সম্পাদকীয় ২...
মোকাবিলা
রাজ্যপাল তথা আচার্য এম কে নারায়ণন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কঠোর হাতে বিশৃঙ্খলা মোকাবিলার পরামর্শ দিয়াছেন। তাঁহার কথার যৌক্তিকতা অস্বীকার করা কঠিন। যাদবপুর এবং কলিকাতা, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তথা কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদী ছাত্রদের মোকাবিলায় কঠোর হইলে ঘেরাওয়ের দুর্দৈব যে এড়াইতে পারিতেন, তাহার সম্ভাবনা প্রবল। বুঝিতে অসুবিধা নাই, তাঁহারা শিক্ষক ও ছাত্রের পারস্পরিক সম্পর্কের সংবেদনশীলতার প্রতি মন দিয়াছিলেন, যাহাতে সেই সম্পর্কের মর্যাদা রক্ষিত হয়, তাহা নিশ্চিত করিতে চাহিয়াছিলেন। কঠোর মোকাবিলা বলিতে যেহেতু কার্যত পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য লওয়া বোঝায়, তাঁহারা সেই পরিস্থিতি এড়াইতে চেষ্টা করিয়াছেন, বস্তুত তাহাতে সফলও হইয়াছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে পুলিশের প্রবেশ চিরকালই অবাঞ্ছিত বলিয়া গণ্য হয়, শুধু এ দেশে নয়, যে কোনও দেশেই। ছাত্রছাত্রীদের উপর পুলিশি বলপ্রয়োগ বিশেষ ভাবে গর্হিত বলিয়া মনে করা হয়, তাহাও অত্যন্ত স্বাভাবিক।
কিন্তু তাহার পরেও আচার্য নারায়ণনের মন্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ থাকিয়া যায়। তাহার কারণ, ছাত্রছাত্রীরা যদি শৃঙ্খলা বা শোভনতার মৌলিক শর্তগুলি না মানেন, তাহা হইলে তাঁহাদের মোকাবিলায় কঠোর হইবার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। সংবেদনশীলতা বা সংযমকে যদি কেহ দুর্বলতা বলিয়া গণ্য করে, তবে তাহার পরিণাম অত্যন্ত বিপজ্জনক হইতে পারে। কেবল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা শিক্ষকদের পক্ষে বিপজ্জনক নহে, সমগ্র প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই বিপজ্জনক। শৃঙ্খলার মান এক বার নষ্ট হইতে শুরু করিলে তাহা কোথায় নামিতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ তাহার সাক্ষী। ষাট-সত্তরের দশকের বিশৃঙ্খলা হইতে এক ধরনের স্থিতিতে পৌঁছাইতে বিপুল সময় লাগিয়াছিল। গত দুই বছরে শিক্ষার পরিসরে শৃঙ্খলা নষ্ট হইবার দুর্লক্ষণগুলি যে ভাবে স্পষ্ট হইতেছে, তাহা স্বভাবতই ভীতিপ্রদ। রাজ্যপাল নিজে প্রশাসনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করিয়াছেন। এই অবক্ষয়ের গতিপ্রকৃতি তাঁহার অজানা নহে। তাঁহার উদ্বেগ অত্যন্ত স্বাভাবিক।
দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বিভিন্ন কারণে এবং পরিপ্রেক্ষিতে গোলযোগ ঘটিয়াছে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশের মধ্যে শিক্ষক তথা পরিচালকদের প্রতি এক ধরনের অ-মানবিকতার প্রকাশ দেখা গিয়াছে। ইহা উদ্বেগজনক। এক দিকে যেমন এই ধরনের পরিস্থিতিতে কঠোর হওয়া জরুরি, অন্য দিকে তেমনই আবশ্যক দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি সাধন। যে সব অভিযোগ বা বিরোধ হইতে অশান্তির সূত্রপাত, সেগুলির মূল কারণ পর্যালোচনা করিলে অনেক সময়েই দেখা যাইবে যে, সময় থাকিতে পারস্পরিক আলোচনার পথে পরিস্থিতির মোকাবিলা সম্ভবপর ছিল, বস্তুত সহজসাধ্য ছিল। অথচ সমস্যা একটি সংকটের পর্যায়ে না পৌঁছনো অবধি কেহ আগাইয়া আসে না, তৎপর হয় না। সমাজের অন্যান্য নানা ক্ষেত্রের মতোই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বিরোধ মীমাংসার স্বাভাবিক বন্দোবস্তগুলি বহুলাংশে বিনষ্ট হইয়াছে। তাহার পিছনে বামফ্রন্ট জমানার অবদান বিপুল। দলতন্ত্রের ছকে সমস্ত সম্পর্ক এবং লেনদেনকে বাঁধিয়া ফেলিবার নিরবচ্ছিন্ন উদ্যোগ সমস্যা মোকাবিলার স্বাভাবিক পথগুলিকে ক্রমশ অবরুদ্ধ করিয়া দিয়াছে। নূতন জমানাতেও সেই দলতন্ত্রের প্রভাব হইতে মুক্তি হয় নাই। ইহা দুর্ভাগ্যের বিষয়। উদ্বেগেরও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.