জীবনবিমা
অক্টোবর থেকে নতুন শর্ত নিয়ে পলিসি

বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী, পুরনো পলিসিগুলি ৩০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে আর বিক্রি করতে পারবে না কোনও জীবনবিমা সংস্থা। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঠিক কী রকম দাঁড়াবে?
জীবনবিমা পলিসির ক্ষেত্রে বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইআরডিএ) নতুন কিছু নিয়ম চালু করেছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, পলিসিগুলিতে বেশ কিছু নতুন শর্ত যোগ করতে হয়েছে। ৩০ তারিখের পর থেকে ওই সব শর্ত সম্বলিত পলিসিই বিক্রি করতে হবে বিমা সংস্থাগুলিকে।
এখন যে-প্রকল্পগুলি বাজারে বিক্রি হয়, সেগুলি আইআরডিএ নির্দেশিত পুরনো শর্তের ভিত্তিতে তৈরি। ৩০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সেগুলি আর বিক্রি করা যাবে না।
আমরা ইতিমধ্যেই নতুন নির্দেশিকা মেনে বিভিন্ন শর্ত যোগ করেছি এবং নতুন পলিসির খসড়া আইআরডিএ-র কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েও দিয়েছি। শীঘ্রই সেগুলি আমাদের হাতে ফিরে আসবে। অক্টোবর থেকে শুধু সেগুলিই বাজারে পাওয়া যাবে।

নতুন নির্দেশিকায় মূলত কী বলা হয়েছে? ওই নির্দেশিকা জারি করার উদ্দেশ্য কী?
গ্রাহকদের স্বার্থ আরও ভাল ভাবে সুরক্ষিত রাখা। এটাই নতুন নির্দেশিকার প্রধান উদ্দেশ্য। সেখানে বিমা পলিসির থেকে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া-সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ন্যূনতম মাপকাঠি বেঁধে দিয়েছে আইআরডিএ। গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় বিমা সংস্থাগুলিকে সেই সব মাপকাঠি মেনে চলতেই হবে।
একটু যদি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেন যে ঠিক কী রকম বদল আসতে চলেছে, তা হলে ভাল হয়।
যেমন ধরুন, কোনও গ্রাহক মাঝপথে তাঁর পলিসি বন্ধ করে দিলে, তত দিন পর্যন্ত লগ্নি করা টাকার একটা অংশ ফেরত পান। এত দিন বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী সেই ফেরত দেওয়ার অঙ্কটা স্থির করত। কিন্তু নতুন নির্দেশিকায় নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া আছে, পলিসি বন্ধ করে দিলে বিমা সংস্থা ওই গ্রাহককে কমপক্ষে কত টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। কোন শ্রেণির পলিসির ক্ষেত্রে কত টাকা পাওয়া যাবে, তা-ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কী কী ঝুঁকি বহন করতে হবে সংস্থাকে।
মোদ্দা কথা, আইআরডিএ-র নতুন নির্দেশিকায় বিমার শর্ত এবং তা কার্যকর করার পদ্ধতিতে আরও স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন, বিমা সংস্থাগুলিকেই এখন পরিষেবা করের ভার বইতে হয়। সংস্থাগুলি কিন্তু ওই কর মেটায় গ্রাহকের প্রিমিয়াম থেকেই। কিন্তু গ্রাহক জানতে পারেন না পরিষেবা কর হিসাবে তিনি কত দিলেন। নতুন ব্যবস্থায় প্রিমিয়াম এবং পরিষেবা করের পরিমাণ আলাদা করে দেখাতে হবে।
পুরনো পলিসি যাঁদের আছে, তাঁদের এ বার কী হবে?
যাঁরা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুরনো পলিসি কিনবেন, তাঁদের পলিসি যেমন চলছিল তেমনই চলবে। পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রিমিয়াম ও অন্যান্য শর্তেরও কোনও বদল হবে না।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারতে অতি সামান্য মানুষ বিমার আওতায় রয়েছেন। আরও বেশি মানুষকে এর আওতায় আনার জন্য দেশের বৃহত্তম বিমা সংস্থা হিসাবে জীবনবিমা নিগমের ভূমিকা কী?
এটা ঠিক যে, ভারতে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩.৯৬% মানুষের জীবনবিমা আছে। এটা অবশ্যই বাড়াতে হবে। কিন্তু বিদেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা টানা ঠিক নয়। কারণ ইউরোপ বা আমেরিকার তুলনায় ভারতে মাথাপিছু আয় অনেক কম। দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন একটা বড় অংশ। তবে তাঁদের বিমার আওতায় আনার জন্য কেন্দ্রীয় এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার নানা রকম প্রকল্প চালু করেছে।
পাশাপাশি অল্প আয়ের মানুষের জন্য জীবনবিমা নিগমের নিজস্ব কিছু প্রকল্পও আছে। যেমন ধরুন, মাইক্রো ইনশিওরেন্স। এই প্রকল্পে তুলনায় অনেক কম প্রিমিয়াম দিয়ে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিমা পলিসি করানো যায়। আধা-শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় অ-সরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে আমরা বিপণন করি সেগুলি।
পাশাপাশি গোষ্ঠী বিমাতেও কম প্রিমিয়াম দিয়ে বিমা পলিসি করা যায়।
এ ছাড়া, জীবনবিমা নিগমই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় ‘আম আদমি বিমা প্রকল্প’ রূপায়ণের দায়িত্বে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এখানে প্রিমিয়াম মেটাতে গ্রাহক সরকারি অনুদান পান। ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে আমরা ১ কোটি মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় আনতে পেরেছি। এই বছরেও নতুন অন্তত ১ কোটি মানুষকে এই সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

আম আদমি বিমা প্রকল্পে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়?
এটি মূলত দারিদ্রসীমার নীচের মানুষদের জন্যই। কিছু ক্ষেত্রে সীমার সামান্য উপরে বসবাসকারীরা সুবিধা নিতে পারেন। ইটভাটার কর্মী, তাঁতি, ভূমিহীন কৃষক-সহ ৪৮টি পেশার মানুষকে বিমার সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে বিমাকৃত অঙ্ক ৩০ হাজার টাকা। প্রিমিয়াম বছরে ২০০ টাকা। এর মধ্যে ১০০ টাকা কেন্দ্রের সামাজিক সুরক্ষা তহবিল থেকে দেওয়া হয়। বাকি ১০০ টাকা দিতে হয় গ্রাহককে। অনেক ক্ষেত্রে এই ১০০ টাকা বা তার কিছু অংশও সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার বা কোনও এনজিও দেয়। এর আওতায় স্বাভাবিক মৃত্যু হলে গ্রাহকের পরিবার পান ৩০ হাজার টাকা। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার।
কিছু পলিসি আছে শুধু ভূমিহীন কৃষকদের জন্য। এঁদের প্রিমিয়ামের ৫০% মেটায় কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার।
এ ছাড়া বিশেষ কিছু পেশার ক্ষেত্রে যেমন, তাঁতিদের জন্য বিশেষ ধরনের পলিসিও চালু হয়েছে। প্রিমিয়াম দিতে হয় ৪৭০ টাকা। ৩৯০ টাকা পাওয়া যায় কেন্দ্রের সামাজিক সুরক্ষা এবং অন্য কিছু তহবিল থেকে। বাকি ৮০ টাকা দেন গ্রাহক। অনেক সময়ে তা সংশ্লিষ্ট রাজ্য দিয়ে দেয়। গ্রাহকের স্বাভাবিক মৃত্যু হলে ৬০ হাজার টাকা, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে দেড় লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। তিনটি পলিসিতেই দুর্ঘটনার কারণে অঙ্গহানি হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সন্তানের পড়াশোনার জন্যও খরচ মেলে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সর্বাধিক দু’টি সন্তানের জন্য মাসে ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়।
এগুলি সবই টার্ম পলিসি। মানে, শুধু জীবনের ঝুঁকির দিকটিই সুরক্ষিত করা হয়েছে। বিমার মেয়াদ শেষের পর টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নেই।

আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষই গ্রামে বাস করেন। ওই সব অঞ্চলের মানুষের দরজায় জীবনবিমা পলিসি পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
দূর গ্রামে শাখা খোলার পরিকল্পনা করেছে জীবনবিমা নিগম। নাম ‘মিনি ব্রাঞ্চ’। এক একটি শাখা চালাবেন এক থেকে দু’জন কর্মী। পূর্বাঞ্চলে এই অর্থবর্ষে এ রকম মোট ১০০টি শাখা চালু করতে চাই। ৬৫টি চালুও হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে নতুন ৬,০০০ এজেন্টও নিয়োগ করব। এঁদের অনেকেই গ্রামে কাজ করবেন। বর্তমানেও ১.৩৫ লক্ষ এজেন্টের অনেকেই গ্রামের।

ব্যবসার দিক থেকে জীবনবিমা নিগমে পূর্বাঞ্চলের স্থান কোথায়?
চলতি অর্থবর্ষে এ পর্যন্ত দেশ জুড়ে নিগম যে-ব্যবসা করেছে, তাতে নতুন পলিসি বিক্রির ক্ষেত্রে পূর্বাঞ্চল প্রথম (১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩ লক্ষ ৬৫ হাজার ৭৫৮টি।)। নয়া প্রিমিয়াম সংগ্রহের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় (১ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা)। আশা করি বছরের বাকি সময়েও ওই স্থান ধরে রাখতে পারব।

লেখক ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি
(মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.