গ্রামীণ বাজারে বাড়ছে পুজোর ভিড়
শুধু বহরমপুর, কান্দি বা লাগোয়া বীরভূমের সাঁইথিয়ার মতো শহরই নয়, ডাকবাংলা, বড়ঞা, আন্দি, কুলি, নগর, গোকর্ণ, ভরতপুর, সালার, শিমুলিয়ার মতো মফস্সলের ছোট বাজারেও উপছে পড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। পুজো যত এগিয়ে আসছে, এই সব বাজারে দোকানের সংখ্যাও বাড়ছে। খড়গ্রামের শেরপুরের ব্যবসায়ী স্বদেশ প্রামাণিকের কথায়, “আগে এই ভিড়টাই চলে যেত হাটে। এখন হাট থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষই চলে আসছেন মফস্সলের বাজারে।”
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, হাট বসে সপ্তাহে এক বা দু’দিন করে। কিন্তু সেখানে জিনিসপত্রের যা দাম, তা মফস্সলের বাজারের থেকে কম নয়। কিন্তু পরিষেবা বাজে। কান্দি মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারকনাথ প্রামাণিকের কথায়, “মফস্সলের বাজারে যদি একই দামে জিনিস মেলে, তা হলে সাধারণ ভাবে ক্রেতারা তো সেখানেই যাবেন। প্রথমত, সেই সব দোকান এখন রোজ খোলা পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, জিনিসের গুণগত মানও অনেক ভাল। হাট ক্রমশ ম্লান হচ্ছে বলে হাটের ব্যবসায়ীরা আর দামি জিনিস বিক্রি করতে আগ্রহী নন। বরং তাঁরা মফস্সলের বাজারে এসে দোকান দিয়ে ভাল জিনিস রাখছেন।” সেই কারণেই মফসসলের বাজারের আয়তনও বাড়ছে।
ব্যবসায়ী মিন্টু দাস আগে শেরপুর, পাচুন্দি, বেলডাঙার হাটে ঘুরে ব্যবসা করতেন। এখন তিনি কান্দি শহরেই জামাকাপড়ের দোকান করেছেন। পাইকারি বিক্রিও করেন। তাঁর কথায়, “হাটের প্রধান সমস্যা হল, সেখানে লোকে সস্তায় জিনিসপত্র কিনতে চান। কিন্তু জিনিসটি চান ভাল। এই দু’টো কী করে এক সঙ্গে হওয়া সম্ভব?” তা ছাড়া, তাঁর কথায়, “বড় শহর থেকে কাপড়জামা কিনে হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করার অনেক অসুবিধা রয়েছে। জিনিসপত্র খারাপও হয়ে যেতে পারে। তাই এখন দোকানে সে সব সমস্যা থেকে মুক্ত।”
চলছে কেনাকাটা। —নিজস্ব চিত্র।
ক্রেতারাও চাইছেন, কাদা মাড়িয়ে হাটে না গিয়ে বরং সন্ধ্যাবেলা কাজ থেকে বাড়ি ফিরে কাছের মফস্সল শহরে গিয়ে সপরিবারে বাজার করতে। সেখানে আলো রয়েছে। মাথার উপরে পাখা ঘুরছে। জিনিসপত্রের বৈচিত্র্যও বেশি। স্থায়ী দোকান হওয়ায় নানা রকমের কাপড়-জামা তাঁরা সেখানে রাখতে পারেন।
কৃষ্ণনাথ কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক কল্যাণাক্ষ ঘোষ বলেন, “আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে গ্রামের মানুষের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। সেই তুলনায় হাটের বিবর্তন ঘটেনি। তাই হাট তার গুরুত্ব হারিয়েছে। মূলত আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া বা নিচুতলার মানুষের কেনাকাটার উপরে এখনকার হাটগুলি টিকে রয়েছে।” এক সময়ে হাটের সঙ্গে গ্রামীণ অর্থনীতির একটা সংযোগ ছিল, এখন তা ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বলে জানান ওই শিক্ষক।
কিন্তু কেন? কল্যাণাক্ষবাবুর কথায়, “মফস্সলের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেড়ে গিয়েছে। তাই যাঁদের হাতে অর্থ রয়েছে, তাঁরা মফস্সলেই যাচ্ছেন।” জেলা চেম্বার অফ কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্যও বলেন, “আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষ দীর্ঘ দিনের পরম্পরা মেনে হাটে যান। বাজারের তুলনায় দর কম হবে ভেবে এখনও তাঁরা হাটে বিকিকিনির জন্য যান।”
ডোমকলের কুপিলা হাটের সম্পাদক মইদুল ইসলামের কথায়, “আগে সপ্তাহে দু’দিন হাট বসত। হাটের জন্য মানুষ অপেক্ষা করে বসে থাকত। এখন হাটের জন্য সেই অপেক্ষা নেই। তেমনি এলাকার মানুষের ভিড়ে গমগম করা হাটও হারিয়ে গিয়েছে। রাস্তাঘাট ভাল হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। ফলে বাজারমুখী হয়েছেন মানুষ।” তাই মফস্সলের বাজারগুলি জমে উঠছে।
কিন্তু তা বলে হাটগুলিও পিছিয়ে নেই। পুজোর মুখে ভাল বিক্রির আশায় পশরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। সেজে উঠেছে বিভিন্ন হাট। নতুন করে বাঁশের চালা বাঁধা হয়েছে। কয়েক দিন পরেই রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হবে বলে বন্দোবস্ত হয়েছে আলোরও। লালবাগ কদম শরিফের হাট মালিক মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলায় ৩০-৩২টি হাট রয়েছে। পুজো-পার্বণীর মুখে হাটগুলিতে কেনাবেচা ভালই হয়। এবার যেমন দশমীর দু’দিন পরেই ঈদুজ্জোহা। কিন্তু এখনও হাটের বেচাকেনা জমে ওঠেনি। চিন্তিত হাট ব্যবসায়ীরা।”

অপেক্ষার হাট
• মফস্সলের বাজার ক্রমশ ঝকঝকে হয়ে উঠছে।
• যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় হাটের জন্য অপেক্ষা করছেন না গ্রামের মানুষ।
• হাটে কম দামে জিনিস মেলে এমন ধারণা রয়েছে ক্রেতাদের। কিন্তু বিক্রেতারা কম দামে দিতে পারছেন না।
• হাটে পরিষেবা খারাপ। রোজ বসে না। তবু গ্রামীণ ক্রেতা আসবেন। অপেক্ষায় হাট।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.