রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ইছাপুর স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই বন্ধু। প্ল্যাটফর্ম থেকে একটু এগোতেই তাঁদের ঘিরে ধরল কয়েক জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী। বহু যাত্রী তখন স্টেশন চত্বর ছেড়ে ওই পথেই বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছেন। তাঁদের সামনেই সামান্য কথা কাটাকাটির পরে দুই যুবককে লক্ষ করে গুলি চালিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন এক জন। অন্য জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার রাতে ইছাপুরের এই ঘটনাকে দুষ্কৃতী দলের এলাকা দখলের লড়াই বলেই মনে
|
বান্টি বাসুদ। |
করছে পুলিশ। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ইমারতি দ্রব্যের কারবার এবং প্রোমোটারিকে ঘিরে দিন দিন বাড়ছে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে একের পর এক ঘটে চলা অপরাধ স্থানীয় মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। দিন দু’য়েক আগেই কাঁকিনাড়ায় দুষ্কৃতীরা এক মহিলা ও তাঁর ছেলেকে বাড়িতে ঢুকে গুলি করে খুন করে। জখম হন ওই মহিলার অন্য এক ছেলেও। কয়েক মাস আগে ব্যারাকপুরেরই মণিরামপুরে দুই দুষ্কৃতী-দলের বিরোধের জেরে আক্রান্ত হন স্থানীয় মানুষ, সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা। কয়েক ঘণ্টা জুড়ে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। সে বার ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নাতীত ছিল না। বস্তুত, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যের পিছনে রাজনৈতিক মদতের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বিভিন্ন দল তা নিয়ে একে অন্যকে দায়ী করলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান মেলেনি। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, দিন দিন অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়েই চলেছে। সব মিলিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মানুষ। যদিও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান দেবাশিস বেজ বলেন, “পুলিশ তৎপর আছে। বিভিন্ন ঘটনায় বহু অপরাধী ধরা পড়েছে। এলাকায় নিয়মিত টহল চলছে।”
মঙ্গলবার রাতে কী হয়েছিল ইছাপুর স্টেশনে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদ জাভেদ নামে এক যুবক কলকাতা থেকে রাতের ট্রেন ধরে নেমেছিলেন প্ল্যাটফর্মে। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর বন্ধু বান্টি বাসুদ (৩০)। স্টেশন-সংলগ্ন অরবিন্দপল্লিতে তাঁদের বাড়ি। দু’জনের বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে কিছুটা এগোতেই কয়েক জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী জাভেদ-বান্টিকে ঘিরে ধরে। কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়ে দেয়। বুকে গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান বান্টি। জাভেদকে পাঠানো হয়েছে আর জি কর হাসপাতালে। এই ঘটনায় আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, নেপাল-গোপাল নামে দুই দুষ্কৃতীর দলবলই হামলা চালিয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে বান্টিদের দলবল নেপাল-গোপালদের সঙ্গী মুন্নাকে মারধর করেছিল। তারই জেরে এই ঘটনা।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে মারামারি বেধেছে। দেবাশিসবাবু জানান, দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টা চলছে। |