|
|
|
|
|
|
|
সম্পত্তি কর |
সম্পদে সরকারের ভাগ
জানেন কি আয়করের আওতায় না-এলেও সম্পত্তি কর দিতে হতে পারে
আপনাকে? তা না-দিলে কিংবা তার রিটার্ন জমা না-করলে, পেতে হতে
পারে কড়া শাস্তিও? লিখছেন অমিতাভ গুহ সরকার |
|
সম্পত্তি সমাজে সম্মান আনে। কেউকেটা হওয়া যায়। আবার ভবিষতের জন্য তা সুরক্ষাও দেয়। তাই সম্পত্তি আহরণে মানুষ সদা ব্যস্ত। তবে বেশি সম্পত্তি আবার ‘দুশ্চিন্তা’ও ডেকে আনতে পারে। যেমন, সম্পত্তি কর বা ওয়েলথ্ ট্যাক্স।
এমন অনেকে আছেন, যাঁদের বড় মাপের সম্পত্তি থাকলেও এই করের বিষয়টি একেবারেই জানেন না। ফলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সম্পত্তি কর দেওয়া হয় না। জমা করা হয় না ওয়েলথ্ ট্যাক্স রিটার্ন। তাই ইচ্ছাকৃত না-হলেও কর এড়ানোর ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা।
আয়কর নিয়ে যত লেখালেখি হয়, সম্পত্তি কর নিয়ে তা হয় না বলেই এই ব্যাপারে মানুষের জ্ঞান সীমিত। আয়কর আদায়ের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতর যতটা সক্রিয়, সম্পত্তি করের ব্যাপারে ততটা সক্রিয় না-হওয়াও সেই সীমিত জ্ঞানের অন্যতম কারণ।
ভাল আয়ের সুবাদে এবং সম্পত্তি কেনার নানা সুবিধা থাকায় আজকাল অনেকেই একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমি কিনছেন। এ ছাড়া আছে গাড়ি। লগ্নির গন্তব্য সোনাও। গত কয়েক বছরে দ্রুত বেড়েছে সম্পত্তির দামও। ফলে বর্তমান মূল্যের নিরিখে অনেকেই এখন মোটা সম্পত্তির মালিক। অঙ্কের বিচারে এঁদের অনেকেই পড়েন সম্পত্তি করের চৌহদ্দিতে। তাই সবার সুবিধার জন্য এর উপর চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
সম্পত্তি কর কী?
সম্পত্তি কর দিতে হয় নিট সম্পত্তির উপর। করের হার নিট সম্পত্তির এক শতাংশ। এই কর ধার্য হয় নিট সম্পত্তির মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা ছাড়ালে তবেই। সম্পত্তি করের হিসেব করা হয় আর্থিক বছরের শেষ দিনের বাজার দর অনুযায়ী। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, একমাত্র অনুত্পাদক সম্পদই (যে-সম্পত্তি থেকে কোনও আয় হয় না) সম্পত্তি করের আওতায় আসে। যেমন বাড়ি, গাড়ি, সোনা, নগদ টাকা ইত্যাদি। তবে বাড়ি-গাড়ি ভাড়া খাটালে, তা আর সম্পদের আওতায় আসে না।
নিট সম্পদ
মূল্যায়নের দিন (ভ্যালুয়েশন ডেট) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সব সম্পত্তির মোট মূল্য থেকে ওই সব সম্পদ সংক্রান্ত সব দায় বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হল তাঁর নিট সম্পদ। এই মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা ছাড়ালে, তবেই সেই বাড়তি অঙ্কের উপর সম্পত্তি কর ধার্য হবে এক শতাংশ হারে। |
|
করের আওতায়
যে-সব সম্পদ এই করের আওতায় পড়ে, সেগুলি হল
• একটি বসতবাড়ি অথবা ৫০০ বর্গ মিটার বা তার কম মাপের জমি বাদে অন্যান্য বাড়ি এবং জমি।
• মোটরগাড়ি, ইয়ট, নৌকা, বিমান।
• গয়না, আসবাব, সোনা/ রুপো/ প্ল্যাটিনাম বা অন্যান্য দামি ধাতুর তৈরি বাসন ও অন্যান্য দ্রব্য।
• শহরে অবস্থিত জমি।
• ৫০,০০০-এর বেশি নগদ টাকা।
কোনও সম্পদ আপনার টাকায় অন্যের নামে কেনা হলে তা আপনার সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হতে পারে। শিশুর নামে কোনও সম্পদ থাকলে তা তার বাবা/মায়ের সম্পদের সঙ্গে যুক্ত করা হতে পারে। উত্পাদক সম্পদ অর্থাত্ যে-সব সম্পদ থেকে আয় আসার সম্ভাবনা আছে, তা সম্পদ করের আওতায় আসে না। যেমন শেয়ার, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি ইত্যাদি। যে বছরের জন্য সম্পদ করের হিসেব করা হয়, সেই বছরের শেষ দিন হল সম্পদ মূল্যায়নের দিন। মূল্যায়ন কী ভাবে করা হবে, তার নিয়ম আইনে বলা আছে।
করের আওতার বাইরে
• বসতবাড়ি অথবা যে-বাড়ি ব্যবসা কিংবা পেশার কাজে ব্যবহার হয়।
• যে বাড়ি বছরে অন্তত ৩০০ দিন ভাড়া দেওয়া হয়।
• ব্যাঙ্ক ফিক্সড ডিপোজিট, গোল্ড ইটিএফ, সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।
রিটার্ন না-দিলে শাস্তি
আয়করের মতো উপযুক্ত ক্ষেত্রে সম্পত্তি করের রিটার্ন দাখিল করাও বাধ্যতামূলক। রিটার্ন দাখিল করতে হয় ফর্ম বি এ পূরণ করে। রিটার্ন দাখিলের তারিখ আয়করের মতোই, অর্থাত্ শেষ দিন হল ৩১ জুলাই।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যদি সম্পদ কর দেওয়া না-হয় ও রিটার্ন ফাইল করা না-হয়, তবে আইনে ভাল রকম শাস্তির ব্যবস্থা আছে। সম্পদ ঘোষণায় কারচুপি করা হলে প্রযোজ্য করের ৫ গুণ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। ইচ্ছাকৃত ভাবে করফাঁকি দেওয়া প্রমাণিত হলে জেলও হতে পারে।
আয়কর দফতরই সম্পত্তি করের বিষয়টি দেখাশোনা করে। আয়কর রিটার্ন দেখে দফতরের কোনও অফিসারের মনে হলে, তিনি করদাতার কাছে সম্পত্তির বিশদ তথ্য চাইতে পারেন।
ব্যবসা বা পেশা থেকে যাঁদের আয় ২৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি, তাঁদের এ বার থেকে আয়করের রিটার্নে সম্পদের তথ্যও দিতে হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখা উচিত যে, কারও মোট আয় করযোগ্য না হলেও, উপযুক্ত ক্ষেত্রে কিন্তু তিনি সম্পদ করের আওতায় পড়তে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে তাঁর নিট সম্পদের মূল্য ৩০ লক্ষ টাকার বেশি হতে হবে।
সম্পত্তি একত্রিকরণ (ক্লাবিং)
এক জনের টাকায় কেনা সম্পত্তি পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে ছড়িয়ে রাখা হলে, সেই সব সম্পত্তির মূল্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্পত্তির সঙ্গে যুক্ত করা হতে পারে কর নির্ধারণের জন্য। উপযুক্ত মূল্য ছাড়া কোনও সম্পদ স্বামী-স্ত্রী, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং পুত্রবধূকে হস্তান্তর করা হলে, তার উপর করের দায় বর্তাবে সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তির উপর।
অর্থাত্ দেখা যাচ্ছে, সম্পত্তি করের ব্যাপারে সজাগ না-থাকলে, ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা থাকছে। যাঁরা লগ্নির জায়গা হিসাবে একাধিক ফ্ল্যাট অথবা জমিতে টাকা ঢালবেন, তাঁরা আগে এই ব্যাপারটি মাথায় রাখলে ভাল করবেন।
গত কয়েক বছরে সম্পত্তি এবং সোনার অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে ৩০ লক্ষ টাকার ছাড়কে বেশ কম বলে মনে করা হচ্ছে। এই কথা মাথায় রেখে প্রত্যক্ষ কর বিধিতে (ডিটিসি) করমুক্ত সম্পদের মাত্রা বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তবে প্রত্যক্ষ করবিধি এখনও পর্যন্ত অথৈ জলে। কবে তা আইনে পরিণত হবে, তার কোনও ঠিক নেই।
|
লেখক ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|