|
|
|
|
ভাঙা ছাদ সারানো হয়নি, ক্লাস হল স্কুলের বারান্দায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
খড়্গপুর সাউথসাইড গার্লস হাইস্কুলে ক্লাস হল স্কুলের বারান্দায়। মঙ্গলবার ছাদের চাঙড় ভাঙার পর বুধবারের চিত্রটা ছিল এমনই।
রেল শহরের সাউথসাইড এলাকায় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ স্কুল রয়েছে রেলের জমিতে। একটি সাউথসাইড হাইস্কুল অন্যটি সাউথসাইড গার্লস হাইস্কুল। দুটি স্কুলই রেলের জমি লিজ নিয়ে প্রায় ৬০ বছর ধরে চলছে। আগে পড়ুয়া সংখ্যা কম থাকলেও দিনে দিনে লাফিয়ে বেড়েছে সেই সংখ্যা। কিছু ক্ষেত্রে আগে নিজেরাই ভবন নির্মাণ করেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে নতুন করে ভবন গড়ার জন্য লাগে রেলের অনুমতি। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি বহুবার দরবার করেও মিলছে না তা। ফলে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকাও যাচ্ছে ফিরে। এর ফলে স্কুল ভবনের বাইরে চাকচিক্য থাকলেও ভিতরে ক্রমশ ভগ্নদশা প্রকট হচ্ছে। সে কথারই প্রমাণ মেলে মঙ্গলবারের ঘটনায়। ওই দিন ষষ্ঠ শ্রেণির ‘বি’ সেকশনের ছাদের চাঙর ভেঙে জখম হয় ৭ ছাত্রী। আতঙ্ক ছড়ায় স্কুলে। ঘটনাস্থলে আসেন রেলের আইডব্লিউডির ইঞ্জিনিয়াররা। তাঁরাই ষষ্ঠ শ্রেণির পরপর তিনটি সেকশনের শ্রেণিকক্ষ বিপজ্জনক বুঝে বন্ধ রাখতে বলেন। এতেই আতান্তরে পড়েন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে দিনের মতো স্কুল ছুটি দেওয়া হলেও বুধবার তিনটি ক্লাস বন্ধ করে হিমশিম খেতে হয় শিক্ষিকাদের। |
|
সাউথসাইড গার্লস হাইস্কুলে বারান্দায় ক্লাস। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
এ দিন স্কুলে গিয়ে দেখা গেল ষষ্ঠ শ্রেণির তিনটি শ্রেণিকক্ষ বন্ধ। তাদের একত্রে পঠনপাঠন হল একাদশ শ্রেণির একট ঘরে। ফলে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের ক্লাস চলল নিচের বারান্দায়। সেখানে ছিল না কোনও পাখা। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সায়ণী সিংহ, সোমিয়া মজুমদারদের কথায়, “গরমে এখানে ক্লাস করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু কি করব ম্যাডামরা বললেন। আসলে আমাদের কোনও অতিরিক্ত রুম নেই।” এখনও আতঙ্ক কাটেনি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীদেরও। ওই শ্রেণির পড়ুয়া নন্দিতা শী, সুদীপ্তা রায়, দেবলীনা দত্তরা বলে, “আমাদের ওখানে যেতে ভয় লাগছে। তাই সবাই এখানে বসেছি। দিদিরা নিচে আমাদের জন্য কষ্ট করছে খারাপ লাগছে।”
এই পরিস্থিতি কবে বদলাবে সদুত্তর দিতে পারলেন না কেউই। অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় এ ভাবেই আপাতত ক্লাস চলবে বলে জানা গিয়েছে। স্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা দেবশ্রী অধিকারী, কর্মশিক্ষার ইরা মণ্ডলরা বলেন, “আমাদেরও তো অসুবিধা হয়। দাঁড়ানোর জায়গা নেই, সাইকেল-গাড়ি রাখার জায়গা নেই। এ ভাবে ক্লাস হওয়ায় রুটিনেরও হেরফের হচ্ছে।” সমস্যার মানছেন পরিচালন সমিতির সভাপতি প্রদীপকুমার চক্রবর্তী। তবে তিনি এর দায় চাপিয়েছেন রেলের উপরেই। একই সুর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা গৌরীরাণি মাইতিরও। কিন্তু সংস্কার তো স্কুলেরই করার কথা? গৌরীদেবীর জবাব, “এই পুরনো ভবন মেরামত করতে গেলে সমস্ত ভেঙে করতে হবে। তার জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তা স্কুলের নেই।”
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (উচ্চ মাধ্যমিক) সংঘমিত্র মাকুড় বলেন, “রেল জমি বা জায়গা না দেওয়ায় নতুন নির্মাণে সমস্যা হয়েছে। সংস্কারের বিষয়ে ফান্ড সংক্রান্ত বিষয়গুলি প্রশাসনিক ভাবে জানাতে বলেছি। স্কুল জানালে এই বিষয়ে রেলের সঙ্গে কথা বলব।” রেলের জমি দেওয়ার বিষয়ে খড়্গপুরের ডিআরএম গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও আবেদন করেছেন কি না আমার জানা নেই। তা ছাড়া নতুন নির্মাণের ক্ষেত্রে রেলের সঙ্গে স্কুলের কী চুক্তি রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।” |
|
|
|
|
|