এ বার পারো-কলকাতা রুটে সস্তার উড়ান ‘তাসি’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তিরিশ বছরের একাধিপত্য ঘুচতে চলেছে ভুটানের রাজার তৈরি বিমানসংস্থার। তা হতে চলেছে রাজপরিবারের সদস্যদের হাত ধরেই। এই প্রথম ভুটানের ড্রুক বিমানসংস্থার প্রতিযোগী আসতে চলেছে আকাশে। বর্তমান রাজার দূর সম্পর্কের কাকাই শুরু করছেন এই উড়ান। এত কাল ভুটানের পারো বিমানবন্দর থেকে কলকাতা পর্যন্ত একমাত্র ড্রুক-কেই উড়তে দেখা যেত। এ বার দেখা যাবে তাসি-কেও।
ব্যাঙ্কককে ঘাঁটি করে তাসি বিমানসংস্থা পারো-কলকাতা উড়ান চালাতে চায়। যার অর্থ, পারো-কলকাতা রুটে ড্রুক-এর একাধিপত্যের অবসান। ফলে কলকাতা থেকে ভুটান যাওয়ার টিকিটও সস্তায় মিলবে বলে আশা পর্যটন-বিশেষজ্ঞদের। কলকাতা থেকে উড়ান শুরু করতে মাস দুয়েক লাগবে বলে তাসি সূত্রে খবর।
ড্রুক এখন রাজপরিবারের অধীনে নেই। ভুটানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে অন্য সব সংস্থার মতো ড্রুক-এর শেয়ারও বাজারে ছাড়া হয়েছে। ভুটানের অনেক ব্যবসায়ীই এখন সেই বিমানসংস্থার অংশীদার। তবুও সংস্থাটি পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজপরিবারের মতামত আজও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
এ দিকে, দাশো উগেন দোরজি শুরু করেছিলেন তাসি-র ব্যবসা। তিনি ছিলেন ভুটানের প্রাক্তন রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুকের ছোট মামা। ভুটানে রাজতন্ত্র চলাকালীনই দাশো উগেনের ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে ওঠে। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর তিন ছেলে তপগাল দোরজি, ওয়াংচুক দোরজি এবং কাজি উগেন দোরজির হাতে তুলে দেওয়া হয় ব্যবসার ভার। তাঁরা জিগমে সিংগে-র মামাতো ভাই বা এখনকার রাজা জিগমে কেশর ওয়াংচুকের কাকা। ভুটানের নামকরা জ্যাম-জেলি-স্কোয়াশ থেকে শুরু করে পেট্রোলিয়াম, সিমেন্ট, ইস্পাত-- সর্বত্র এখন তাসি-ই প্রধান ব্যবসায়ী সংস্থা। একাধিক ভারতীয় সংস্থাতেও লগ্নি রয়েছে এই সংস্থার। এ বার আন্তর্জাতিক উড়ান চালাতে আগ্রহী তারা।
আপাতত ঠিক হয়েছে, অক্টোবরে ভুটানের শৈল শহর পারো থেকে সরাসরি ব্যাঙ্ককে উড়ান শুরু করবে তারা। এ জন্য ফ্রান্সের তুলুজ থেকে আনা হচ্ছে একটি এয়ারবাস ৩২০ বিমান। সংস্থার এক অফিসারের কথায়, “এই বিমান সেপ্টেম্বরের শেষেই চলে আসবে। ব্যাঙ্কককে ঘাঁটি করে চালানো হবে বিমান। আপাতত ব্যাঙ্কক-পারো। পরে ব্যাঙ্কক-কলকাতা-পারো।” কলকাতা থেকে উড়ান চালাতে ভারতের বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন’-এর অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে তারা।
১৯৮৩ সালে ড্রুক বিমানসংস্থার সূচনা হয়। পারো থেকে প্রথম কলকাতাতেই উড়ান শুরু করেছিল তারা। সেই থেকেই চলেছে একচেটিয়া কারবার। এক সময়ে রাজপরিবারের অধীনে থাকা এই বিমানসংস্থা এখন পারো থেকে সপ্তাহে ছ’দিন কলকাতায় উড়ান চালায়। সপ্তাহে দু’দিন আবার কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুরও যাতায়াত করে। এ বার সপ্তাহে সাত দিনই ব্যাঙ্কক-কলকাতা-পারো রুটে উড়ান চালাবে তারা। ভাড়া কম রাখলেও বিমানের ভিতরে খাবার পরিবেশন করা হবে। কলকাতা থেকে পারো যাতায়াত করতে ড্রুক সংস্থার বিমানে এখন মাথা-পিছু খরচ পড়ে ১৩ হাজার টাকার বেশি। জানা গিয়েছে, ওই রুটে তাসি ড্রুক-এর চেয়ে কম ভাড়ায় টিকিট বিক্রির পরিকল্পনা করেছে। ঠিক হয়েছে, কলকাতা-ব্যাঙ্কক রুটেও তুলনায় কম ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করবে তাসি। সে ক্ষেত্রে এই রুটে উড়ান চালানো ইন্ডিগো, জেট, তাই এবং এয়ার এশিয়া বিমানসংস্থাও জোরদার প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। |