|
|
|
|
|
|
|
|
আমি গৃহবধূ। স্বামী শিক্ষকতা করেন। দুই মেয়ে। আগামী ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ওদের বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে। সে জন্য সোনার ব্যবস্থা করে রাখতে চাই এখন থেকেই । কী করব? গোল্ড ইটিএফ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
সুচন্দ্রা চক্রবর্তী, নদিয়া
ভারতীয় বিয়েতে যেহেতু সোনা অপরিহার্য, তাই আগে থেকেই তার ব্যবস্থা করে রাখা সত্যিই খুব জরুরি। বিশেষ করে সোনার দামে যেখানে এখন বেশ ওঠা-পড়া চলছে। তবে ২০১৬ ও ১৭ আসতে এখনও প্রায় ৩-৪ বছর দেরি। সুতরাং আপনার মেয়েদের বিয়ের জন্য সোনার বন্দোবস্ত করতে হাতে কিছুটা সময় রয়েছে। আপনার কথা মতো গোল্ড ইটিএফ-সহ সোনা কেনার আরও কয়েকটি রাস্তা সম্পর্কে কিছু কথা জানিয়ে রাখছি। কোন পথে হাঁটবেন সেটা অবশ্যই আপনার সিদ্ধান্ত।
ভারতে বেশির ভাগ মানুষই সোনা কেনেন গয়না হিসাবে। এটাই এ দেশের সব থেকে প্রচলিত ও জনপ্রিয় রীতি। বেশ সুবিধাজনকও। তবে এটাকে মোটেই সোনা কেনার সেরা রাস্তা বলা যায় না। কারণ গয়নায় কিছু সোনা নষ্ট হয়। তার উপর তৈরির মজুরি বাবদ খরচ আছে। সব মিলিয়ে গয়না হিসাবে সোনা কিনলে বেশ বড় লোকসান বইতে হয়। যা ন্যূনতম ১০% থেকে শুরু করে বিশেষ ও জটিল নকশার গয়নায় ৩৫% পর্যন্তও হতে পারে।
আর একটি পথ স্বর্ণমুদ্রা বা কয়েন কেনা। ব্যাঙ্কে পেয়ে যাবেন কয়েন। কিন্তু এটাকেও খুব উৎকৃষ্ট মাধ্যম বলব না। কারণ এ ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম হিসাবে ব্যাঙ্ক প্রায় ৫-১০% নেয়। তার উপর, যখন-তখন কয়েনগুলি ভাঙানোর সুযোগও কম। কারণ ব্যাঙ্ক কয়েন বিক্রি করে, কিন্তু কেনে না। আবার গয়নার দোকান বা পাড়ার স্যাকরার কাছে তা বিক্রি করা যেতে পারে। তবে অনেক সময়ে সেটাও বেশ ঝামেলার।
সোনার বাট অবশ্য সোনা কেনার ভাল মাধ্যম। তবে বাট কেনার জন্য ন্যূনতম যে-পরিমাণ টাকা লাগাতে হয়, তা সাধারণ লগ্নিকারীদের পক্ষে অনেকটা বেশি। আপনার অসুবিধা না- থাকলে ভেবে দেখতে পারেন।
এ বার বলি গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা গোল্ড ইটিএফ-এর কথা। এটিকে সোনা কেনার বেশ আকর্ষণীয় পথ বলে মনে হয় আমার। বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড গোল্ড ইটিএফ বাজারে ছাড়ে। ওই তহবিলে সংগৃহীত টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা সোনা কিনে রাখে। আপনি যতটা সোনা কিনবেন, তার উপর ভিত্তি করে পাবেন ইটিএফ ইউনিট। অনেক সংস্থা এক গ্রাম সোনা কেনার জন্য একটি ইউনিট দেয়। অনেকে তার থেকে কম।
যাই হোক, সোনা কেনার জন্য গোল্ড ইটিএফ-কে তুলনায় সহজ ও নিরাপদ মাধ্যম বলা যেতে পারে। খরচও কম পড়ে। কাজেই স্বল্প মেয়াদে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা হাতে না -রেখে, গোল্ড ইটিএফে লাগানো যায়। আবার যেহেতু শেয়ার বাজারে তা লেনদেনও করা যায়, তাই প্রথমেই আপনাকে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। গোল্ড ইটিএফ শেয়ার বাজার থেকে কিনতে পারেন ব্রোকারের মাধ্যমে। তা নিরাপদে জমা থাকবে ডি- ম্যাট অ্যাকাউন্টে। চাইলে তা ভাঙিয়ে সোনা নিতে পারেন। আবার বাজার ভাল থাকলে ইটিএফ বেচে অনেকটা টাকাও একলপ্তে হাতে পেতে পারেন।
এ ছাড়াও আছে কিছু গোল্ড সেভিংস ফান্ড। এর মাধ্যমেও মাসে মাসে লগ্নি করতে পারেন। এতে সোনার দাম ওঠা-নামার আঁচ ততটা গায়ে লাগবে না।
আমি রাজ্য সরকারি কর্মী। বেতন পাই ২৮ হাজার টাকা। নিজের বাড়ি আছে। সেখানে বাবা, মা থাকেন। আমি অনেক দূরে স্ত্রীর সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে থাকি। পরিবারে আমি একাই রোজগার করি।
আমার জমা-খরচের হিসাবটা এ রকম— প্রতি মাসে সংসার চালানোর খরচ ১১,৫০০ টাকা। পিএফে জমে ১,৫০০ টাকা। প্রতি ত্রৈমাসিকে এলআইসি-র জন্য ৬,৪৫৬ টাকা প্রিমিয়াম দিতে হয়।
এই অবস্থায় আগামী দিনে প্রতি বছর আমি ৫০ হাজার টাকার এনএসসি কিনতে চাই। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে একটি বাড়ি তৈরি করারও ইচ্ছে আছে। জমি অবশ্য কেনা নেই। গত বছর আমি কর দিয়েছি প্রায় ৯০০০ টাকার মতো।
শোভন হাজরা
আপনার আর্থিক পরিকল্পনা একেবারে সঠিক পথে চলেছে। প্রতি বছর এনএসসি কেনার ভাবনাকে আমি পুরো মাত্রায় সমর্থন করছি। বরং আমি বলব, পারলে মাসে একটি করে ৫,০০০ টাকার এনএসসি কিনতে থাকুন। এটা করতে পারলে ৬ বছর পর থেকে প্রতি মাসে একটি এনএসসি-র মেয়াদ শেষ হবে এবং সুদ-সমেত মোটা টাকা হাতে পেতে থাকবেন নিয়ম করে। ৮০সি ধারায় করও সাশ্রয়ও হবে এতে।
আর একটি ভাল বিষয় হচ্ছে, পিএফের টাকা, এলআইসি প্রিমিয়াম, এনএসসি-র লগ্নি এই সব মিলিয়ে আপনার ১ লক্ষ টাকা করছাড়ের ব্যবস্থাও প্রায় এখান থেকেই হয়ে যাচ্ছে। তবে এনএসসি-তে যে-সুদ পাওয়া যায়, তাতে কিন্তু কর দিতে হয়। আমার পরামর্শ, প্রত্যেক বছর যে-সুদ জমা পড়বে, তা ওই বছরের মোট আয়ের সঙ্গে যোগ করে আয়কর দেখান। এতে চাপ কম পড়বে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মোট সুদের উপর করের বোঝা কিন্তু তুলনায় বেশি হবে।
আর বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা সম্পর্কে বলব, এখন থেকেই একটা আলাদা তহবিল গড়তে শুরু করুন। আপনার সমস্ত খরচ ও লগ্নি (এনএসসি কেনার প্রস্তাবিত খরচ ধরে) হিসাবের পর আমি দেখছি মাসে এখনও বাড়তি প্রায় ৭,৮০০ টাকা হাতে থাকছে। এর মধ্যে ৩,৫০০ টাকা প্রতি মাসে রেকারিং ডিপোজিট করতে পারেন। আর বাকি ৩,৫০০ টাকা ৩-৫ বছর শেয়ার বাজারে বিভিন্ন ধরনের শেয়ারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে (ডাইভার্সিফায়েড ইক্যুইটি ফান্ডে) খাটাতে পারেন। এগুলির থেকে মোট যে-টাকা হাতে আসবে, তা কাজে লাগান বাড়ি কিনতে। যতটা কম পড়বে, ঋণ নিয়ে পূরণ করবেন। তখন আপনার বাড়তি খরচ বলতে শুধু মাসে মাসে ওই ঋ
ণের ইএমআই গোনা। জমিই হোক বা সঞ্চয়। আপনার যে কোনও বিষয়-সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য লিখুন। ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না। |
|
|
|
|
|