|
|
|
|
ভোটের টানে দু’বছর আগেই বেতন কমিশন
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বেতন কমিশন গড়া হয় মোটামুটি দশ বছর অন্তর। কিন্তু এ বার তা হচ্ছে দু’বছর আগেই। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের বেতন ও ভাতার কাঠামো পুনর্গঠনের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন গড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দিল ইউপিএ সরকার। সামরিক বাহিনীগুলিকে এর আওতায় রাখা হচ্ছে না। তাদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর বক্তব্য, “২০১৬-র ১ জানুয়ারি থেকেই যাতে নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা যায়, সে জন্যই দু’বছর হাতে রেখে সরকার আজ এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল।” অর্থমন্ত্রী এই যুক্তি দিলেও বলার অপেক্ষা রাখে না, ভোটের কথা মাথায় রেখেই মনমোহন সরকার আগাম এই সিদ্ধান্ত নিল। লোকসভা ভোটের আর মাস ছয় বাকি। রয়েছে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনও।
উৎসবের মরসুমকে সামনে রেখে ক’দিন আগেই ১০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এ বার যোগ হল সপ্তম বেতন কমিশনের সুখবর। কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী এতে লাভবান হবেন প্রায় ৫০ লক্ষ কর্মচারী এবং ৩০ লক্ষ পেনশনভোগী। শুধু তা-ই নয়, এর পর রাজ্য স্তরেও কর্মচারীদেরও বেতন বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হল।
অনেকেরই মতে, লোকসভা ও পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে সরকার এখন সমাজের সব অংশের জন্য আর্থিক সুরাহার আশ্বাস দিয়ে দিয়ে একটা ‘ফিল গুড’ বাতাবরণ তৈরি করতে মরিয়া। কারণ, অত্যাবশ্যক জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্ষুব্ধ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের এই শ্রেণিতেই ধরা হয়। তাঁদের উষ্মা প্রশমিত করার জন্য সরকার এই পদক্ষেপ করল বলে অনেকে মনে করছেন। বিজেপি ও সিপিএম নেতারা সরাসরিই অভিযোগ করছেন, ভোটের আগে বেতন কমিশন গড়ে সরকারি কর্মচারীদের লুব্ধ করার চেষ্টা করছেন মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধীরা। বিরোধী দলগুলির আরও বক্তব্য, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা প্রচুর। ফলে দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে এই ঘোষণা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, গত বারের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই তিন সামরিক বাহিনীর জন্য এ বার পৃথক বেতন কমিশন গঠন করবে কেন্দ্র। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ রূপায়ণের সময়ই সেনাবাহিনীর কর্তারা তাঁদের বেতন কাঠামো নিয়ে প্রবল ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। বক্তব্য ছিল, তাঁদের বেতন ও পেনশন কাঠামোয় অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। তিন বাহিনীর প্রধান এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির কাছে লিখিত দাবিও জানান। সরকার সেই দাবি এ বার মেনে নিতে চলেছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলি আজ নয়া বেতন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী সংগঠনের সভাপতি কে কে এন কুট্টি বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও আমাদের কিছু বক্তব্যও রয়েছে। পে কমিশনের সুপারিশ ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে রেট্রোস্পেকটিভ ভাবে দিতে হবে। কারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেতন কাঠামো পাঁচ বছর অন্তর পরিবর্তন হয়। সেই ব্যবস্থার সমতুল করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো।” এ ছাড়া বর্তমান মহার্ঘ ভাতার অন্তত পঞ্চাশ শতাংশকে মূল বেতনের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এ সব দাবির কতটা কি কমিশনের সুপারিশে প্রতিফলিত হবে সে পরের কথা, ভোট-ময়দানের হিসেব কিন্তু চূড়ান্ত হয়ে যাবে অনেক আগেই। |
|
|
|
|
|