পুজোর মুখে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) কর্মী ও আধিকারিকদের ছুটি নিয়ে সংস্থার ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের জারি করা নির্দেশ ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ওই নির্দেশ পরিবর্তনদের দাবিতে সরব হয়েছেন সংস্থার ডান-বাম দুই কর্মী সংগঠনের নেতারাই। আজ, বুধবার নির্দেশ পরিবর্তন-সহ বিভিন্ন দাবিতে নিগমের ম্যানেজিং ডাইরেক্টরকে স্মারকলিপি দেবেন সিটু নিয়ন্ত্রিত এনবিএসটিসি এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন।
নির্দেশ বাতিলের দাবিতে সংস্থার চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন নিগমের তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী ইউনিয়নের নেতারাও। এমন কী এমডির জারি করা ওই নির্দেশ নিয়ে সংস্থার পরিচালন সদস্যদের একাংশও প্রশ্ন তুলেছেন। নিগমের চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে কর্মীদের তরফে কেউ কিছু জানাননি। বিষয়টি নিয়ে এমডি-র সঙ্গে কথা বলব।” এনবিএসটিসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জয়দেব ঠাকুর অবশ্য বলে দিয়েছেন, “বিষয়টি সংস্থার পুরোপুরি আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এই নিয়ে প্রশ্ন করবেন না।” নিগম পরিচালন বোর্ডের সদস্য আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, “নিয়মমাফিক পাওনা ছুটি কর্মীরা নিতেই পারেন। পরের বোর্ড মিটিং-এ বিষয়টি তুলব।”
সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে নিগমের কর্মীদের জন্য ছুটি সংক্রান্ত নির্দেশ জারি করেছেন এমডি। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, ডিভিশন ও ডিপোস্তরের আধিকারিকরা এমডি-র অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলের বাইরে যেতে পারবেন না। নির্দেশ অমান্য করা হলে তা সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের বেআইনিভাবে অনুপস্থিতি হিসাবে ধরা হবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ডিপোস্তর ও অন্য বিভাগের সাধারণ কর্মীদের একসঙ্গে দুই দিনের বেশি ছুটি সংশ্লিষ্ট ডিপো ইনচার্জরা দিতে পারবেন না। দুই দিনের বেশি ছুটি দরকার হলে ডিভিশন্যাল ম্যানেজারের অনুমতি নিতে হবে। এমনকি সাধারণভাবে নেওয়া ছুটির সঙ্গে কর্মীরা তাঁদের প্রাপ্য বিশ্রাম দিনের ছুটি যুক্ত করতে পারবেন না।
কর্মী ইউনিয়নগুলির অভিযোগ ওই নির্দেশে সমস্যা তৈরি হয়েছে, ভিনজেলায় কর্মরত কর্মীদের অনেকেই বিশ্রাম দিনের ছুটির সঙ্গে ক্যাজুয়াল লিভ নিয়ে বাড়িতে আসেন। তাছাড়া কোচবিহার, রায়গঞ্জ, বহরমপুর ও শিলিগুড়ি ডিভিশনের আওতায় ১৯টি ডিপোর কর্মীদের মধ্যে যাঁরা বাইরে আছেন তাদের যাতায়াতের দুদিন বাদ দিয়ে একদিন বাড়িতে থাকতে হলে তিনদিনের ছুটি দরকার হয়। ডিপো ইনচার্জরা দুই দিনের বেশি ছুটি মঞ্জুর করতে না পারায় তাঁরা বিপাকে পড়ছেন। নির্দেশ মাফিক ডিভিশন্যাল ম্যানেজারদের নানা কাজে বাইরে থাকতে হয় বলে সবসময় তাঁদেরও পাওয়া যায় না। সেখানে তিনদিনের অনুমতি নিয়ে সমস্যা হবে। আবার বাইরের জেলায় কর্মরত আধিকারিকদের একাংশ ছুটির দিনে অফিস বন্ধ থাকলে বাড়িতে যেতে হলে কেন অনুমতি নিতে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সিটুর এনবিএসটিসি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক জগতজ্যোতি দত্ত জানান, টানা ছয়দিন কাজ করার পর কর্মীরা নিগমের নিয়ম মেনে একদিন বিশ্রাম পান। অনেক সময় পরিষেবার স্বার্থে তারা ওই বিশ্রাম দিনেও কাজ করতে বাধ্য হন। পরে ওই ছুটি যুক্ত করে ক্যাজুয়াল লিভ নিয়ে বাড়িতে যান। এমডির নির্দেশে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া তিনদিন ছুটির দরকার হলে ডিভিশন্যাল ম্যানেজারদের অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে ডিভিশন্যাল ম্যানেজারদের সবসময় অফিসে পাওয়া যায় না। ওই নির্দেশ পরিবর্তন নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামছি। নিগমের ড্রাইভার্স অ্যান্ড তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি আবদুর রহমান বলেন,“এমডির ওই নির্দেশে সাধারণ কর্মীদের হয়রানি বেড়েছে। আমরা ওই নির্দেশ বাতিলের জন্য সংস্থার চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হচ্ছি।” আর ইনটাক অনুমোদিত ওয়ার্কাস ইউনিয়নের কোচবিহার ডিভিশনের সম্পাদক সুজিত সরকার বলেন, “যাঁরা নানা অছিলায় ছুটি নেন তাদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা যেতেই পারে। কিন্তু ওই নির্দেশের জেরে প্রকৃত আবেদনকারীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।” |