রায় ৭০ বছর পার হয়ে গিয়েছে। লক্ষ্মী কান্ত দাসও নেই। নেই বৃন্দাবনের বীরেশ্বর ঢোলক। কিন্তু তাঁদের হাত দিয়ে শুরু হওয়া সন্দেশ এখন কোচবিহার মদন মোহন বাড়ির প্রধান প্রসাদ। জেলা বা রাজ্যের যে কোনও প্রান্ত থেকে কেউ মদন মোহন বাড়ি একবার গেলে দর্শনের পর ওই প্রসাদ খেতে ভোলেন না। অন্তত মদন মোহনের ভক্তদের এমনই দাবি। কয়েকদিন পরেই দুর্গাপুজো। ওই সময়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর সেই আশায় বুক বাঁধছেন মদন মোহনের প্রসাদ সন্দেশ বিক্রেতারা। তাঁদের একজন গৌতম ঘোষ বলেন, “প্রসাদ বিক্রি করেই সংসার চালাই। শুধু আমি নই, আমরা সাতজন রয়েছি। সবসময় ভক্ত সমাগম হয় না। পুজোর সময় আর রাসমেলার সময় অনেক ভক্ত আসেন। এইআশায় তো আমাদের দিন কাটে।” শহরের ঠিক মাঝে মদন মোহন মন্দির। এই মন্দিরে কোচবিহার বটেই উত্তরবঙ্গের ৫ জেলা জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ থেকে প্রচুর মানুষ নিয়মিত আসেন। দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলা থেকেও ভক্তরা মাঝেমধ্যেই মন্দিরে আসেন। আসেন অসম থেকেও বহু বাসিন্দা। এলাকার পুরনো বাসিন্দাদের কাছে জানা যায়, বহু বছর আগে ওই মন্দিরে ভিনরাজ্য থেকে অনেক সাধু, ধর্মপ্রাণ মানুষরা এসে আশ্রয় নিতেন। তাঁরা বছরের পর বছর ধরে থাকতেন মন্দিরে। অনেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মন্দিরেই থেকে গিয়েছেন। এ রকমই প্রায় ৮০ বছর আগে বেনারস থেকে বীরেশ্বর ঢোলক আসেন। তিনি মদন মোহন বাড়ি এলাকায় ঢোল ঠাকুর নামে পরিচয় লাভ করেন। ওই এলাকায় বসবাস করতেন লক্ষ্মীকান্ত রায়। মদন মোহন বাড়ির পাশেই তাঁর মিষ্টির দোকান ছিল। লক্ষ্মীকান্তবাবু ঢোল ঠাকুরের সঙ্গে পরামর্শ করে মদন মোহনের প্রসাদ হিসেবে সন্দেশ তৈরি শুরু করেন। মন্দিরে ঢোকার ঠিক প্রধান ফটকের উল্টো দিকে বৈরাগী দিঘির সামনে ছোট্ট ঘর তৈরি করে শুরু হয় সন্দেশ বিক্রি। সন্দেশ তৈরি হত লক্ষ্মীকান্তবাবুর দোকানে। তা বসে বিক্রি করতেন ঢোল ঠাকুর। সেই থেকে শুরু সন্দেশের প্রচলন। এখন লক্ষ্মীকান্তবাবু নেই। নেই তাঁর দোকানটিও। ঢোল ঠাকুরও নেই। কিন্তু ওই সন্দেশ রয়েছে। বর্তমান কারিগররা জানান, সন্দেশ অন্য রকমের। অন্য মিষ্টির দোকানের সন্দেশের মত নয়। এই সন্দেশে চিনির ভাগ বেশি থাকে। স্বাদ অন্যরকম। ভক্তরা বলেন, “এমনি মিষ্টির দোকানের সন্দেশ আর মদন মোহন বাড়ির সন্দেশের স্বাদ আলাদা। ওই সন্দেশই পুজোর প্রসাদ।” |