সমবায়ের অডিট বন্ধ, ঋণ দেওয়া
যাবে না বলে জানিয়ে দিল ব্যাঙ্ক
পীযূষ নন্দী • আরামবাগ |
আসন্ন আলুর মরসুমে হুগলি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে আরামবাগের বাছানরী কৃষি উন্নয়ন সমিতির চাষিদের। গত চার বছর অডিট হয়নি সমিতির। অগস্টের গোড়াতেই কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে সমিতিকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, চার বছর অডিট না হওয়ায় সমিতির সদস্যদের আর ঋণ দেওয়া সম্ভব নয়। এর জেরে বিপদে পড়েছেন সমিতির অন্তর্ভুক্ত প্রায় ৮০০ চাষি।
ব্লক সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের জুলাইয়ে সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনাকে কেন্দ্র করে বাছানরী-সহ আরামবাগের বেশ কয়েকটি কৃষি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মহকুমা থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত কয়েক দফা তদন্তের প্রায় দু’বছর পরে ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসনের তরফে আরামবাগ থানায় ১৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়। অন্য একটি সমবায় সমিতির এক কর্তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তিন জন জামিন পান। পুলিশ জানায়, অন্য অভিযুক্তেরা পলাতক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাছানরীর তৎকালীন সভাপতি, সম্পাদক ও ম্যানেজার। আরামবাগ ব্লক সমবায় দফতর সূত্রের খবর, এই সব কারণে ২০০৯-১০ আর্থিক বছর থেকে বাছানরী কৃষি উন্নয়ন সমিতির কোনও অডিট হয়নি। তা সত্ত্বেও গত বছরও বিশেষ ব্যবস্থা করে ধান ও আলুর মরসুমে দু’দফায় বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় ওই সমিতির চাষিদের।
নিয়ম মতো, সেপ্টেম্বরের গোড়া থেকে প্রায় দু’মাস ধরে চাষিদের ঋণ দেওয়ার কথা ব্যাঙ্কের। সেপ্টেম্বর মাসে এখনও পর্যন্ত কাউকেই ঋণ দেওয়া যায়নি। হাতে মাত্র এক মাস বাকি। ফলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে চাষিদের কৃষিঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে। অভিযোগ, বাছানরী সমবায়ের কর্তারা অফিসে যাচ্ছেন না। অধিকাংশ দিন বন্ধ থাকছে ওই সমিতির অফিস। দ্রুত অডিট করে সমবায় চালানোর দাবিতে প্রায় প্রতিদিনই আরামবাগ ব্লক সমবায় দফতরে বিক্ষোভ করছেন চাষিরা। ব্লক সমবায় দফতরের সার্কেল ইন্সপেক্টর সুজন দে বলেন, “অডিট নিয়ে সমিতিটির সমস্যার কথা জেলা দফতরে জানানো হয়েছে। জটিলতা কাটানোর চেষ্টা চলছে।” বিষয়টি আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরাকেও জানানো হয়েছে। বিধায়ক বলেন, “অডিট নিয়ে কেন টালবাহানা হচ্ছে, তা খোঁজ নেওয়া হবে।”
বাছানরীর সমবায়ের বর্তমান সম্পাদক সুকুমার পালের অভিযোগ, ২০১১ সাল থেকেই জেলা অডিট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ২০১২ সালের মাঝামাঝি এক ব্লক কো-অপারেটিভ অডিটরকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। সুকুমারবাবুর দাবি, “সেই অডিটর নানা টালবাহানা করে কাজ সম্পূর্ণ করেননি। আরও দু’জন অডিটরকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। কিন্তু কিছুই হয়নি। অথচ আমরা বলেছিলাম, ত্রুটি-বিচ্যুতি-দুর্নীতি থাকলে, তা বলুন। কিন্তু অডিটটা অন্তত শেষ করুন।” জেলা অডিট দফতরের সহকারী অধিকর্তা মন্দিরা সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, “অডিটর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ওই কাজে আরও দু’জনকে লাগানো হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যেই অডিটের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারব।”
কিন্তু তার পরেও চাষিরা ঋণ নিতে পারবেন কিনা, সে প্রশ্ন উঠছেই। এ নিয়ে জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার নজির আছে।
ওই সমবায় ব্যাঙ্কের উন্নয়ন আধিকারিক অচিন্ত্য গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “দু’বছরের বেশি অডিট বাকি থাকলে সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই নিয়ম। কিন্তু চাষিরা তো ঋণ শোধ করেছেন। তাঁরা যাতে অসুবিধায় না পড়েন, সে বিষয়টি আমরা দেখছি।” |