শহর ছাড়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, “এএফসি সেমিফাইনালে না যাওয়ার কোনও কারণ দেখছি না।” সেমেন পাদাংয়ের বিরুদ্ধে গোল করে সে কথা রাখতে পারায় খুশি ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার জেমস মোগা। বুধবার সন্ধেয় শহরে ফিরে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে। |
পাদাং জয় করে শহরে। নিজের ফ্ল্যাটের সামনে মোগা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
প্রশ্ন: আপনার দেশ দক্ষিণ সুদানের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলদাতা আপনি। এ বার বাংলার প্রথম দল হিসেবে ইস্টবেঙ্গল এএফসি কাপ সেমিফাইনালে গেল। আপনার করা গোলের সুবাদেই। মোগা যেখানে, রেকর্ডও কি সেখানে?
মোগা: না না, এ সব কী বলছেন? এটা দলের সাফল্য। আমাদের কোচের পরিশ্রমের সাফল্য। কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, সকলের মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। আর রেকর্ড একটা সংখ্যামাত্র। এক গোলে হারছিলাম। সেমিফাইনালে যেতে গেলে গোল করতেই হত। বলজিতের পা ঘুরে বলটা যখন মাথায় এল, হেডটা দিয়েই বুঝে গেলাম সেমিফাইনালে চলে গিয়েছি।
প্র: তার মানে? বলটা গোলে ঢুকল কি না সেটা দেখেননি?
মোগা: হেড দিয়েই বুঝে গিয়েছিলাম এই বলটা গোলে যাচ্ছে।
প্র: বুকে হাত দিয়ে বলবেন, এই যে পাহাড়-প্রমাণ আত্মবিশ্বাস, এটা ম্যাচের বিরতিতে ছিল?
মোগা: ছিল। বিরতিতে কোচ আর অ্যালভিটো দু’জনেই বলছিল, দু’গোলে তো হারছ না। এক গোল খেয়েছ। আর গোল না খেয়ে একটা গোল শোধ করো। ওদের রক্ষণ তেমন আহামরি নয়। তোমরা গোল পাবেই।
প্র: শুনেই কি টগবগ করে ফুটতে শুরু করলেন?
মোগা: চিডি আর উগার সঙ্গে কথা বললাম। ওরাও বলল, চলো এ বার গোলের জন্য ঝাঁপাতে হবে। এত দূর এসে মন খারাপ করে বাড়ি ফেরা যাবে না। এতেই চার্জড হয়ে গেলাম। বললাম, বল দাও। গোল করবই।
প্র: দ্বিতীয়ার্ধে উইলসনের উঠে যাওয়া? না বলজিতের মাঠে আসা? কোনটা টার্নিং পয়েন্ট?
মোগা: অফকোর্স বলজিতের মাঠে আসা। ও নামতেই আমাদের মাঝমাঠ এবং আক্রমণ জোশটা ফিরে পায়।
প্র: ম্যাচ শেষে কী করলেন?
মোগা: তেমন কিছুই না। আমি, জোয়াকিম আর অ্যালভিটো একটু শপিং করে হোটেল চলে আসি। তার পর বাড়িতে বউ-ছেলেমেয়ের সঙ্গে গল্প করলাম। প্লিজ কী কথা হয়েছে সেটা জানতে চাইবেন না।
প্র: সে কি! বলজিতকে সঙ্গে নিলেন না?
মোগা: এই আপনাদের সমস্যা। বিতর্ক ঘাঁটতে আপনারা এত ভালবাসেন! বিশেষ করে এই শহরের সাংবাদিকরা। অন্য প্রশ্ন করুন। তবে তার আগে শুনে নিন, আমার সঙ্গে বলজিতের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। ও তখন অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল বলে যেতে পারেনি।
প্র: সেমিফাইনালে যাওয়াটা কতটা তৃপ্তির?
মোগা: দেখুন, আমরা কিন্তু এখনও কিছুই করিনি। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সেমিফাইনালে গেলাম মোটে। এখন আর অতীত নয়। এখন সামনে তাকাতে হবে। ফাইনাল জিতলে তবে বড় কিছু করলাম বলা যাবে। তার আগে এত কথা না বলিয়ে খেলায় মন দিতে সাহায্য করুন। ইস্টবেঙ্গলকে এএফসি কাপ দিতেই তো এই ক্লাবে আসা। কর্তাদের তো মরসুম শেষে বলতে হবে, কী পারফরম্যান্স করলাম? পেশাদারিত্ব মানে তো শুধু কী পেলাম, তা নয়। কী দিতে পারলাম, সেটাও বিবেচ্য।
প্র: বিমানবন্দরে সমর্থকরা ফুলের মালা, পুষ্পস্তবক হাতে তুলে দিচ্ছিল। এই আবেগ, ভালবাসা কলকাতায় না এলে বোঝা যেত?
মোগা: আনন্দে চোখে জল এসে যাচ্ছিল। ভারতের ফুটবল জনতার জন্য এই এএফসি কাপে সাফল্য চাই আমাদের।
প্র: কুয়েতের দলকে হারানো যাবে?
মোগা: ফুটবলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। খেলা তো হবে মাঠে। সেখানেই দেখা যাবে।
প্র: সুয়োকাকে মিস করবেন না?
মোগা: আমি জানি না ওর চোট কতটা। কাল ঘুমোতে যাওয়ার আগে প্রার্থনা করেছি, ও যেন সুস্থ হয়ে যায়। কেন জানি না মনে হচ্ছে ও সুস্থ হয়ে যাবে। এত কথা আপনার সঙ্গে বলছি, তার জন্য সুয়োকারও অবদান রয়েছে। ফাইনালে যেতে পারলে সেই সাফল্য সুয়োকাকেই উৎসর্গ করব। |