|
|
|
|
মেঘালয়ে রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য ভবন সংস্কারের উদ্যোগ
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
রাষ্ট্রপতি ভবনের চিঠি পৌঁছনোর ন’মাস পর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য শিলং-এর ব্রুকসাইড বাংলো সংরক্ষণে তৎপর হল মেঘালয় প্রশাসন।
অক্টোবরে ব্রুকসাইডের পাশেই বিধানসভার অনুষ্ঠানে থাকবেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তার আগেই ওই বাংলোয় মেরামতির কাজ শেষ করতে চায় রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। বাড়িটির সংরক্ষণে ছ’বছর ধরে লড়াই চালিয়েছেন মালবিকা বিশারদ। অভিযোগ ছিল, বারবার আবেদন করলেও ‘রবীন্দ্র ভবন’ অথবা ‘রবীন্দ্র গবেষণাগার’ তৈরির উদ্যোগ নেয়নি রাজ্য সরকার। বাংলোর চত্বরে কবিগুরুর মূর্তি স্থাপন, বাড়ির বাইরের দেওয়ালে রঙ ছাড়া কোনও কাজ হয়নি।
১৯১৯, ১৯২৩ এবং ১৯২৭ সালে তিন দফায় উত্তর-পূর্বের গুয়াহাটি, শিলং, আগরতলায় গিয়েছিলেন কবি। প্রথমবার ছিলেন উম-শির্পি নয়নজুলির তীরে কে সি দে-র ব্রুকসাইড বাংলোয়। দ্বিতীয়বার, জিৎভূমির বাড়িতে। তৃতীয়বার, লাইটুমরার আপল্যান্ড্স-এ ‘সলোমন ভিলা’য়। পরে, ওই বাড়ির নাম হয় সিধলি প্যালেস। কিন্তু, অনেক আপত্তি স্বত্ত্বেও ভেঙে দেওয়া হয় সিধলি প্যালেস।
সংরক্ষণের অভাবে জীর্ণ ব্রুকসাইডও। মালবিকাদেবী জানান, ওই বাড়িতে বসেই কবি কয়েকটি কবিতা লেখেন। অনুবাদও করেন কয়েকটি। বাড়িটির বর্ণনা রয়েছে ‘শেষের কবিতা’য়। |
ব্রুকসাইড বাংলো। —নিজস্ব চিত্র। |
১৯৯০ সালে ওই বাড়িতে ‘রবীন্দ্র আর্ট গ্যালারি’ তৈরি হলেও, তা বন্ধ হয়ে রয়েছে। গ্যালারিতে ভাঙাচোরা কাঠামো, পুরনো রঙের কৌটো ছাড়া কিছু নেই। ভিতরে যাওয়ার সুযোগ পান না পর্যটকেরা। ব্রুকসাইড বাংলো সংরক্ষণের বিষয়ে বারবার অনুরোধ করলেও রাজ্য সরকারের দিক থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, বিশ্বভারতীর দ্বারস্থ হন মালবিকাদেবী। চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রীর দফতর, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক, এনআইসি-কেও। এরপরই, ব্রুকসাইডের সামনে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি স্থাপন করা হয়।
গত বছর নভেম্বর মাসে তিনি চিঠি পাঠান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে মেঘালয়ের মুখ্য সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ব্রুকসাইড সংরক্ষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি এবং মালবিকাদেবীকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানানোর কথা তাতে বলা হয়েছিল। মালবিকাদেবীর প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়িত করার বিষয়টিও দেখতে বলা হয়।
মেঘালয়ের সংস্কৃতিমন্ত্রী ক্লেমেন্ট মারাক জানিয়েছিলেন, এ নিয়ে সংস্কৃতি দফতরের অধিকর্তাকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংস্কৃতি অধিকর্তা মাৎসিউডর ওয়ারনোংব্রির বক্তব্য ছিল, “রাষ্ট্রপতির চিঠির জবাব দেওয়ার এক্তিয়ার আমার নেই। ওই চিঠিটি প্রধান সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।” ব্রুকসাইড সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, “২০০৯-১০ সালে ওই ভবনে সংরক্ষণের কাজের জন্য ৭০,৩০,৩৫০ টাকা মঞ্জুর করা হয়। পূর্ত দফতর ওই কাজ অনেকটাই শেষ করে ফেলেছে। ভিতরের কাজও দ্রুত হয়ে যাবে।”
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক মেঘালয়ের সংস্কৃতিমন্ত্রী ক্লেমেন্ট মারাককে দ্রুত ব্রুকসাইড সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা জানায়। এরপরই ওই ভবনের কোথায়, কী ভাবে সংস্কার করা সম্ভব তা নিয়ে মালবিকাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেন মন্ত্রী। ভবনের পিছনের ফাঁকা জমিতে রবীন্দ্র ভবন ও রবীন্দ্র গবেষণা কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত করা হয়। সে জন্য খরচ হবে ১০০ কোটি টাকা। রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত পালঙ্ক কলকাতার দক্ষ কারিগরকে দিয়ে সংরক্ষণ করা হবে। |
|
|
|
|
|