একেবারে গা ঘেঁষে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে গেল মোটরবাইকটি। আর তাতে টাল সামলাতে না পেরে রাস্তার মাঝেই পড়ে গেলেন সাইকেল আরোহী এক বৃদ্ধ। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি এমন একাধিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকছেন কৃষ্ণনগরের পথচলতি মানুষ। প্রশাসনের তরফে কখনও কখনও এদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাও হয়েছে। দু’এক দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থেকেছে। তার পরে আবার শহরের রাস্তায় ঢল নেমেছে মোটরবাইকের। কারা এই বাইক বাহিনীর সদস্য? কৃষ্ণনগর পুরসভার পুরপ্রধান কংগ্রেসের অসীম সাহা বলেন, “প্রত্যেকেই পয়সাওলা বাবার ছেলে। বাবারা প্রভাবশালী হওয়ায় মানুষ ওদের কিছু বলতে পারেন না। সেই কারণেই প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে বিশেষ উদ্যোগী হয় না।” আরও বলেন, “অল্পবয়সি এই সব ছেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে হাইস্পিড মোটরবাইক। উচ্ছৃঙ্খল এই ছেলেরা নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে দাপিয়ে বেড়ায়।” |
দিনকে দিন কৃষ্ণনগর শহরে মোটরবাইক বিক্রি বাড়ছে। শহরের একটি নামী বাইক কোম্পানীর শো-রুমের মালিক সমীর পাল বলেন, “গত বছর প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৯০০টি করে বাইক বিক্রি হয়েছে। এ বছর সংখ্যাটা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে প্রায় ১৩০০ হয়েছে।” প্রতি বছর এত বিপুল পরিমান বাইক শহরের রাস্তায় নামায় দিনের ব্যস্ত সময় তৈরি হচ্ছে যানজট। কৃষ্ণনগর শহরের রাস্তা ঘাট এমনিতেই সংকীর্ণ। সরু রাস্তায় বাইকের আধিক্য মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরায় সমস্যা তৈরি করছে। বাস বা ছোট গাড়ি চলাচল আটকে যাচ্ছে বাইকের দৌরাত্ম্যে।
অনিয়ন্ত্রিত বাইকের দাপাদাপিতে শুধু পথচারীরাই দুঘর্টনার কবলে পড়ছেন না, প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক বাইকআরোহীও। দিনকয়েক আগে রাতে রেজিখালির কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুত গতির একটি বাইক উল্টো দিক থেকে আসা লরিকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই বাইকআরোহীর। শহরের বাসিন্দা বৃদ্ধ বাসুদেব সরকার বলেন, “সকাল-সন্ধ্যায় হাঁটার মতো কোনও পার্ক নেই। বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামতে হয়। কিন্তু বাইকচালকদের অত্যাচারে কোনও রাস্তাই আর নিরাপদ নয়।” |