|
|
|
|
সরকার বাড়ির দু’শো বছরের পুজো জাতপাত থেকে মুক্ত
স্বপন সরকার • পটনা |
ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের ছোঁয়ায় এই পুজোর আয়োজন। এই পুজো জাতপাতের ধার ধারে না। নিম্ন বর্ণের মানুষ অগ্রাধিকার পায় এই পুজোতেই। তাদের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠে প্রতিমার পূর্ণাবয়ব মূর্তি। তারপরেই শুরু হয় পুজো।
দুশো বছর আগে জাতপাতের ঊর্ধ্বে গিয়ে ভাগলপুরের সরকার বাড়ির দুর্গা পুজো হয়ে উঠেছিল সত্যিকারের সর্বজনীন। এই বাড়ির অনেকেই আজ দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে থাকলেও দুর্গাপুজোয় ভাগলপুরে তাঁদের আসা চাই। তাতেই ভরে ওঠে সরকার বাড়ির ঐতিহ্যপূর্ণ পুজোর অনুষ্ঠান।
পুজো শুরু হয়েছিল ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে। হাওড়ার বাসিন্দা যদুনাথ সরকার নৌকোয় করে পাড়ি দিয়েছিলেন বারাণসীর উদ্দেশে। যাওয়ার পথে রসদ সংগ্রহের জন্য ভাগলপুরে তাঁদের নৌকো নোঙর করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবদের সঙ্গে যদুবাবুর সেখানে পরিচয় হয়। তারপর ভাগলপুরেই থেকে যাওয়া। যদুবাবু ঘাঁটি গাড়লেন ভাগলপুরে। বসবাস করতে গেলে দৈনন্দিন কাজের জন্য ধোপা, নাপিত-সহ নানা বর্ণের মানুষের প্রয়োজন হয়। একটি তালবাগান কেটে সেখানে গড়ে তুললেন সকলের জন্য বসতি। কিছুদিনের মধ্যেই যদুবাবু হয়ে উঠলেন সেখানকার বাসিন্দা।
যদুনাথবাবু আক্ষরিক অর্থেই ছিলেন জাতপাত বিরোধী। এই পুজোকে সেই সময় থেকে জাতপাতের ঊর্ধ্বে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ধোপা-নাপিত থেকে শুরু করে সকলেই এই পুজোতে অংশগ্রহণ করতে শুরু করলেন। সারা বছর বেদীতে থাকে দুর্গা প্রতিমার কাঠামো। সেই কাঠামো বেদী থেকে নীচে নামিয়ে আনেন নিম্ন বর্ণের মানুষরা। প্রতিমা তৈরির পরে সেটিকে বেদীতে তুলে আনেন নিম্নবর্ণের মানুষ। তাঁর বংশধরদের কথায়, “তাদের ছোঁয়াতেই প্রতিমা ‘মা’ হয়ে ওঠেন।” আজও সেই নিয়ম মেনে আসছেন পরিবারের সদস্যরা। বিনয় রজকের কথায়, “বংশপরম্পরায় আমরা এই পুজোয় অংশগ্রহণ করে থাকি। আমরাই কাঠামো নামানো এবং প্রতিমা তোলার কাজ করি। তাতে অচ্ছ্যুৎ হওয়ার কোনও ব্যাপার আমরা কোনও দিন দেখিনি।”
পারিবারিক পুজো চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৬০-এর দশকে পরিবারের সদস্যরা অকটি অছি পরিষদ গঠন করেন। ট্রাস্ট্রির সদস্য গৌতম সরকার বললেন, “আমাদের পরিবারের পুজোকে সামাজিক ন্যায়ের পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। তাঁদের ভাবনা-চিন্তা ছিল উদার এবং প্রাসঙ্গিক।” |
|
|
|
|
|