কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তির পরিবেশ অব্যাহত। এর মধ্যেই ছাত্র সংসদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। ছাত্র সংসদের নির্বাচন শুরু করার কথা বলে উচ্চশিক্ষা দফতরের অতিরিক্ত সচিব মধুমিতা রায় বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠির বক্তব্য, পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এ বার ছাত্র সংসদের ভোট করাই যায়।
এ দিনই অশান্তির জেরে জঙ্গিপুর কলেজে তালা লাগিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন অধ্যক্ষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের শাস্তি প্রত্যাহারের দাবিতে অনশন চলেইছে ছাত্রছাত্রীদের। পড়ুয়াদের হাতে যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের লাগাতার ঘেরাও হয়ে থাকার বিভীষিকার পরে এক সপ্তাহও কাটেনি। এর মধ্যেই সরকারের এমন উদ্যোগ কেন, প্রশ্ন তুলেছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা। সরকারের বক্তব্য, হিংসা, হানাহানি, অশান্তি তো সারা ক্ষণ লেগেই থাকে। তার জন্য কি সাধারণ নির্বাচন বন্ধ হয়? সেই যুক্তিতেই ফের ছাত্র সংসদের নির্বাচন চালু করার এই উদ্যোগ।
ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিংসা, হানাহানি লেগেই থাকে। ফেব্রুয়ারিতে হরিমোহন ঘোষ কলেজে সংসদের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র পেশ নিয়ে গোলমালে প্রাণ হারান এক পুলিশকর্মী। তার পরেই ছাত্রভোট স্থগিত রাখার নির্দেশ জারি করে সরকার। যদিও হিংসা, হানাহানির জন্য নয়। পরীক্ষার মরসুমে নির্বাচনে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই নির্বাচন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে সরকারের দাবি।
পুজোর আগেই যে ফের সেই নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আগেই তা জানিয়েছিলেন। মাসখানেক আগে বিধানসভায় ব্রাত্যবাবু জানান, পুজোর আগে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা হবে এবং ভোটের পদ্ধতিও জানানো হবে। উচ্চশিক্ষা দফতরের অতিরিক্ত সচিবের ওই চিঠি কার্যত ব্রাত্যবাবুর সেই ঘোষণারই প্রতিফলন। |
তিন নির্দেশ |
• এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে এক দিনে নির্বাচন
• দিন ঠিক করবেন ডিএম বা পুলিশ কমিশনার
• ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ভোটপর্ব শেষ করতে হবে |
|
মধুমিতাদেবীর চিঠিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে নির্বাচনী কমিটি তৈরি করতে হবে। সেই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অধীন কলেজগুলির আধিকারিক ও জেলাশাসক বা পুলিশ কমিশনার বা পুলিশ সুপারের মনোনীত প্রতিনিধিরা থাকবেন। ওই কমিটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে। নির্বাচনের গোটা প্রক্রিয়াতেই পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন উচ্চশিক্ষা দফতরের অতিরিক্ত সচিব। কিন্তু নির্বাচন থেকে রাজনৈতিক দলের সংস্রব দূরে রাখার কোনও পরামর্শ দেওয়া হয়নি তাতে।
অথচ আচার্য, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন সম্প্রতি একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়ে অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদের পক্ষে সওয়াল করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ক্ষমতায় এসে শিক্ষা ক্ষেত্রকে রাজনীতিমুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। নির্বাচনে গণ্ডগোল ঠেকাতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত লিংডো কমিশন। তাদেরও অন্যতম প্রধান বক্তব্য ছিল, নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাব রুখতে হবে।
কিন্তু বাম সরকার সেই সুপারিশ রূপায়ণ করেনি। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনী বিধি তৈরি করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। সরকার বদলের পরে অভিন্ন নির্বাচনী বিধি তৈরির প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু হয়। তার জন্য কমিটি গড়ে উচ্চশিক্ষা সংসদ। সেই কমিটি ইতিমধ্যেই একটি খসড়া বিধি তৈরি করে উচ্চশিক্ষা দফতরে জমা দিয়েছে। সেই খসড়া বিধিতে দু’বছর অন্তর ছাত্র সংসদের নির্বাচন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ক্লাসে অন্তত ৭৫ শতাংশ হাজিরা, প্রচারে রাজনৈতিক দলের পোস্টার-পতাকা ব্যবহার নয় ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু এ দিন উচ্চশিক্ষা দফতরের অতিরিক্ত সচিবের চিঠিতে ছাত্র সংসদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ফের শুরু করার জন্য উপাচার্যদের যে-পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তাতে ওই বিধির উল্লেখ নেই। |