রান্নাঘরে কেন, তলোয়ারে কুকুরকে কোপাল প্রৌঢ় |
স্কুলের পাঁচিল ঘেঁষে এক টুকরো ছায়া। ভাদ্রের চড়া রোদে আড়াল খুঁজে সেই ছায়াতেই গুটিসুটি শুয়ে ছিল ‘লালি’। পিছন থেকে নিশ্চুপে এসে দাঁড়ান মধ্যবয়স্ক এক গ্রামবাসী। হাতে তাঁর ফুট তিনেক লম্বা চকচকে এক তলোয়ার। টিফিন-ছুট ছেলেপুলেদের সামনেই মুহুর্মুহু সেই ধারালো অস্ত্রের কোপ পড়তে থাকে শুয়ে থাকা সেই সারমেয়টির উপরে। এক বার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও পড়ে যায় মাদি কুকুরটা। সাধের লালিকে নিমেষে এ ভাবে ছিন্নিভিন্ন হয়ে যেতে দেখে আতঙ্কে হুড়মুড়িয়ে স্কুলে ঢুকে পড়ে ছেলেমেয়েরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কুকুর কুপিয়ে প্রৌঢ় মনোজ বিশ্বাসের অবশ্য বিশেষ হেলদোল ছিল না। তলোয়ারের রক্ত ঘাসে মুছে নির্বিকার মুখে ফিরে যান তিনি। তবে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে বিকেলের পর থেকে তিনি অবশ্য গা ঢাকা দিয়েছেন। ডোমকলের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অরিজিৎ সিংহ বলেন, “যত দূর জেনেছি, ওই ব্যক্তির বাড়িতে কুকুরটি প্রায়ই উৎপাত করত বলে তিনি কুকুরটিকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছেন। এ নিয়ে জলঙ্গি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে।”
বহু খুনের সাক্ষী থেকেছে ডোমকল। তা কখনও রাজনৈতিক। কখনও বা আটপৌরে পারিবারিক বিবাদ বা নিছকই স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার পরিণতি। তার জেরে বন্ধ, অবরোধ, ভাঙচুরেরও বহু অভিজ্ঞতা রয়েছে এলাকা বাসিন্দাদের। বুধবার দুপুরে অবশ্য লালি-খুনের প্রতিবাদে পথে নামলেন গ্রামবাসীরা।
ডোমকলের ওই কুকুর-নিধনের ঘটনায় বেজায় ক্ষুব্ধ সারমেয়-প্রেমী হিসেবে পরিচিত তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। তিনি বলেন, “সভ্য সমাজে এ ভাবে কেউ একটা প্রাণীকে হত্যা করে? আজ যে কুকুর খুন করেছে কাল সে মানুষও খুন করতে পারে।” দোষী ব্যক্তির শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। দেবশ্রীর দাবি, এ ধরনের কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রয়োজনে পুলিশকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘দেবশ্রী রায় ফাউন্ডেশন’ সবরকম সাহায্য করতেও প্রস্তুত বলে তিনি জানিয়েছেন।
স্থানীয় গ্রামবাসী থেকে সাগরপাড়া স্কুলের পড়ুয়াদের অনেকেই জানান, লালচে রঙের জন্যই সে ছিল ‘লালি’। আর পাঁচটা পথের কুকুরের মতোই এঁটো-কাঁটার খোঁজে সে বসতবাড়ির রান্নাঘরের কাছে ঘুরত। মনোজবাবুর কাছে এটাই ছিল ‘অপরাধ’।
মনোজবাবুর পড়শিরা জানিয়েছেন, মাদি কুকুরটা সন্তানসম্ভবা ছিল। খিদের জ্বালায় প্রায়ই সে এ-বাড়ি ও-বাড়ির রান্নাঘরের সামনে ছোঁক ছোঁক করত। মনোজবাবুর বাড়িতেও দু-একবার হানা দিয়েছিল সে। যে ব্যাপারটা একেবারেই পছন্দ ছিল না বদরাগী মনোজবাবুর। তাঁর প্রতিবেশীদের দাবি, এর আগেও এক বার নিজের বাড়ির কুকুরটাকে পিটিয়ে মেরেছিলেন তিনি। সেই বদ মেজাজেরই বলি হল লালি। |