ললিত মোদীকে আজীবন নির্বাসনে পাঠাতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের লাগল মাত্র ১১ মিনিট!
মোদী বনাম ভারতীয় বোর্ডের যুদ্ধ বুধবার দুপুরে প্রায় একই সময় শুরু হয় দেশের দুই শহরে। প্রথমে দিল্লিতে। যেখানে বোর্ডের বৈঠকের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে মোদীর আইনজীবীদের আবেদনের শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টে। একই সময়ে চেন্নাইয়েও বোর্ডের বিশেষ সভা শুরু। দুপুর দু’টোর কিছু পরে সুপ্রিম কোর্ট মোদীর আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পরই সিলমোহর পড়ে যায় প্রাক্তন আইপিএল কমিশনারের ভাগ্যে।
তাঁর অন্যতম কাঁটা উপড়ে ফেলার পরও কি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন শ্রীনিবাসন? সম্ভবত না। কারণ, এক দিকে সুপ্রিম কোর্টে বিহার ক্রিকেট সংস্থার মামলা। যার শুনানি হবে শুক্রবার। সম্ভবত সে দিনই ঠিক হয়ে যাবে ২৯ তারিখ বোডের্র বার্ষিক সভায় শ্রীনি যোগ দিতে পারবেন কি না। দ্বিতীয়ত, সিবিআই চার্জশিট। পয়লা নভেম্বর সিবিআই কোর্টে হাজির হওয়ার জন্য জগন্মোহন রেড্ডির সঙ্গে শ্রীনিবাসনকেও সমন পাঠানো হয়েছে। তবে সেটা অনেক দূরের প্রসঙ্গ বলে শ্রীনিকে অতটা চিন্তায় রাখবে না। |
আর শ্রীনির প্রবল প্রতিপক্ষ? আজীবন নির্বাসিত হওয়ার পর ললিত মোদীর কী অবস্থা? সন্ধে থেকে বিভিন্ন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর তিনি লন্ডন থেকে ম্যাঞ্চেস্টার যাচ্ছেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম লিভারপুলের ফুটবল ম্যাচ দেখতে! টুইটও করেন, “অনেক হল, এ বার চললাম ম্যাঞ্চেস্টার।” তার আগে অবশ্য শ্রীনি-সহ ভারতীয় বোর্ডকর্তাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে ছাড়েননি।
বুধবার সকাল থেকে ভারতীয় বোর্ডের বৈঠক আটকে দেওয়ার নানা চেষ্টা করেছিলেন মোদী। যেমন বোর্ড সচিবকে চিঠি লিখে আবেদন, যাতে বিশেষ সাধারণ সভা করা হয় বোর্ডের বার্ষিক সভার পর। তা হলে তিনি সেখানে উপস্থিত থাকবেন। যেমন সকালেই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া। কিন্তু কোনও কিছুতেই লাভ হয়নি। মোদীর আইনজীবীদের করা এই ‘স্পেশাল লিভ পিটিশন’-এর জবাবে বিচারপতি বিষয়টি বোর্ডের আভ্যন্তরীন সমস্যা আখ্যা দিয়ে সাফ বলেন, “আপনার মক্কেল বিগ শট বলেই তাঁর বক্তব্য শুনতে হবে?” |
৩০টি অনুমোদিত সংস্থার মধ্যে শুধু জম্মু-কাশ্মীর ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধি এ দিন হাজির ছিলেন না বোর্ডের বৈঠকে। বাকি ২৯ সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রত্যেকেই ভারতীয় ক্রিকেট থেকে আইপিএলের জনকের নাম মুছে দেওয়ার ফরমান-এ সই করেন। এমনকী, শ্রীনিবাসন-বিরোধী বলে পরিচিত ইন্দরজিৎ সিংহ বিন্দ্রার পঞ্জাব ক্রিকেট সংস্থাও। বিন্দ্রা নিজে অবশ্য আসেননি শ্রীনির চেয়ার করা এই সভায়। এসেছিলেন সচিব এমপি পাণ্ডব। শ্রীনির পক্ষই নেন তিনি। হরিয়ানার প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ চৌধুরী মোদীর শাস্তির প্রস্তাব আনেন এবং সেই প্রস্তাবে ‘সেকেন্ড’ করেন ওড়িশা ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধি রঞ্জীব বিসওয়াল। তার পরই আট দফা অভিযোগে বোর্ডের গঠনতন্ত্রের ৩২ নম্বর ধারায় মোদীর শাস্তির সিদ্ধান্ত। এমন শাস্তির খাঁড়া যে তাঁর ঘাড়ে নেমে আসবে, তা মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পরই বুঝে যান মোদী। তাই বুধবার সন্ধ্যায় লন্ডনে নিজের বাড়িতে বসে দেওয়া টিভি সাক্ষাৎকারে বললেন, “প্রত্যাশিতই ছিল।” এবং পাশাপাশি নিজের গেমপ্ল্যানও পরিষ্কার করে দিলেন। ক্রিকেট ছেড়ে এ বার অন্য খেলার প্রশাসনে যোগ দিচ্ছেন। আনতে চলেছেন এক ‘গ্লোবাল লিগ’। এ যদি এক নম্বর অ্যাজেন্ডা হয়, দু’নম্বর হল, ভারতীয় বোর্ড কর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। |
সে জন্য মোদীর কথায় বিষোদ্গারই বেশি। বললেন, “এ বার আমি মুক্ত। হাটে হাঁড়ি ভাঙতে আর কোনও অসুবিধাই নেই।” তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক তছরুপের অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি করেছে অরুণ জেটলি, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, চিরায়ূ আমিনদের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। এই অভিযোগ নিয়ে মোদী বলেন, “চার বছরে আটশো কোটি ডলার এনে দিয়েছি বোর্ডকে। আমি ছেড়ে চলে আসার পর দু-দুটো ফ্র্যাঞ্চাইজি বেরিয়ে গিয়েছে। এর পরও যদি আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে, তা হলে আমার কিছু বলার নেই।”
শাস্তির সিদ্ধান্ত শোনার পর মোদীর আইনজীবীরা স্ট্র্যাটেজি ঠিক করেছেন। আদালতে এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন বলে জানান মোদীর আইনজীবী মেহমুদ আবদি। শেষ পর্যন্ত এই লড়াই কত দূর গড়ায়, এখন সেটাই দেখার। |