কুবের উবাচ
অসিত রায় (৩৫) • স্ত্রী (৩০) • ছেলে (২.৫) • মা (৬৩) • বাবা (৭০)
বেসরকারি সংস্থার কর্মী • অফিসে পিএফ, পেনশন, স্বাস্থ্যবিমা (৪ লক্ষ), জীবনবিমা (১০ লক্ষ) রয়েছে
স্ত্রী গৃহবধূ • থাকেন ভাড়া বাড়িতে • নিজেদের বাড়ি তৈরি হচ্ছে • ছেলের পড়াশোনা শুরু আগামী বছর
শহরাঞ্চলে বাড়ি কিনতে আগ্রহী • ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত • চান সচ্ছল অবসর

মাসে নিট আয়
৭০,০০০
খরচ (মাসে)
• সংসার চালাতে ২২,০০০
• বাড়ি ভাড়া ৮,০০০
• বাড়ির মাসিক কিস্তি ২০,৫০০ (২০ বছরের)
• গাড়ির মাসিক কিস্তি ৬,১২৫ (৬ বছরের)
• স্বাস্থ্যবিমা ১,০৮৩ (বিমা মূল্য ৫ লক্ষ)
সঞ্চয় (মাসে)
• পিএফ ৪,০৮৭
• জীবনবিমা ২,৬৮২
(বিমা মূল্য নিজের ৩ লক্ষ, স্ত্রীর ১ লক্ষ, ছেলের ২ লক্ষ)
সম্পদ
• পিএফ ৫,৮০,০০০
• এনএসসি ৩,০০,০০০
• স্থায়ী আমানত ১,০০,০০০
• সেভিংস অ্যাকাউন্ট ৩,০০,০০০
• শেয়ার ৬০,০০০

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
অসিত চিঠিতে জানতে চেয়েছেন তাঁর লগ্নির পরিকল্পনা সঠিক কিনা। এ ছাড়া, বিভিন্ন কারণে ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয়ে ভুগছেন তিনি। তাঁর প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, হ্যাঁ। তিনি একেবারে ঠিক দিকেই হাঁটছেন। তবে এটাও সত্যি যে, তাঁর চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অসিত একক মালিকানার সংস্থায় কাজ করেন। এই ধরনের সংস্থায় অনেক সময়ে এমন কিছু সমস্যা হয়, যা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। তবে অসিতের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বয়স দেখে বলতে পারি, আগামী দিনে কোনও সমস্যা হলে নতুন চাকরি খুঁজে নিতে অসুবিধা হবে না।
এ বার আসি অসিতের বিভিন্ন লক্ষ্যের বিষয়ে:

লক্ষ্য ১: ছেলের উচ্চশিক্ষা
উপায়
অসিতের ছেলের বয়স আড়াই বছর। আগামী বছর থেকে পড়াশোনা শুরু হবে। ছেলের কলেজে পড়ার আগে হাতে এখনও প্রায় ১৫ বছর সময় রয়েছে। এ জন্য আপনি এখন থেকেই মাসে ৩,০০০ টাকা করে কোনও সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি)-এ লগ্নি শুরু করুন। দু’টি আলাদা ফান্ডে এই লগ্নি করতে পারলে ভাল হয়। এর সাহায্যে আপনি প্রায় ১২.৫৩ লক্ষ টাকা জমাতে পারবেন (১০% রিটার্ন ধরে)। যা দিয়ে আপনার তো প্রয়োজন মিটবেই। তার থেকে যা বাকি থাকবে, সেই অর্থ অবসরের জন্যও সঞ্চয় করতে পারবেন।

লক্ষ্য ২: অবসরের সঞ্চয়
উপায়
• পিএফের টাকা অবসর জীবনের জন্য রাখুন। তবে তার বাইরেও একটা পিপিএফ চালু করে রাখা উচিত। প্রতি বছর এখানে ন্যূনতম ৫০০ টাকা রাখতে পারবেন। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে বেতন বাড়লে সেখানে আরও বেশি টাকা রাখুন। পিপিএফের সুবিধা হল রিটার্ন-সহ লগ্নির পুরোটাই করমুক্ত।
• অফিসের জীবন বিমা মিলিয়ে অসিতের মোট বিমা মূল্য ১৩ লক্ষ টাকা। এখন এই টাকা যথেষ্ট মনে হলেও, খেয়াল রাখতে হবে, তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ফলে তাঁর কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কিন্তু ওই টাকায় সংসারের সবার খরচ চালানো কঠিন। যে কারণে আমি তাঁকে একটি টার্ম পলিসি করে রাখার পরামর্শ দেব।
পাশাপাশি, অসিতের স্ত্রী এবং ছেলের নামেও বিমা রয়েছে। কিন্তু আমার মতে, উপার্জনকারীর নামেই এক মাত্র জীবন বিমা করা উচিত। কারণ তাঁর কিছু হলেই পরিবার আর্থিক দিক থেকে সমস্যায় পড়বে। তাই আগামী দিনে এক জন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে কোন পলিসি চালাবেন, কোনটি বন্ধ করবেন, তা ঠিক করুন।
• ৫ বছর ধরে প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকার যে এনএসসি করেছেন আপনি, তা অবশ্যই চালিয়ে যান। অবসরের কাছাকাছি সময়ে সেই টাকা স্থায়ী আমানতে রাখতে পারেন।
• অবসর নেওয়ার আগে অসিতের হাতে এখনও অনেকটা সময় রয়েছে। তাই এই সময়ে এসআইপি-র মাধ্যমে লগ্নি চালিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
তবে এই প্রসঙ্গে একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। তিনি জানিয়েছেন, শেয়ার বাজারে লগ্নি করে তাঁর ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে এখন তিনি সেই বিনিয়োগের বেশির ভাগটাই তুলে নিয়ে ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্টে রেখে দিয়েছেন।
অসিতের না-হয় এখানে টাকা খাটিয়ে লোকসান হয়েছে। কিন্তু এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা অত্যধিক ঝুঁকির ভয়েই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চান না। এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে আমি বলতে পারি, শেয়ার বাজারে এককালীন লগ্নি করলে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এসআইপি-র মাধ্যমে করলে কিন্তু সেই ভয় কমে যায় অনেকটাই। একটি ভাল ফান্ড বেছে নিয়ে অনেক দিন ধরে অল্প অল্প করে এখানে বিনিয়োগ করতে পারলে বাজারের ওঠা-পড়া তেমন গায়ে লাগে না।

লক্ষ্যের বাইরে
নিজের বেশ কিছু পরিকল্পনা ও লক্ষ্যের কথা আমাদের জানিয়েছেন অসিত। তবে তার বাইরেও বেশ কয়েকটি বিষয়ে আমি পরামর্শ দিতে চাই।
তাঁর বাড়ি তৈরি হচ্ছে। যা শেষ হতে দু’তিন বছর সময় লাগবে (প্রায় ২০১৬)। বাড়ি হাতে পেলে তখন আর তাঁদের ভাড়া থাকতে হবে না। সে ক্ষেত্রে বাড়ির ভাড়া ৮,০০০ টাকা বাঁচবে। ওই টাকা তিনি তখন অন্যান্য খাতে লগ্নি করতে পারেন।
• অসিতের নিজের ও তাঁর পরিবারের জন্য যথেষ্ট স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে। তবে বাবা-মার বয়স হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসার জন্য সঞ্চয় করতেই হবে। ব্যাঙ্কে ওই ৮ হাজার টাকা ১ বছরের রেকারিং ডিপোজিটে রাখুন। সেখান থেকে যে-অর্থ পাবেন, তা কোনও লিক্যুইড ফান্ডে লগ্নি করুন। বাবা-মার চিকিৎসার ক্ষেত্রে যা কাজে লাগবে। এ ভাবে চালিয়ে যান।
• সেভিংস অ্যাকাউন্টে ৩ লক্ষ টাকা ফেলে না-রেখে, বরং তার মধ্যে থেকে ২ লক্ষ টাকা কোনও ব্যাঙ্কে ফ্লেক্সি টার্ম ডিপোজিটে রাখুন। এতে এক দিকে যেমন প্রয়োজনে টাকা তুলে নেওয়ার সুবিধা থাকবে। তেমনই, সেভিংস অ্যাকাউন্টের তুলনায় অনেকটাই বেশি সুদ পাওয়া যাবে।
• আপাতত শেয়ারে যে-টাকা রয়েছে, তা ধরে রাখুন। বরং চাইলে অল্প অল্প করে ফের শেয়ার বাজারে লগ্নি করতে পারেন। তবে তার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
• যত দিন গৃহঋণ চলবে, তত দিনের জন্য ওই ঋণের অঙ্কের সমান একটি টার্ম পলিসি করিয়ে রাখুন। এতে তাঁর কিছু হলে মাথার উপর থেকে ছাদ সরবে না। যদি এই বিমা একান্ত না- করতে চান, সে ক্ষেত্রে ‘স্টেপ ডাউন পলিসি’-র সুযোগ নিন। ফলে যত বছর যাবে, প্রিমিয়ামও ততই কমবে।
দ্বিতীয় বাড়ি কেনা
অসিতের ইতিমধ্যেই একটি বাড়ির ঋণের কিস্তি চলছে। তাই দ্বিতীয় বাড়ি কেনার সামর্থ্য আপাতত তাঁর নেই। তবে গাড়ি ঋণ আগে শোধ করলে ও ভবিষ্যতে বেতন বাড়লে এই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে পারেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.