সম্পাদকীয় ১...
সমাজ ও বিচার
রিয়তি আদালতকে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার সমান্তরাল ও প্রতিদ্বন্দ্বী একটি বন্দোবস্ত রূপে শনাক্ত করিয়া তাহার বৈধতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলিয়া দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলা শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্ট পুনর্গ্রহণ করিয়াছে। চার মাস আগে এই মর্মে আনীত মামলাটি তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি খারিজ করিয়া দিয়াছিলেন। এখন আবার সেটি গৃহীত হইল। শরিয়তি আদালত ইসলামি ন্যায়বিচারের শরিয়তি ধারণার ভিত্তিতে গঠিত, যেখানে কাজি কিংবা মুফ্তিরা মূলত পারিবারিক বিবাদ-বিসম্বাদ (যথা বিবাহ-বিচ্ছেদ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার ইত্যাদি) বিষয়ে মতবিরোধের নিষ্পত্তি করিয়া থাকেন। কোনও ফৌজদারি অপরাধের বিচার এই আদালতে হয় না, কেবল দেওয়ানি মামলাগুলিই নিষ্পত্তির জন্য আসে। ভারতীয় সংবিধানে সংখ্যালঘুদের জন্য দেওয়ানি মামলায় পৃথক ব্যক্তিগত আইন প্রয়োগের যে-অধিকার অনুমোদিত, তাহার অঙ্গ হিসাবেই শরিয়তি আদালতগুলি সক্রিয়। সর্বোচ্চ আদালত অতঃপর সেই অধিকারটি পর্যালোচনা করিবে কি না, তাহা একটি বড় প্রশ্ন।
প্রসঙ্গত, শরিয়তি আদালতে মুসলিম মহিলারা প্রায়শ ন্যায়বিচার পান না, এই অভিযোগ বহুশ্রুত। অভিযোগ, তাঁহাদের প্রতি পিতৃতান্ত্রিক সমাজ যে বৈষম্যমূলক আচরণ করে, শরিয়তের রায়েও তাহা কমবেশি প্রতিফলিত হইয়া থাকে। লক্ষণীয়, সামাজিক বঞ্চনার প্রতিকার হিসাবেই তাঁহারা দেশের নানা স্থানে মহিলা শরিয়তি আদালত স্থাপন করিয়াছেন, যেখানে নিগৃহীত ও প্রতারিত মুসলিম মহিলারা মহিলা বিচারপতিদের সামনে অকপটে এবং নির্দ্বিধায় নিজেদের অভিযোগ, ক্ষোভ ও বঞ্চনার কথা তুলিয়া ধরিতে পারেন। ‘ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন’-এর নেত্রীরা এই মহিলা পরিচালিত শরিয়তি আদালতের সপক্ষে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড-এর অনুমোদনও আদায় করিয়াছেন এবং চেন্নাই, ভোপাল, পুণে ও মুম্বইয়ে ইতিমধ্যেই এমন আদালত চালু হইয়াছে। অনগ্রসর সংখ্যালঘু সমাজে ইহা এক বড় অগ্রগতি। সফিয়া নিয়াজ ও জুবেদা খাতুনের মতো নেত্রীরা আপন সম্প্রদায়ের নারীদের উপর পুরুষ-প্রভুত্বের অবসান ঘটাইয়া তাঁহাদের ক্ষমতায়নের জন্য সচেষ্ট। নারীর সমানাধিকারের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করিতে যে অপরিমেয় বাধা ও বিরোধিতা তাঁহাদের অতিক্রম করিতে হইয়াছে, তাহা অনুমান করা কঠিন নয়।
এই প্রেক্ষিতেই শরিয়তি আদালতের বৈধতা বা সাংবিধানিকতা যাচাইয়ের আবেদন পুনর্গ্রহণের সিদ্ধান্তটি তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করিবার প্রয়োজনীয় উদ্যোগটি আপাতত হিমঘরেই। নির্বাচনী রাজনীতির গতিপ্রকৃতি যেরূপ, তাহাতে এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হওয়া দূরস্থান, নূতন করিয়া শুরু হইবার সম্ভাবনাও অত্যুজ্জ্বল নহে। এমনকী ভারতীয় জনতা পার্টিও সম্ভবত তাহা জানে। কিন্তু এই সূত্রে একটি বৃহত্তর প্রশ্ন উঠিবে। ‘সমান্তরাল’ বিচারব্যবস্থা অনুচিত হইলেও পারিবারিক বা সামাজিক বিবাদ যদি সমাজ নিজে মীমাংসা করিয়া লইতে পারে, তাহাতে উৎসাহ দেওয়াই কি যুক্তিসংগত নহে? সেই সামাজিক মীমাংসার পথটি সর্বদা ধর্মীয় বিধানে বাঁধানো হইবে, তাহার কোনও কারণ নাই। বস্তুত, ধর্মীয় বিধান সচরাচর অনুদার, আধিপত্যবাদী, সুতরাং যথার্থ ন্যায়ের পরিপন্থী। কিন্তু যে কোনও ধরনের সামাজিক মীমাংসার ক্ষেত্রেই এই সমস্যা প্রাসঙ্গিক হইতে পারে। এবং তাহার সদুত্তর সমাজকেই নির্ধারণ করিতে হইবে। ইহা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এই সতর্কবাণী মনে রাখিয়া বলা চলে, বিবাদের মীমাংসা যথাসম্ভব সমাজের ভিতরেই সাধিত হইলে মঙ্গল। মঙ্গল সমাজেরও, বিচারব্যবস্থারও। সমস্ত সমস্যাকে আইন আদালতের এক্তিয়ারে আনিবার প্রয়োজন নাই। সর্বোচ্চ আদালত এই বিষয়ে বিচার বিবেচনা করিয়া আপন মূল্যবান মতামত প্রদান করিবেন কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.