হারের দিনেই ধাক্কা, চার্জশিট গৌতম দেবকে
বাম আমলের ২০ কোটি টাকার আবাসন কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত অভিযোগের মামলায় শেষমেশ প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা গৌতম দেব-সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করল সিআইডি। রাজ্যের বর্তমান সরকারের দাবি, গৌতমবাবু পূর্বতন সরকারে আবাসন দফতরের মন্ত্রী থাকাকালীন ওই দুর্নীতি হয়েছিল। বর্তমান সরকারেরই নির্দেশে সিআইডি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে।
এবং সাড়ে ছ’মাস তদন্ত চালিয়ে মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের ৪ নম্বর বিশেষ আদালতে প্রায় দু’হাজার পাতার চার্জশিট ও তথ্য-প্রমাণ পেশ করেছে রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাটি। তাতে প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার, জেনে-বুঝে ক্ষতিসাধন ইত্যাদি অভিযোগ দাখিলের পাশাপাশি দুর্নীতিদমন আইনেও মামলা রুজু হয়েছে। সিআইডি’র আইজি-১ জগমোহন এ দিন বলেন, “প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ হাতে আসার পরেই আমরা কোর্টে চার্জশিট জমা দিয়েছি।” গৌতমবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমার আইনজীবী চার্জশিটের প্রতিলিপি হাতে পাননি। পেলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই যা বলার বলব।” অভিযোগের সত্যতা কত দূর, তা জানতে চাওয়া হলে প্রাক্তন মন্ত্রীর জবাব, “আমি চুপ করে থাকব না। যা বলার, সময়ে বলব।”
সিআইডি-সূত্রের খবর: চার্জশিটে গৌতমবাবুর পাশাপাশি শিল্পপতি বিজন নাগ ও তাঁর ছেলে বিক্রমজিৎ নাগ, চন্দননগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা রাজ্য আবাসন পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অমিয় নন্দী, প্রাক্তন আবাসন-অধিকর্তা সুপ্রিয় গুহ, হিডকো-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রভাতরঞ্জন দাস, বেঙ্গল-আইএফবি হাউজিং ডেভেলপমেন্ট সংস্থার প্রাক্তন অধিকর্তা গৌতম রায়চৌধুরী, সল্টলেক এস্টেট ক্রেডিট প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থার ডিরেক্টর সৌমেন বল ও আরও কিছু প্রাক্তন আবাসন-কর্তার নাম রয়েছে। সরকারি কৌঁসুলি অনিন্দ্য রাউত এ দিন জানিয়েছেন, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৯ ডিসেম্বর। সে দিন চার্জশিটে নাম থাকা ব্যক্তিদের এজলাসে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
চলতি বছরের ২ এপ্রিল তালতলা থানায় রাজ্য আবাসন দফতরের তরফে নালিশ দায়ের করে বলা হয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা পুর-এলাকায় ফ্ল্যাট তৈরির জন্য যৌথ উদ্যোগের সংস্থাকে আবাসন পর্ষদ যে জমি দিয়েছিল, সেখানে ফ্ল্যাট তো ওঠেইনি, উল্টে সেই জমি তিন-তিন বার অবৈধ ভাবে হস্তান্তরিত হয়েছে। আর তার মাঝে দফতরের ২০ কোটি টাকা গলে গিয়েছে বলে এফআইআরে অভিযোগ করা হয়। এর ক’দিন বাদে মহাকরণের নির্দেশে ঘটনার তদন্তভার কলকাতা পুলিশের হাত থেকে যায় সিআইডি-র হাতে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এফআইআরে গৌতমবাবু-সহ ১৮ জনের নাম ছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ছেলে শুভব্রত (চন্দন) বসু ও তাঁর স্ত্রী রাখি বসু।
তবে এ দিন পেশ হওয়া চার্জশিটে বসু দম্পতির নাম নেই। আগের তালিকার আরও চার জনের নামও বাদ গিয়েছে। অন্য দিকে নতুন পাঁচ জনের নাম জুড়েছে। “তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। প্রয়োজনে অতিরিক্ত চার্জশিট দিয়ে আরও নাম অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।” বলেছেন এক গোয়েন্দা-কর্তা।
আবাসন কেলেঙ্কারি
কোন ধারায় মামলা
ভারতীয় দণ্ডবিধি
৪০৯ বিশ্বাসভঙ্গ করে নিজের স্বার্থে আত্মসাৎ
৪১৮ জেনে-বুঝে প্রতারণা করে ক্ষতিসাধন
৪২০ প্রতারণা
১২০বি অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র
৩৪ একই উদ্দেশ্য নিয়ে সম্মিলিত অপরাধ
  দুর্নীতিদমন আইন
১৩(১)(ডি) এবং ১৩(২) সম্পত্তি-মূল্য কমিয়ে সরকারের ক্ষতি করে লাভ
চার্জশিটে সিআইডি-র অভিযোগ: নিম্ন-মধ্য-উচ্চবিত্তদের জন্য যৌথ উদ্যোগের ফ্ল্যাট তৈরির লক্ষ্যে মহেশতলার পারুই ও জোতশিবরামপুর মৌজায় ৪৫.৬৯ একর জমি ‘বেঙ্গল আইএফবি হাউজিং ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি’-কে (যার অন্যতম কর্ণধার বিজন নাগ) লিজ দিয়েছিল আবাসন দফতর, বিনা টেন্ডারে। অভিযোগ, এতে সরকারের ১৭ কোটি টাকা রাজস্বহানি হয়েছে। চার্জশিট মোতাবেক, সংস্থাটি ওখানে ফ্ল্যাট না-বানিয়ে জমিটি ‘সল্টলেক এস্টেট ক্রেডিট প্রাইভেট লিমিটেড’-কে বেআইনি ভাবে হস্তান্তর করে। তারাও ফ্ল্যাট তৈরির ধার মাড়ায়নি। শেষমেশ জমিটি যায় ‘বেঙ্গল গ্রিনফিল্ড হাউসিং ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি’র হাতে, যার অন্যতম কর্ণধার চন্দন বসু।
সিআইডি’র অভিযোগ, গ্রিনফিল্ডও ওখানে ফ্ল্যাট বানায়নি। এবং এই যাবতীয় হস্তান্তর হয়েছে বিনা টেন্ডারে, বিধি-নিয়মের তোয়াক্কা না-করে। ফলে জমির হাতবদল বাবদ সরকারের যে ‘ট্রান্সফার ফি’ প্রাপ্য হয়, আবাসন দফতর তা পায়নি। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ফ্ল্যাট বানিয়ে দিতে না-পারার দরুণ গ্রিনফিল্ড সংস্থার ‘ক্ষতিপূরণ’ বাবদ সরকারকে যে টাকা দেওয়ার কথা ছিল, তা-ও তারা মেটায়নি। এ ভাবে পুরো প্রক্রিয়াটিতে সব মিলিয়ে আবাসন দফতরের ২০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে চার্জশিটে জানিয়েছে সিআইডি।
প্রসঙ্গত, আবাসন কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে সিআইডি গত জুনে প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভবানী ভবনে ডেকে পাঠিয়েছিল। গোয়েন্দা-সূত্রের দাবি: গৌতমবাবু তখন তদন্তকারীদের কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন যে, মহেশতলার জমিটিতে বড় প্রকল্প তৈরি সম্ভব ছিল না বলেই বিনা টেন্ডারে তা লিজ দেওয়া হয়। সিআইডি-সূত্রের খবর: গৌতমবাবু তখন এ-ও বলেছিলেন, জমি হস্তান্তর ইত্যাদি ব্যাপারগুলো তিনি নিজে দেখতেন না, দেখতেন তাঁর অফিসারেরা। এমনকী, আবাসন পর্ষদের যে বৈঠকে জমিটি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তিনি তাতে উপস্থিত ছিলেন না বলেও দাবি করেছিলেন তদানীন্তন আবাসনমন্ত্রী।
সিআইডি’র এক কর্তা জানান, তদন্তপর্বের প্রথমে তাঁরা অমিয় নন্দীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। পরে অন্য অভিযুক্তদের। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ওঁদের প্রায় সকলেই ঘটনার দায় এড়িয়ে গিয়েছেন। চার্জশিটে ৩৭ জন সাক্ষীর উল্লেখ রয়েছে। তাঁদের ২৩ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.