রাজ্যে পালা বদলের পরে আয়লা দুর্গতদের মধ্যে মাসিক ২ টাকা কিলো দরে চাল বিলি করার সিদ্ধান্ত নেয় নতুন সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা ঘোষণাও করেন। ঠিক হয় কুপনের মাধ্যমে পরিবার পিছু ৮ কেজি চাল দেওয়া হবে। পরে চালের পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়। কিন্তু আয়লা বিধ্বস্ত হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর সাহেবখালির শতাধিক পরিবারের কপালে চালের কুপন জোটেনি। এ ব্যাপারে তাঁরা ইতিমধ্যেই বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও বিশ্বজিৎ বসু বলেন, “চালের কুপন দেওয়ার দায়িত্ব মূলত খাদ্য দফতরের রেশন বিভাগের। এই ব্লকে ইতিমধ্যে ৩২ হাজার ৪৪ জন বেনিফিশিয়ারি চালের কুপন পেয়েছেন। যাঁরা এখনও পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তাঁদের জন্য দ্রুত কুপনের ব্যবস্থা করা হবে।”
২০০৯ সালের ২৫ মে সুন্দরবন এলাকায় আছড়ে পড়েছিল আয়লা। নদীর জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি। ভেসে গিয়েছিল প্রচুর গবাদি পশু। নষ্ট হয়ে যায় রাস্তাঘাট।
২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টকে হারিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। নতুন সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনের আয়লা বিধ্বস্ত এলাকায় দুর্গতদের জন্য ২ টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ঠিক হয়, এ জন্য দুর্গতদের মধ্যে কুপন বিলি করা হবে। কুপন প্রতি ৮ কিলো করে চাল দেওয়া হবে। পরবর্তী কালে চালের বরাদ্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও চালের কুপন ঠিকমতো বিলি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ পর্যন্ত চালের কুপন না পাওয়ায় আয়লা বিধ্বস্ত উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর সাহেবখালির শতাধিক পরিবার ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যেখানে একটি পরিবারের জন্য একটি কুপন বরাদ্দ সেখানে ওই পরিবারের একাধিক সদস্য একাধিক কুপন নিয়ে চাল তুলছে। কুপন নেওয়ার পরে মারা গিয়েছেন এমন ব্যক্তির কুপনও ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কুপনে নেওয়া চাল অনেকে বাজারে বিক্রি করছে। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে প্রকৃত দুর্গতরা যাতে চালের কুপন পায় সে ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।
স্থানীয় বাসিন্দা নীতিশ মণ্ডল, কবিতা মণ্ডল, কৃষ্ণপদ মণ্ডল বলেন, “খাদ্যমন্ত্রী যেখানে বলছেন আয়লা দুর্গতদের জন্য কম দামে চালের ব্যবস্থা করেছেন, সেখানে আমরা এখনও পর্যন্ত মাত্র একবার ২টাকা কিলো দরে চালের জন্য কুপন পেয়েছি। সামনেই পুজো। অনেকেই কুপন নিয়ে চাল তুলছেন। অনেকের বাড়িতেই একাধিক কুপন। অথচ আমাদের আর কোনও কুপন দেওয়া হয়নি।”
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘হিঙ্গলগঞ্জের ওই গ্রামের আয়লা দুর্গতরা যে অভিযোগ করেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আগামী সাতদিনের মধ্যে তাঁরা যাতে কুপন পান তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” |