পরিবেশ দূষণের জেরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। গাছপালা কেটে ফেলে গড়ে উঠছে বহুতল। আর এই সবুজ ধ্বংসের ফলে বেড়ে চলেছে বিশ্ব উষ্ণায়ণ। প্রকৃতিকে বিনাশের হাত থেকে বাঁচাতে সচেতন হতে হবে প্রত্যেক মানুষকে। তাহলেই গড়ে উঠবে সুন্দর সবুজ পৃথিবী। শুধু স্কুল-কলেজে নয়, প্রকৃতি-পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার প্রচারে এ বার সামিল হয়েছে বেশ কয়েকটি পুজো কমিটিও।
এ বছর রজত জয়ন্তীতে পা দিয়েছে বড়িশা ক্লাব। তাদের থিম ‘আদি প্রকৃতি’। মণ্ডপে ঢুকতেই চোখে পড়বে বৃক্ষরূপী এক মানবী মূর্তি। মণ্ডপের দেওয়াল জুড়ে রিলিফের কাজের মাধ্যমে দেখানো হবে মানুষের এগিয়ে চলার ইতিহাস।
কয়লা খনির অনুকরণে তৈরি হচ্ছে কসবার শক্তি সংঘ পল্লিবাসী দুর্গোৎসব সমিতির মণ্ডপ। অত্যধিক ব্যবহারের ফলে প্রকৃতির অন্যতম সম্পদ কয়লা আজ নিঃশেষ হওয়ার মুখে। এই ভাবনা থেকে গড়ে তোলা এই মণ্ডপে তুলে ধরা হবে আড়াই হাজার ফুট গভীর কয়লা খনির পরিবেশ। সেই অনুভূতিকে আরও একটু জোরদার করে তুলতে দর্শকদের জন্য থাকছে আলো লাগানো হেলমেট।
নতুনপল্লি প্রদীপ সঙ্ঘের মণ্ডপে ঢুকলে মনে হবে বেশ খানিকটা পিছিয়ে এসেছে সময়। এখানে তুলে ধরা হয়েছে সুন্দরবনের জনজীবন। স্থানীয় দেবীমন্দিরের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। প্রতিমা বনবিবির আদলে। দর্শকদের নজর কাড়তে থাকছে বাঘ, হরিণ, কুমীর ও নানা পশুপাখির মডেল।
অজয়নগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এ বারের থিম ‘ক্ষুদ্র পৃথিবী এক বৃহৎ খাঁচা’। সুস্থ জীবনধারণের জন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ, উভয়েরই প্রয়োজন। তাই নিজেদের স্বার্থেই প্রত্যেকের উচিত পরিবেশ সংরক্ষণ। সেই ভাবনাকে মাথায় রেখেই এ বারের পুজো। এক বৃহৎ খাঁচার আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। একটি গাছের নীচে থাকছেন মাতৃরূপী দেবীপ্রতিমা, যিনি তাঁর সন্তানদের অতি আদরের সঙ্গে বড় করে তুলছেন। সন্তানদের প্রতীক হিসেবে মণ্ডপে প্রচুর পাখির ব্যবহার করা হবে।
বিশ্ব উষ্ণায়ণের ভয়াবহতাকে থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে নিউ আলিপুর প্রোগ্রেসিভ হিন্দুস্থান ক্লাব। এখানে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অনুকরণে। ভিতরে চোখে পড়বে লাভাস্রোত। তার আগুনের শিখার মধ্যে থাকবে দুর্গা প্রতিমা।
প্রায় একই রকম ভাবনা হরিদেবপুর আদর্শ সমিতির পুজোতেও। মণ্ডপের বাইরের অংশে দেখানো হবে প্রকৃতির প্রশান্ত রূপ। ভিতরে তার ক্ষয়িষ্ণু রূপ। ঢুকতেই চোখে পড়বে পৃথিবীর রং লাল, বিষাক্ত গ্যাসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছ, ঝরে যাচ্ছে পাতা। আর মাঝখানে প্রকৃতির সবুজ ছায়ায় থাকবে দেবী প্রতিমা।
নানা আয়োজনে আগামী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার বার্তা নিয়ে আসছে এই উৎসবের শহর। |