আইন অনুযায়ী দ্বিতীয়া স্ত্রী তো প্রথমা স্ত্রীর সমান মর্যাদা পাবেনই। এমনকী রক্ষিতাও আইনের চোখে প্রথমা স্ত্রীর সমমর্যাদার অধিকারিণী। অধিকারের প্রশ্নে কারও বৈধ বা অবৈধ স্ত্রীর মধ্যে আদালত কোনও রকম বৈষম্য করতে পারে না। স্বামীর চাকরি এবং তাঁর অবসরকালীন প্রাপ্য নিয়ে বিরোধে তাঁর বৈধ এবং অবৈধ স্ত্রীকে সমান-সুবিধা দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী।
সাধনচন্দ্র দেব নামে রাজ্য বিদুৎ পর্ষদের এক কর্মীর মৃত্যু হয় কর্মরত অবস্থায়। পর্ষদের নথিতে দেখা যাচ্ছে, তিনি তাঁর অবসরকালীন যা কিছু প্রাপ্য, তার প্রাপক (নমিনি) করে গিয়েছেন দ্বিতীয়া স্ত্রী কল্যাণী দেবকে। এ দিকে, তাঁর প্রথমা স্ত্রী জয়ন্তী দেবও দাবিদার। সম্প্রতি পর্ষদ জানায়, সাধনবাবুর গ্র্যাচুইটি বাবদ ১০ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে। বিচারপতি মঙ্গলবার বলেন, দুই স্ত্রীই পাঁচ লক্ষ করে টাকা পাবেন। যে-হেতু দ্বিতীয়া স্ত্রীর তিনটি নবালক সন্তান রয়েছে, তাই টাকা জমা থাকবে তিন নাবালকের নামে। প্রথমা স্ত্রীর সন্তান নেই, তাই তাঁর প্রাপ্য পাঁচ লক্ষ টাকা তিনি নিজের পছন্দমতো খরচ করতে পারবেন।
সাধনবাবু জেলায় থাকতেন। তখনই তিনি বিয়ে করেন জয়ন্তীকে। বিদ্যুৎ পর্ষদে চাকরি পাওয়ার পরে কলকাতায় আসেন। ছুটিতে বাড়ি যেতেন। প্রথমা স্ত্রীর সংসারে অর্থের অভাব রাখতেন না। কিন্তু কলকাতায় একটি নতুন সংসার ফেঁদে বসেন। সেখানে তাঁর চারটি সন্তান। সাধনবাবু দুই সংসার সমান ভাবে সামলাতেন।
৫৬ বছর বয়সে কর্মরত অবস্থায় সাধনবাবুর হঠাৎ মৃত্যু জটিল পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করায় দুই মহিলাকে। এক জন বৈধ স্ত্রী, অন্য জনের বিয়ের আইনি বৈধতা নেই। পর্ষদও সমস্যায় পড়ে, কে পাবেন চাকরি, কে পাবেন পেনশন। সাধনবাবুর কাগজে দ্বিতীয়া স্ত্রী কল্যাণী দেবের নাম আছে। অথচ জয়ন্তী দেবই তাঁর বৈধ স্ত্রী। বিচারপতির নির্দেশ, দ্বিতীয়া স্ত্রীর বয়স কম। তাই সাধনবাবুর চাকরি পাবেন তিনি। প্রথমা স্ত্রী পাবে পেনশন এবং গ্রুপ ইনসিওরেন্সের টাকা। আর থাকে গ্র্যাচুইটির টাকা। বিচারপতির নির্দেশে তা আধাআধি ভাগ হবে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কোনও মহিলাকে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। তিনি সংসার করেছেন, সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। অথচ পরিচয়হীন ভাবে গোটা জীবন কাটাবেন, এটা আইনসঙ্গত নয়। স্বামীর সম্পত্তির অধিকারে বৈধ-অবৈধ ভেদ হয় না।
|